মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা বা সিইও নিয়োগে আইন মানছে না বীমা কোম্পানিগুলো। নবায়ন-অপসারণেও বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের (আইডিআরএ) বিধিমালা লঙ্ঘিত হচ্ছে। বীমা খাতে মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তার নিয়োগ, নবায়ন ও অপসারণের বিষয়ে অনুমোদন নিতে হয় আইডিআরএ’র কাছ থেকে। ব্যাংক খাতে বাংলাদেশ ব্যাংক যেমন ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের (এমডি) বিষয়ে একই ধরনের অনুমোদন দিয়ে থাকে। বীমা কোম্পানিগুলোর পরিচালনা পর্ষদ এ ব্যাপারে যথাযথ দায়িত্ব পালন করছে না বলে আইডিআরএ’র পর্যবেক্ষণে উঠে এসেছে। এতে বীমা আইন ও প্রবিধানমালা প্রতিপালনের তাগিদ দেয়া হয়।
নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি বলেছে, মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তাদের নিয়োগের সিদ্ধান্ত নেয়ার পরপরই তাদের কাজ করার সুযোগ দেয় বীমা কোম্পানিগুলোর পর্ষদ। বেতন-ভাতাও দিয়ে যাচ্ছে।
আইডিআরএ’র অনুমোদন ছাড়া কোনো ব্যক্তির সিইও পদে যোগদান করা বীমা আইন ২০১০-এর ৮০ ধারা এবং বীমা কোম্পানির সিইও নিয়োগ ও অপসারণ প্রবিধানমালা ২০১২-এর পরিপন্থী। বলা হয়েছে, আইডিআরএ’র অনুমোদন ছাড়া কেউ সিইও হিসেবে কাজ করতে পারবেন না। বেতন-ভাতাও নিতে পারবেন না। তবে কোনো কোম্পানিতে সিইও’র পদ শূন্য থাকলে ওই পদের অব্যবহিত নিম্ন পদের কোনো কর্মকর্তা ভারপ্রাপ্ত সিইও হিসেবে কোম্পানিতে ৩ মাস পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করতে পারবেন।
জানা গেছে, দেশে বেশকিছু বীমা কোম্পানি চলছে মুখ্য নির্বাহী ছাড়াই। অনেক কোম্পানি রয়েছে যারা বীমা আইন উপেক্ষা করে ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা দিয়ে বছরের পর বছর পার করে দিচ্ছে। এমনও কোম্পানি রয়েছে ব্যবসা অনুমোদনের পর থেকেই চলছে ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা দিয়ে। ফলে বীমা কোম্পোনির সিইও নিয়োগ ও আর্থিক অনিয়মের কারণে এ খাতের অবস্থা দিন দিন নিম্ন দিকে ধাবিত হচ্ছে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা ছাড়াই ব্যবসা পরিচালনা করে আসছে দেশের বেশ কয়েকটি লাইফ ও নন-লাইফ বীমা কোম্পানি। এ অবস্থা বিরাজ করছে বছরের পর বছর ধরে। এসব কোম্পানিগুলোর মধ্যে প্রগ্রেসিভ লাইফ ইন্স্যুরেন্স অন্যতম। সম্প্রতি গ্রাহকরা প্রতিষ্ঠানটির সিইও এবং চেয়ারম্যানের পদত্যাগ দাবি করছেন। তাদের দাবি, প্রগ্রেসিভ লাইফ ইন্স্যুরেন্সের অর্থনৈতিক কোন্দলের কারণে প্রতিষ্ঠানটির সুনাম এবং আর্থিক সূচক দিন দিন নিম্নগতির দিকে ধাবিত হচ্ছে। সম্প্রতি নিয়ন্ত্রক সংস্থা আইডিআরএ চেয়ারম্যানের কাছে চিঠি দিয়ে প্রতিষ্ঠানটির সিইও এবং চেয়ারম্যানের পদত্যাগ দাবি করেছে।
চিঠিতে বলা হয়, প্রতিষ্ঠান দীর্ঘ ৭ বছর ধরে কোন এজিএম না হওয়ায় আমরা পলিসি হোল্ডাররা কোন ধরনের আর্থিক সুবিধা পাচ্ছি না। তাছাড়া প্রতিষ্ঠান ব্যবস্থাপনার বিভিন্ন অনিয়ম অতিরিক্ত প্রশাসনিক বিভিন্ন বিষয়ে কোনো তদারকি নাই। আপনি সমস্ত বীমাশিল্পের অভিভাবক। আপনার দপ্তর থেকে কেন তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে না।
বীমা কোম্পানির মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিআইএ) সভাপতি শেখ কবির হোসেন বলেন, আইডিআরএ’র প্রজ্ঞাপনটি ঠিকই আছে। আইডিআরএ’র অনুমোদন ছাড়াই কিছু কোম্পানি সিইও নিয়োগ করেছে এবং যথাসময়ে সেই অনুমোদন করিয়ে নেয়নি। তবে অনুমোদনের জন্য আইডিআরএ যেন দ্রুত সিদ্ধান্ত নেয়।
আইডিআরএ জমা দেয়া কোম্পানির আর্থিক প্রতিবেদনে দেখা গেছ, কষ্টে উপার্জিত পলিসিহোল্ডার ও শেয়ারহোল্ডারদের ৮ কোটি টাকার বেশি অবৈধ ব্যবস্থাপনায় ব্যয় করেছে প্রগ্রেসিভ ইন্স্যুরেন্স। অতিরিক্ত কমিশন দিয়ে, বাড়ি-গাড়ি, খাতা-পত্র, চেয়ার-টেবিল এবং বাড়ি ভাড়াসহ বিভিন্নভাবে খরচ দেখিয়ে এই টাকা তুলে আত্মসাৎ করে বলে আইডিআরএ মনে করছে।
বিশেজ্ঞরা মনে করেন, মুখ্য নির্বাহী কোম্পানির মূল চালিকাশক্তি। সর্বোচ্চ এ পদ শূন্য রাখা আইনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। এক্ষেত্রে আইনের যে বিধান রয়েছে তা পরিপালন না করাও আইনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।
আইডিআরএ’র একজন সদস্য বলেন, বীমা কোম্পানির অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনাসহ অনান্য অনিয়ম খুঁজে বের করতে বিশেষ অডিটের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। রিপোর্টগুলো আসলে পদক্ষেপ নেয়া হবে।
আইডিআরএ সূত্র জানায়, জীবন বীমা ও সাধারণ বীমা কোম্পানি মিলিয়ে দেশে ৭৭টি বীমা কোম্পানি রয়েছে। এর মধ্যে অনেকগুলো কোম্পানি চলছে ভারপ্রাপ্ত সিইও দিয়ে।