× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, বৃহস্পতিবার , ১২ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৬ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

বিয়ের মঞ্চ থেকে পালিয়ে সোনার মঞ্চে

খেলা

স্পোর্টস রিপোর্টার, পোখারা (নেপাল) থেকে
৯ ডিসেম্বর ২০১৯, সোমবার

মাত্র ১১ বছর বয়সেই বাবা তাকে ইচ্ছের বিরুদ্ধে বিয়ে দিতে যাচ্ছিলেন। পাত্রপক্ষের পছন্দে বিয়ের মঞ্চও প্রস্তুত ছিল। কিন্তু শেষ মুহূর্তে বেঁকে বসা ইতি খাতুন বিয়ের মঞ্চ ছেড়ে তীর ধনুক হাতে নিয়েছেন। বিয়ের মঞ্চ থেকে পালানো সেই মেয়েটাই কাল পোখারায় রোমান সানাকে সঙ্গে নিয়ে আরচারি মিশ্র রিকার্ভে দেশকে সোনা এনে দিলেন। মেয়েদেও দলগত রিকার্ভেও সোনা জেতায় অবদান তার। এই ইভেন্টে ইতির সঙ্গে ছিলেন মেহনাজ আক্তার মনিরা ও বিউটি রায়। এই জুটি লঙ্কান আর্চারদের হারায় ৬-০ সেটে। আজ ট্রিপল ক্রাউন জেতার সুযোগ আছে ইতির সামনে।
ব্যক্তিগত রিকার্ভে স্বর্ণ জিতলেই অনন্য এক ইতিহাস গড়বেন ১৪ বছর বয়সী এই আরচার। জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের (এনএসসি) প্রতিভা অন্বেষণের আবিষ্কার ইতি। চুয়াডাঙ্গা স্টেডিয়ামে ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে আর্চারির প্রাথমিক বাছাইয়ে প্রথম হয়েছিলেন ইতি খাতুন। চুয়াডাঙ্গার ঝিনুক মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী এবারই প্রথম অংশ নিয়েছেন এসএ গেমসের মতো বড় আসরে। প্রথমবার বড় প্রতিযোগিতায় সুযোগ পেয়েই মিক্সস ডাবলসে স্বর্ণ জিতে ভীষণ খুশি ইতি। পরে মেহনাজ আক্তার মনিরা ও বিউটি রায়কে সঙ্গে নিয়ে মেয়েদের দলগত রিকার্ভেও সোনা জেতেন তিনি। আজ স্বর্ণ জিততে চান ব্যক্তিগত ইভেন্টেও। শনিবার মেয়েদের রিকার্ভ এককের সেমিফাইনালে ৬-০ সেট পয়েন্টে অলিম্পিকে কোটা পাওয়া আরচার ভুটানের কারমাকে হারান ইতি খাতুন। আজ ফাইনালে তার প্রতিপক্ষ ভুটানের সুনাম দেমা। ইতির বাবা ইবাদত আলী হোটেলের কর্মচারী। তিন মেয়েকে নিয়ে সংসার চালাতে রীতিমতো হিমশিম খেতে হয় তাকে। মেয়েদের স্কুলের খরচ জোগাতে পারেন না বেশির ভাগ সময়। মেয়েকে বিয়ে দিতে চেয়েছিলেন সে জন্যই। কিন্তু সিদ্ধান্তটা যে কত বড় ভুল ছিল, গতকাল তা আবার প্রমাণ করলেন ১৪ বছর বয়সী এই আরচার। স্বর্ণ জয়ের পর নিজের প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে ইতি বলেন, কোচরা আমাকে বলেছেন, কোনোদিকে তাকাবে না। তোমার কাজ তীর মারা, তুমি শুধু ভালো জায়গায় মেরে যাবে। আমি আমার কাজটা করেছি। তাতেই রোমান সানা ভাইয়ের সঙ্গে স্বর্ণ এসেছে। এখন আমি আমার ব্যক্তিগত ইভেন্টে সোনা জিতে প্রতিক্রিয়া জানাতে চাই। মেয়েদের রিকার্ভ এককের সেমিফাইনালে ইতির প্রতিপক্ষ ছিল এই আসরের অন্যতম সেরা নারী আরচার কারমা দেবী। ভুটানের হয়ে ওলান্ড আরচারি কোটা পেয়েছেন কারমা। এই সেই কারমাকে ৬-০ সেট পয়েন্ট হারিয়ে ইতি বলেন, আসলে আমি জানতামই না ও অলিম্পিকে কোটা পেয়েছে। আমি জেতার পর জেনেছি। আমি যখন খেলেছি তখন আমি শুধু আমার সেরাটা দেয়ার চেষ্টা করেছি। আমি ভালো করছিলাম  আর ও খারাপ মারছিলো তাই ৬-০ সেট পয়েন্টে জয় এসেছে।
ইতিকে একটা সময় তীর ধনুক হাতেই নিতে দিতেন না তারা বাবা ইবাদত আলী। পদক জয়ের পর সেই দুঃখের কথা শুনিয়ে ইতি বলেন, ‘বাবার পক্ষে সংসার চালিয়ে আমাদের পড়ালেখা চালানো কঠিন হয়ে যাচ্ছিল। তাই তিনি প্রায়ই বলতেন, মেয়ে হয়ে জন্মেছিস, কেন খেলবি? তোর খেলাধুলার দরকার নেই। বিয়ে-শাদি দিয়ে দেই, শ্বশুরবাড়ি গিয়ে সংসারে মন দে। কিন্তু আমি কখনই এসব কথা মাথায় নেইনি। তাইতো সাহস করে বিয়ের আসর ছেড়ে আরচারি ক্যাম্পে যোগ দিয়েছি।
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর