× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, বুধবার , ১১ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৫ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

রপ্তানি কমছে বাণিজ্য ঘাটতি বাড়ছে

এক্সক্লুসিভ

অর্থনৈতিক রিপোর্টার
১৪ ডিসেম্বর ২০১৯, শনিবার

রপ্তানি আয়ের নিম্নগতির প্রভাবে বৈদেশিক বাণিজ্যে ঘাটতিতে পড়েছে বাংলাদেশ। চলতি ২০১৯-২০ অর্থবছরের প্রথম ৪ মাসে বাণিজ্যে ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ৫৬২ কোটি ডলার, যা বাংলাদেশি টাকায় ৪৭ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের লেনদেনের ভারসাম্যের ওপর প্রকাশিত পরিসংখ্যানে এসব তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। রপ্তানি আয়ে বড় ধাক্কার কারণে এই ঘাটতি বাড়ছে বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা। তারা বলেন, বিশ্ব বাজারে পণ্যের চাহিদা কম ও সঠিক মূল্য পাচ্ছে না বাংলাদেশ। ফলে লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী রপ্তানি হচ্ছে না। অন্যদিকে পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ কাজ চলছে। এসব বড় বড় প্রকল্পের প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম আমদানি করতে হচ্ছে।
এতে করে আমদানি ব্যয় যে হারে বেড়েছে সেই তুলনায় রপ্তানি হচ্ছে না। এ কারণে বাণিজ্য ঘাটতি বাড়ছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদন বলছে, ২০১৯-২০ অর্থবছরের প্রথম ৪ মাসে ইপিজেডসহ রপ্তানি খাতে বাংলাদেশ আয় করেছে ১ হাজার ২৫১ কোটি ৭০ লাখ ডলার বা ১২.৫২ বিলিয়ন। এর বিপরীতে আমদানি বাবদ ব্যয় করেছে ১ হাজার ৮১৩ কোটি ৭০ লাখ ডলার বা ১৮.১৩ বিলিয়ন। সেই হিসেবে অক্টোবর শেষে দেশে বাণিজ্য ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ৫৬২ কোটি ডলার বা ৫.৬২ বিলিয়ন, যা বাংলাদেশি টাকায় (বিনিময় হার ৮৫ টাকা) দাঁড়ায় প্রায় ৪৭ হাজার ৭৭ কোটি টাকা। ঘাটতির এ অঙ্ক ২০১৮-১৯ অর্থবছরের একই সময় ছিল ৫৩২ কোটি ডলার। অর্থাৎ গত অর্থবছরের একই সময়ে তুলনায় এবার ঘাটতি বেড়েছে ২৯ কোটি ৭০ লাখ টাকা। তথ্যে দেখা যায়, এই ৪ মাসে আমদানি ব্যয় কমেছে ৩.১৭ শতাংশ। আর রপ্তানি আয় কমেছে ৬.৬৫ শতাংশ। গত ২০১৮-১৯ অর্থবছরের পুরো সময়ে বাণিজ্য ঘাটতির পরিমাণ ছিল ১ হাজার ৫৪৯ কোটি ৪০ লাখ (১৫.৪৯ বিলিয়ন) ডলার। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে এই ঘাটতি ছিল আরো বেশি ১৮.১৮ বিলিয়ন ডলার।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য পর্যালোচনায় দেখা গেছে, গত বছরগুলোতে আমদানি খাতে ব্যয় বাড়ার কারণে রপ্তানি আয় বাড়লেও বাণিজ্য ঘাটতি বেড়েছে বাংলাদেশের। কিন্তু এবার আমদানি ব্যয় কমার পরও রপ্তানি আয় কমায় বাণিজ্য ঘাটতি বাড়ছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, চলতি অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে বহির্বিশ্বের সঙ্গে বাংলাদেশের চলতি হিসাবে উদ্বৃত্ত থাকলেও সেপ্টেম্বর থেকে তা ঋণাত্মক হয়েছে। প্রথম ৪ মাস চলতি হিসাবে ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ১৩০ কোটি ৪০ লাখ ডলার, যা আগের বছরের একই সময়ে ছিল ২০৬ কোটি ৬০ লাখ ডলার। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, চলতি হিসাবে উদ্বৃত্ত থাকার অর্থ হলো নিয়মিত লেনদেনে দেশকে কোনো ঋণ করতে হচ্ছে না। আর ঘাটতি থাকলে সরকারকে ঋণ নিয়ে তা পূরণ করতে হয়। সেই হিসাবে উন্নয়নশীল দেশের চলতি হিসাবে উদ্বৃত্ত থাকা ভালো।

এদিকে আলোচ্য সময়ে সেবা খাতের বাণিজ্য ঘাটতি কিছুটা কমেছে। সেবাখাতে বেতন-ভাতা বাবদ বিদেশিদের পরিশোধ করা হয়েছে ৩২৮ কোটি ২০ লাখ ডলার। আর বাংলাদেশ এ খাতে আয় করেছে ২১৩ কোটি ১০ লাখ। এ হিসাবে সেবায় বাণিজ্যে দেশে ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ১১৫ কোটি ১০ লাখ ডলার। যা গত ২০১৮-১৯ অর্থবছরের একই সময়ে ছিল (ঘাটতি) ১২৮ কোটি ৭০ লাখ ডলার।

প্রথম ৪ মাসে প্রবাসীদের আয় রেমিট্যান্স এসেছে ৬১৫ কোটি ৯০ লাখ ডলার, যা আগের বছর একই সময়ে ছিল ৫১০ কোটি ৮০ লাখ ডলার। সেই হিসেবে রেমিট্যান্সে ২০.৫৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে।
এদিকে প্রতিবেদনের তথ্যানুযায়ী, পুঁজিবাজারে বিদেশি বিনিয়োগ প্রবাহের গতি গতবারের মতোই হতাশাজনক। ২০১৯-২০ অর্থবছরের জুলাই-অক্টোবর সময়ে বাংলাদেশের পুঁজিবাজারে মাত্র ৩ কোটি ২০ লাখ ডলারের নিট এফডিআই এসেছে। গত বছরের একই সময়ে এসেছিল আরো কম; ২ কোটি ৭০ লাখ ডলার। জুলাই-অক্টোবর সময়ে মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি ঋণ বাবদ বাংলাদেশে এসেছে ১৩৩ কোটি ৩০ লাখ ডলার। গত বছরের এই চার মাসে এসেছিল ১৩৬ কোটি ৪০ লাখ ডলার। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী, ২০১৯-২০ অর্থবছরে প্রথম ৫ মাসে (জুলাই-নভেম্বর) সব ধরনের পণ্য রপ্তানিতে বৈদেশিক মুদ্রার লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয় ১ হাজার ৮০৫ কোটি ডলার। তবে উল্লেখিত সময়ে এ খাতে আয় হয়েছে ১ হাজার ৫৭৭ কোটি ৭০ লাখ ডলার। যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১২.৫৯ শতাংশ কম। একই সঙ্গে গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় রপ্তানিতে এ বছর প্রবৃদ্ধি অর্জিত হার ৭.৫৯ শতাংশ কম।
জুলাই-অক্টোবর সময়ে বাংলাদেশের বৈদেশিক লেনদেনের চলতি হিসাবের ভারসাম্যে ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৩০ কোটি ৪০ লাখ ডলার। গত বছরের একই সময়ে ঘাটতির পরিমাণ ছিল ২০৬ কোটি ৬০ লাখ ডলার। অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) এই ঘাটতি ছিল ৬৭ কোটি ৮০ লাখ ডলার। অথচ অগাস্ট মাস শেষেও অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ এই সূচক ২৬ কোটি ৮০ লাখ ডলার উদ্বৃত্ত ছিল।

পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর বলেন, এবারও মনে হচ্ছে বড় ঘাটতিতে পড়তে যাচ্ছে বাংলাদেশ। কেননা, সহসা রপ্তানি আয় ভালো হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই। উদ্বেগের বিষয় হচ্ছে, গত অর্থবছরে কারেন্ট অ্যাকাউন্ট ব্যালান্সে ৫ বিলিয়ন ডলারের বেশি ঘাটতি থাকলেও সামগ্রিক লেনদেনের ভারসাম্যে উদ্বৃত্ত ছিল। কিন্তু এবার ঘাটতি নিয়েই বছর শেষ করতে হবে।
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর