মহান মুক্তিযুদ্ধে সংঘটিত হত্যা, গণহত্যাসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় রাজশাহীর বোয়ালিয়ার মো. আবদুস সাত্তার ওরফে টিপু সুলতানের ফাঁসির আদেশ দিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। গতকাল ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. শাহিনুর ইসলামের নেতৃত্বে তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল এই রায় ঘোষণা করেন। ট্রাইব্যুনালের অপর সদস্যরা হলেন, বিচারপতি আমির হোসেন ও বিচারপতি আবু আহমেদ জমাদার। আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন প্রসিকিউটর মো. মোখলেসুর রহমান বাদল ও আইনজীবী জাহিদ ইমাম। অপরদিকে আসামিপক্ষে ছিলেন আইনজীবী গাজী এমএইচ তামিম। রায়ের প্রতিক্রিয়ায় রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী মোখলেসুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, রায়ে তারা সন্তুষ্ট। আসামির আইনজীবী গাজী এম এইচ তামিম সাংবাদিকদের বলেন, এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করবেন তাঁর মক্কেল। ১৭৭ পৃষ্ঠার রায়ে আদালত বলেন, আসামির বিরুদ্ধে আনা প্রসিকিউশন দুইটি অভিযোগই সন্দেহাতীতভাব প্রমানিত হয়েছে।
তাই দুটি অভিযোগই আসামিকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়েছে। সাত্তারের বিরুদ্ধে অপহরণ, আটক, নির্যাতন, লুটতরাজ, হত্যাসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের দুটি অভিযোগ আমলে নিয়ে গত বছরের ৮ই আগস্ট অভিযোগ গঠন করেন ট্রাইব্যুনাল। তদন্ত কর্মকর্তাসহ মোট ১৪ জন এই মামলায় সাক্ষ্য দেন। ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা জানায়, মুক্তিযুদ্ধের সময় আসামি সাত্তার জামায়াতে ইসলামীর ছাত্র সংগঠন ‘ইসলামী ছাত্র সংঘের রাজনীতি করতেন। পরবর্তী সময়ে তিনি ইসলামী ছাত্রশিবিরের রাজনীতি করেন।
এর আগে ১৭ই অক্টোবর এ মামলায় রাষ্ট্র ও আসামি উভয়পক্ষে যুক্তি-তর্ক শুনানি শেষে সিএভি (রায়ের জন্য অপেক্ষমাণ) রাখেন আদালত। পরে রায় ঘোষণার জন্য গতকাল দিন ঠিক করেন ট্রাইব্যুনাল। গত বছরের ২৭শে মার্চ এ আসামির বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন চূড়ান্ত করা হয়। এরপর আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করা হয়। পরে একই বছরের ৮ই আগস্ট তার বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়। অভিযোগ চূড়ান্তের পর তদন্ত সংস্থার সমন্বয়ক আবদুল হান্নান খান বলেছিলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে রাজশাহীর বোয়ালিয়ায় দশজনকে হত্যা, দু’জনকে দীর্ঘদিন আটকে রেখে নির্যাতন, ১২ থেকে ১৩টি বাড়ির মালামাল লুট করে আগুন দেয়ার অপরাধ ওঠে এসেছে তদন্তে। এসব অপরাধে এ আসামির বিরুদ্ধে দু’টি অভিযোগ আনা হয়েছে তদন্ত প্রতিবেদনে। ২০১৭ সালের ১লা জানুয়ারি বিস্ফোরক আইনের মামলায় মতিহার থানা পুলিশ টিপু সুলতানকে গ্রেপ্তার করে। পরবর্তীতে মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলায় তাকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। এরপর শুরু হয় তার বিচার।