× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, শুক্রবার , ৬ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১০ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

জটিলতায় আটকে আছে ২ লক্ষাধিক ড্রাইভিং লাইসেন্স

শেষের পাতা

রুদ্র মিজান
৮ ডিসেম্বর ২০১৯, রবিবার

আটকে আছে দুই লক্ষাধিক ড্রাইভিং লাইসেন্স। ছাপা হচ্ছে না লাইসেন্সের কার্ড। পার্কিংয়ের পর্যাপ্ত সুবিধাও নেই। এরমধ্যেই প্রয়োগ করা হচ্ছে নতুন সড়ক আইন। চুক্তি জটিলতার কারণেই আটকে আছে লাইসেন্সগুলো যদিও বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি (বিআরটিএ)’র কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, লাইসেন্সের স্মার্টকার্ড ছাপা না হলেও সাময়িকভাবে কাগজে লাইসেন্স দেয়া হচ্ছে। বিষয়টি অবগত করা হয়েছে ট্রাফিক পুলিশকেও। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, চুক্তি জটিলতার কারণেই লাইসেন্স আটকে আছে। কাগজে লাইসেন্স দেয়ার সংখ্যা পর্যাপ্ত না।
ভুক্তভোগীরা জানিয়েছেন, আগে যেখানে সাধারণভাবেই  দুই থেকে আড়াই মাসে ড্রাইভিং লাইসেন্স পাওয়া যেতো এখন সেখানে পরীক্ষার সময়ই দেয়া হচ্ছে দুই মাস পরে।   

ড্রাইভিং লাইসেন্সের স্মার্ট কার্ড সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান টাইগার আইটি বাংলাদেশ লিমিটেডের সঙ্গে চুক্তি জটিলতার কারণে দীর্ঘ দুই মাস যাবত লাইসেন্স সংক্রান্ত এই সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। যে কারণে ঢাকাসহ সারাদেশে লাইসেন্স ছাপানো ও সরবরাহ ব্যবস্থা সঙ্কটে রয়েছে। বিআরটিএ’র মিরপুর কার্যালয়ে গিয়ে দেখা গেছে লাইসেন্স প্রার্থীদের দীর্ঘ লাইন। এ্যাপস ভিত্তিক রাইড শেয়ারিং বাইক চালানোর জন্যই অনেকে ড্রাইভিং লাইসেন্স সংগ্রহ করছেন। ড্রাইভিং লাইসেন্স না থাকার কারণে এ্যাপস ভিত্তিক প্রতিষ্ঠানগুলো নিবন্ধন না দেয়ায় তারা ড্রাইভিং লাইসেন্স সংগ্রহ করছেন। এছাড়াও নতুন সড়ক আইনের কারণেও অনেকে বিআরটিএ মুখো হয়েছেন লাইসেন্সের জন্য। ভুক্তভোগীদের মধ্যে রয়েছেন বিদেশগামীরাও।

সাইফুল ইসলাম নামে এক প্রবাসী জানান, ড্রাইভিং ভিসায় বিদেশে যাবেন তিনি। ড্রাইভিং শিখেছেন। লাইসেন্সের জন্য আবেদনও করেছেন। প্রায় দুই মাস হয়েছে। কিন্তু পরীক্ষার তারিখ আসেনি। ডিসেম্বরের শেষের দিকে তিনি পরীক্ষা দিবেন। একইভাবে আরও একজন লাইসেন্স প্রার্থী জানান, তিন মাস পরে পরীক্ষার তারিখ দেয়া হয়েছে তাকে। পরীক্ষা দেয়ার পর উত্তীর্ণ হলে নানা প্রক্রিয়া শেষ করতে লাগবে আরও প্রায় তিন সপ্তাহ। অর্থাৎ প্রায় চার মাস পরে জটুতে পারে ড্রাইভিং লাইসেন্স। বিআরটিএ সূত্রে জানা গেছে, স্মার্টকার্ডে ড্রাইভিং লাইসেন্স ছাপার সুযোগ না থাকায় পরীক্ষার সময় বাড়িয়ে দেয়া হচ্ছে।

সূত্রমতে, ২০১৬ সালের ২৩শে জুন সম্পাদিত দ্বিতীয় দফা চুক্তির আলোকে টাইগার আইটি ১৪ লাখেরও বেশি স্মার্ট কার্ড সরবরাহ করেছে। চুক্তি অনুসারে ১৫ লাখ কার্ড সরবরাহের কথা। তবে এখনও  জরুরি সার্ভিসের নামে কিছু কার্ড ছাপা হচ্ছে। এই কার্ডেও আওতায় রয়েছেন বিদেশগামী চালক, মিশনে বিদেশগামী সেনা ও পুলিশ সদস্য। এই কার্ডের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য না। সূত্রে জানা গেছে, বিআরটিএ থেকে পাঠানো তথ্যের ভিত্তিতে টাইগার আইটি ফিঙ্গার প্রিন্ট গ্রহণ এবং ছবি তোলে কার্ড ছাপিয়ে তা বিআরটিএ-কে সরবরাহ করতো। দেশের ৭২টি স্টেশন থেকে সংগৃহীত তথ্য ও ছবি দিয়ে টাইগার আইটি ড্রাইভিং লাইসেন্সের স্মার্ট কার্ড তৈরি করে। পরে কার্ডগুলো আবারো ৭২টি কেন্দ্রে পাঠানো হয়। এভাবে প্রতিদিন প্রায় পাঁচ হাজার ড্রাইভিং লাইসেন্স সরবরাহ করতো এই প্রতিষ্ঠান।

চুক্তি অনুসারে প্রায় ১৫ লাখ কার্ড দেয়া শেষ পর্যায়ে। যে কারণে জরুরি সেবা হিসেবে এতে গত দুই মাস যাবত দিনে কয়েক শ’ কার্ড সরবরাহ করছে এই প্রতিষ্ঠান। ২০১১ সালের নভেম্বর থেকে বিআরটিএ স্মার্ট কার্ডে ড্রাইভিং লাইসেন্স দেয়া শুরু করে। শুরু থেকেই এই কাজটি পায় টাইগার আইটি নামে ওই প্রতিষ্ঠান। চুক্তির আওতায় ২০১১ সাল থেকে পাঁচ বছরে ১১ লাখ ৫০ হাজার স্মার্ট ড্রাইভিং লাইসেন্স সরবরাহ করার কথা থাকলেও অতিরিক্ত এক লাখ ৭২ হাজার লাইসেন্স সরবরাহ করা হয়। দ্বিতীয় দফা চুক্তিতে ১৫ লাখ স্মার্ট ড্রাইভিং লাইসেন্স ছাপিয়ে সরবরাহ দেয়ার কথা।
বিআরটিএ’র পরিচালক (ইঞ্জিনিয়ারিং) মো. লোকমান হোসেন মোল্লা বলেন, স্মার্টকার্ড ড্রাইভিং লাইসেন্স দেয়া হচ্ছে না। তবে বিকল্প উপায়ে কাগজে গাড়ি চালানোর মতো লাইসেন্স দেয়া হচ্ছে। এই কাগজে যাতে কোনো সমস্যা না হয় এজন্য বিষয়টি ট্রাফিক পুলিশকে অবগত করা হয়েছে। তবে কবে থেকে স্মার্ট লাইসেন্স দেয়া সম্ভব হবে তা জানেননা এই কর্মকর্তা।

এদিকে, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)’র ট্রাফিক বিভাগ নতুন ‘সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮’ প্রয়োগ শুরু করেছে। জানা গেছে, নতুন আইনে মামলা প্রয়োগ করতে ডিএমপি ট্রাফিকের চার বিভাগে সহকারী কমিশনারদের নেতৃত্বে একটি টিম ইতিমধ্যে মাঠে নেমেছে। ১লা ডিসেম্বর থেকে নির্ধারিত ছাপানো ফর্মে মামলা দিচ্ছেন তারা। এই ফর্মে ঘটনার তারিখ, ঘটনাস্থলের ঠিকানা, অভিযুক্তের নাম, পরিচয়, ফোন নম্বর লেখা হচ্ছে। পাশাপাশি একজন স্বাক্ষীর নাম, পরিচয়ও লিপিবদ্ধ করা হচ্ছে। একই সাথে কী অপরাধে, কত জরিমানা করা হচ্ছে তা উল্লেখ করা হচ্ছে। ফর্মের নিচে অভিযুক্ত ও অভিযোগকারীর স্বাক্ষর নেয়া হচ্ছে। সংশ্লিষ্টরা জানান প্রাথমিকভাবে ডিএমপির ট্রাফিকের চারটি বিভাগ সীমিত পরিসরে এই কার্যক্রম চালানো হচ্ছে। শিগগিরই পুরোদমে নতুন ট্রাফিক আইন প্রয়োগ করা হবে। পজ মেশিন না থাকায় ছাপানো কাগজে হাতে লিখেই মামলা দিচ্ছেন ট্রাফিক সার্জেন্টরা। ট্রাফিক সার্জেন্টরা জানান, সাবধানতার সঙ্গে মামলা দেয়া হচ্ছে। মামলা দেয়ার আগে চালককে তার অপরাধ সম্পর্কে বুঝিয়ে বলা হচ্ছে। এমনকি অপরাধ সংঘটনের দৃশ্য ভিডিও ধারণ করা হচ্ছে বলেও জানান সংশ্লিষ্টরা।

মামলার শিকার মোটরসাইকেল চালক আল মেহেদি জানান, ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য প্রায় দুই মাস আগে আবেদন করেছেন। এখনও পরীক্ষার তারিখই আসেনি। বাধ্য হয়েই বাইক নিয়ে বের হয়ে মামলার শিকার হন তিনি। ভুক্তভোগীরা জানান, নতুন আইনে সর্বোচ্চ অর্থ দন্ডের কথা উল্লেখ থাকলেও সর্বনিম্নের পরিমান উল্লেখ নেই। পিকআপ চালক হরমুজ মিয়া ক্ষোভের সঙ্গে জানান, গাড়ি চালিয়ে ফোনে কথা বললে অর্থদণ্ড, ঠিক আছে। কিন্তু জরুরি কল এলো- গাড়ি থামিয়ে কথা বলব, সেই সুযোগও নাই। রাস্তায় গাড়ি থামালেও জরিমানা। আবার গাড়ি পার্কিং করার জায়গা রাস্তার আশপাশে বলতে গেলে নেই। এসব বিষয়ে নজর দেয়া উচিত। ডিএমপির ট্রাফিক বিভাগের প্রধান অতিরিক্ত কমিশনার মফিজ উদ্দিন আহম্মেদ জানান, নতুন আইন সম্পর্কে সচেতনতামূলক প্রচারণা চালিয়ে স্বল্প পরিসরে প্রয়োগ শুরু হয়েছে। পজ মেশিনগুলো প্রস্তুত হয়ে  গেলে পূর্ণাঙ্গভাবে মামলা দেয়ার কাজ শুরু হবে বলে জানান তিনি।
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর