× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, বৃহস্পতিবার , ১২ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৬ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

রফিকুল হকের মুখে দক্ষিণ সুরমা স্বাধীন হওয়ার গল্প

বাংলারজমিন

স্টাফ রিপোর্টার, সিলেট থেকে
১৪ ডিসেম্বর ২০১৯, শনিবার

সুরমা নদীর দক্ষিণ তীর ঘেঁষে সিলেটের দক্ষিণ সুরমা জনপদের অবস্থান। শহরের কাছের জনপদ হওয়ায় ১৯৭১ সালের তৎকালীন সিলেটের বিভিন্ন জেলা ও থানার গুরুত্বপূর্ণ এলাকা ও সদরের অনেক ইউনিয়ন পরিষদের অবস্থান ছিল এখানে। সড়ক ও রেলপথে মূল শহরে প্রবেশ করতে হয় দক্ষিণ সুরমা দিয়ে। ফলে অবস্থানগত কারণে এ জনপদের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় এই জনপদের মানুষ গৌরবময় ভূমিকা রেখেছেন। একাত্তর এর ডিসেম্বর মাস। আজ ১৩ ডিসেম্বর, আজকের এই দিনে দক্ষিণ সুরমার সম্মুখ যুদ্ধ ও পাকহানাদার মুক্ত হয় কদমতলীসহ গোটা দক্ষিণ সুরমা। সারা দেশের মতো সিলেটের মুক্তিযোদ্ধারাও সম্মুখ যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছেন।
সেই সময় দক্ষিণ সুরমার কদমতলীস্থ পুরাতন বাস স্ট্যান্ড এলাকার বর্তমান মুক্তিযোদ্ধা চত্বরের বিপরীতে ছিল পাক হানাদার বাহিনীর সেনাদের ক্যাম্প। মেজর সরফরাজ, মেজর বশারত, হাবিলদার মোস্তাকের  নেতৃত্বে ২০০-২৫০ জন হানাদার বাহিনী সেখানে অবস্থান করত। তাদের সঙ্গে যোগ হয় ১৫-২০ জন রাজাকার। যাদের সকলের বসত ছিল দক্ষিণ সুরমা এলাকায়। বর্তমান মুক্তিযোদ্ধা চত্বরে একদিকে সিলেট-ফেঞ্চুগঞ্জ সড়ক, অপরদিকে সিলেট-জকিগঞ্জ ও সুতারকান্দি সড়ক। এ দু’টি সড়কের মধ্যবর্তী স্থানে ছিল বিরাট বটগাছ। বটগাছের নিচেই ছিল হানাদার বাহিনীর চেকপোস্ট। চেকপোস্টে নিয়মিত বাস যাত্রীদের নামিয়ে হয়রানি করা হতো। দখলকার বাহিনীর লোকেরা যাত্রীদের অনেককে ধরে নিয়ে যেত সুরমা নদীর তীরে। তারপর গুলি করে হত্যা করে লাশ ভাসিয়ে দিতো সুরমার জলে। কেউ তাদের না চেনায় এসব হতভাগাদের নাম শহীদদের তালিকায়ও ঠাঁই পায়নি। সিলেটের কদমতলী বাসস্ট্যান্ড মসজিদের অজুখানার উত্তরদিকে গর্তে গুলি করে প্রায়ই নিরপরাদ মানুষদের হত্যা করত। প্রায় প্রতিদিনই তারা বিভিন্ন এলাকা থেকে চোখ বাঁধা অবস্থায় ভ্যানে করে লোকজনকে ধরে নিয়ে আসত ক্যাম্পে। তারপরে এসব বন্দীদের নিয়ে শিববাড়ী লালমাটি এলাকার রেললাইনের পশ্চিম দিকে গুলি করে হত্যা করে মাটি চাপা দিত। এলাকাটি বধ্যভূমিতে পরিণত হয়। বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কেন্দ্রীয় কমান্ডের সহ সাংগঠনিক সম্পাদক মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল হক জানান দক্ষিন সুরমা স্বাধীন হওয়ার গল্প। বলেন- ৭১’ এর ৮ ও ৯ই ডিসেম্বর ডুবরি হাওর বর্তমান উপশহর, হাদারপাড়া, তেররতন এলাকায় হেলিকপ্টার যোগে মুক্তিবাহিনী ও মিত্রবাহিনী অবস্থান নেয় এবং আমি আমার এলাকার আলতু মিয়া পীরকে নিয়ে আমার সঙ্গে ট্রেনিংপ্রাপ্ত ভারতের দেরাদুনের মহল্লাল সম ও সদর উদ্দীন চৌধুরী, মকসুদ ইবনে আজিজ লামা, ছানাওর আলী, আব্দুশ শহিদ বাবুল, বাবুদন মিয়া, সুলেমান এদের সাথে হযরত বুরহান উদ্দিন (রহ.) মাজারে সাক্ষাৎ করি। পরবর্তীতে পাক হানাদার বাহিনীর সাথে তুমুল যুদ্ধ হয়। আমরা যত্রভঙ্গ হয়ে যাই এবং আমি আবার দক্ষিণ সুরমায় হামিদ মিয়ার বাড়িতে অবস্থান করি। এখানে আমার সঙ্গে সংযুক্ত হয় আমার গ্রামের চাচাত ভাই ম.আ. মুক্তাদির, আব্দুল মতিন, আফরাইম আলী, মনির উদ্দিন, ছইল মিয়া, আনোয়ার হোসেন গামা, জলাল উদ্দিন ও শাসস উদ্দিন, বেলাওয়াত হোসেন খাঁন আরো ২/৩ জনের নাম মনে পড়ছে না। ওই দিনই পরিকল্পনা হয় রেলস্টেশনে অবস্থানরত মিত্র বাহিনীর সাথে যোগাযোগ করে কদমতলী বাসস্ট্যান্ডে (পুরাতন) আর্মি ক্যাম্পে আক্রমণ করা দরকার। সেই অনুযায়ী মিত্র বাহিনীর সাথে যোগাযোগ করে আক্রমণ করার পরিকল্পনা করি। ১৩ই ডিসেম্বর আমাদের অবস্থান মরহুম হামিদ মিয়ার বাড়িতেই। ১২ই ডিসেম্বর সকাল আনুমানিক ১১টার দিকে খবর পাই ৫ জন পাকিস্তানি সেনা আলমপুর শিল্পনগরীর দিক হতে হেঁটে কদমতলী ক্যাম্পের দিকে আসছে। তাৎক্ষণিক আমরা বর্তমান  পল্লী বিদ্যুৎ অফিসের নিকট ডিফেন্স গ্রহণ করি এবং তারা আসার পরপরই গুলিবর্ষণ করলে ৩ জন হাওর দিয়ে দৌড়াতে থাকে এবং নদীর পাড়ে চলে যায়। দুজন কদমতলীস্থ খলকু মিয়ার বাড়িতে অবস্থান নেয়। পরবর্তীতে সুকৌশলে তাদেরকে আত্মসমর্পণ করাই। তাদের ব্যবহৃত চায়নিজ রাইফেল আয়ত্তে আনি এবং তাদের দুইজনকে মরহুম হামিদ মিয়ার বাড়িতে ধান রাখার গুদামে বন্দি করে রাখি।
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর