সরকারি চাকরিতে আবেদনের বয়সসীমা ৩৫ বাস্তবায়নের মাধ্যমে ৪১তম বিসিএসে আবেদনের সুযোগ প্রদানের দাবিতে সংবাদ সম্মেলন করেছেন চাকরিপ্রত্যাশীরা। গতকাল ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর-রুনী মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানান তারা। বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র পরিষদের ব্যানারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, বাংলাদেশের মানুষের গড় আয়ু বৃদ্ধি পেয়ে ৭২.৮ বছরে উন্নীত হয়েছে। ডাক্তারদের চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩২ করা হয়। তখন যুক্তি
ছিল তারা সাধারণের থেকে ১ বছর বেশি অর্থাৎ ৪ বছর অধ্যায়ন করতে হয় তাদের। কিন্তু এখন অনার্স ৪ বছর অধ্যায়ন করতে হলেও চাকরিতে সময়সীমা আনুপাতিক হারে বাড়ানো হয়নি। বিভিন্ন বোর্ড পরীক্ষার রেজাল্ট বের হবার মধ্যবর্তী সময়ে নষ্ট হয় প্রায় ২ বছর। প্রচলিত নিয়ম অনুসারে ২৩ বছর বয়সে শিক্ষা জীবন শেষ হওয়ার কথা থাকলেও তা শেষ হচ্ছে ২৭/২৮ বছর বয়সে।
সরকারি চাকরি থেকে অবসরের মেয়াদ ২ বছর বৃদ্ধি করা হলেও প্রবেশের বয়সসীমা বাড়ানো হয়নি। সরকারি চাকরির নিয়ম অনুসরণ করার কারণে বেসরকারি ক্ষেত্রেও চাকরির সুযোগ সংকুচিত হচ্ছে। বাংলাদেশের সংবিধানের ২৯(১) অনুচ্ছেদে উল্লেখ আছে, চাকরি লাভের ক্ষেত্রে প্রত্যেক নাগরিক সমতা লাভ করবে। সেখানে চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা প্রকার ভেদে নির্ধারণ বৈষম্য মূলক। উন্নত বিশ্বে জনগণকে জনশক্তিতে রুপান্তরের ক্ষেত্রে বয়সের কোন সময়সীমা রাখেনি। অনেক দেশে অবসরের আগের দিন পর্যন্ত চাকরিতে আবেদনের সুযোগ রাখা হয়েছে। বর্তমানে ১৬০টির ও বেশি দেশে চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৫ বছর বা তার উর্ধ্বে। ভারতের পশ্চিমবঙ্গে সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়স ৪০, বিভিন্ন প্রদেশে বয়সসীমা ৩৮ থেকে ৪০ বছর। শ্রীলঙ্কায় ৪৫, ইন্দোনেশিয়া ৩৫, ইতালীতে ৩৫ বছর কোন কোন ক্ষেত্রে ৩৮, ফ্রান্স ৪০ বছর, ফিলিপাইন, তুরস্ক ও সুইডেনে সর্বনিম্ন ১৮ এবং সর্বোচ্চ অবসরের আগের দিন পর্যন্ত।
তারা আরো বলেন, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০০৮ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত ৮ বছরের অনার্স ফাইনাল পরীক্ষার সেশন জট ২ বছর ২ মাস থেকে ২ বছর ১০ মাস পর্যন্ত। আর জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে মাস্টার্সে সেশনজট ২ বছর ৯ মাস থেকে ৩ বছর।
বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ৭ কলেজের ২০১৩-১৪ মাস্টার্স পরীক্ষা শেষ হয় ২০১৮ সালের জানুয়ারিতে। আর রেজাল্ট প্রকাশিত হয় ২০১৮ সালের আগস্ট থেকে-নভেম্বর পর্যন্ত। ২০১৪-১৫ সেশনের মাস্টার্সের রেজাল্ট এখনও প্রকাশিত হয়নি।
আন্দোলনের মুখপাত্র মো. ইমতিয়াজ হোসেন বলেন, স্বাধীনতার পর থেকে কোন বিষয়ে এতবার আলোচনা হয়নি সংসদে। যতোটা ‘৩৫’ নিয়ে হয়েছে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ৪ বার তদন্ত কমিটি গঠন করে। তিনি আরো বলেন, আমাদের হারিয়ে যাওয়া সেশনজটের বছরগুলো ফেরৎ চাই। কিংবা জনপ্রশাসন সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটি কর্তৃক আবেদনের বয়সসীমা ৩৫ বছরে সুপারিশের দ্রুত বাস্তবায়নের মাধ্যমে ৪১ তম বিসিএস এ আবেদনের সুযোগ চাই। সংবাদ সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন, অরুনিমা দে, ইমতিয়াজ হোসেন, সঞ্জয় দাস, এম এ আলী, বিজিত সিকদার প্রমুখ।