সিরাজগঞ্জের তাড়াশে বোরো মৌসুম শুরু হলেও দীর্ঘদিন ধরে আবেদন করে রাখা ৪০৮ জন কৃষক উপজেলা সেচ কমিটির বৈদ্যুতিক সেচযন্ত্রের লাইসেন্স না পাওয়ায় দিশাহারা হয়ে পড়েছেন। এদিকে বৈদ্যুতিক সেচযন্ত্রের লাইসেন্স দেয়ার নামে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন (বিএডিসি) তাড়াশ অফিসের উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো. ইসরাফিল হোসেনের বিরুদ্ধে লাইসেন্স দেয়ার নাম করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ উঠেছে। অপর দিকে তাড়াশ উপজেলা সেচ কমিটির সভাপতি তাড়াশ ইউএনও মো. ওবায়দুল্লাহ বলেন, মূলত বৈদ্যুতিক সেচযন্ত্রের লাইসেন্স দেয়ার নামে টাকা হাতিয়ে নেয়ার ঘটনায় তদন্ত কার্যক্রম চলমান থাকায় লাইসেন্স দেয়ার বিষয়টি আপাতত স্থগিত রয়েছে। জানা গেছে, উপজেলার ৮টি ইউনিয়নের ৩৫০ জন কৃষক বৈদ্যুতিক সেচযন্ত্রের লাইসেন্স পাওয়ার জন্য আবেদন করেন। পাশাপাশি আরো ৫৮ জন পূর্বে প্রত্যয়নপত্র পাওয়া কৃষক আবারো বর্তমান পরিপত্র মোতাবেক লাইসেন্স পাওয়ার জন্য আবেদন করায় আবেদনকারী কৃষকের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে মোট ৪০৮ জন। স্থানীয় একাধিক কৃষকেরা জানান, ডিজেল চালিত সেচযন্ত্র দিয়ে বোরো আবাদ করায় কৃষকের খরচ বেশি হয়। অথচ বৈদ্যুতিক সেচযন্ত্রের মাধ্যমে আবাদে খরচ কম হওয়ায় চলনবিল অধ্যুষিত তাড়াশ উপজেলার কৃষকেরা বৈদ্যুতিক সেচযন্ত্রের জন্য আবেদন করে থাকেন। কারণ একটি বৈদ্যুতিক সেচযন্ত্র পাওয়া মানে একজন কৃষকের সারা জীবনের জন্য সাশ্রয়ী মূল্যে সরকারি সেচ সুবিধা পাওয়া।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, মূলত বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন (বিএডিসি) তাড়াশ অফিস সেচ কমিটির নির্দেশক্রমে কৃষককে বৈদ্যুতিক সেচযন্ত্র দেয়ার লাইসেন্স পাবার সম্ভাব্যতা যাচাই-বাছাই করে থাকেন। আর তাদের মতামতের ভিত্তিতেই ১৬ সদস্যবিশিষ্ট উপজেলা সেচ কমিটি বৈঠক করে সদস্যদের মতামতের ভিত্তিতে কৃষককে বৈদ্যুতিক সেচযন্ত্রের জন্য লাইসেন্স দিয়ে থাকেন। আর সেচযন্ত্রের জন্য বিএডিসির তাড়াশ অফিস সম্ভাব্যতা যাচায়ের নামে লাখ লাখ টাকা আবেদনকারী কৃষকের নিকট থেকে হাতিয়ে নেয়ার ফাঁদ পেতে বসে আছেন। অভিযোগ উঠেছে, বিএডিসি তাড়াশ অফিসের উপ-সহকারী প্রকৌশলী ইসরাফিল হোসেন বৈদুত্যিক সেচযন্ত্রের লাইসেন্স দেয়ার নামে চৌড়া গ্রামের কৃষক তাজুল ইসলাম, দেওড়া গ্রামের হাবিবুর রহমান, মাঝ দক্ষিণা গ্রামের সোহেল রানা, জুয়েল হাসান, বাঁশবাড়িয়া গ্রামের আব্দুল আজিজসহ অনেক কৃষকের কাছ থেকে ৫-৩০ হাজার টাকা করে হাতিয়ে নিয়েছেন। এ প্রসঙ্গে ওই কর্মকর্তা টাকা নেয়ার বিষয়টি অস্বীকার করেছেন। এদিকে চৌড়া গ্রামের কৃষক তাজুল ইসলাম অভিযোগ করে বলেন, আমি ওই কর্মকর্তাকে ৫ হাজার টাকা দিয়েছি। আবারো লাইসেন্সের কথা বলে টাকার জন্য মোবাইলে তিনি তাগাদা দিচ্ছেন। এদিকে প্রায় ৬ মাস পূর্বে বৈদ্যুতিক সেচযন্ত্রের লাইসেন্সের জন্য আবেদন করা কৃষকরা দীর্ঘ সময়েও লাইসেন্স না পাওয়ায় দিশাহারা হয়ে পড়েছেন।
কৃষক আব্দুল আজিজ জানান, ইতিমধ্যেই বোরো বীজতলা তৈরি হয়ে গেছে। অথচ বৈদ্যুতিক সেচযন্ত্রের লাইসেন্স পাওয়ার বিষয়টি সুরাহা না হওয়ায় তারা সংশ্িলষ্ট অফিসগুলোতে ঘুরে ঘুরে ক্লান্ত। তিনি আরো জানান, সেচ কমিটির লাইসেন্স পাওয়ার পর বিদ্যুৎ অফিসেও তাদেরকেও ধর্ণা দিতে হবে। এতে তাড়াশ উপজেলার বৈদ্যুতিক সেচযন্ত্রের আবেদন করা কৃষকদের হয়রানি চরমে উঠেছে।
এ ব্যাপারে উপজেলা সেচ কমিটির সভাপতি ও তাড়াশ ইউএনও (ভারপ্রাপ্ত) ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. ওবায়দুল্লাহ বলেন, আবেদনের বিষয়ে প্রচুর পরিমাণ অভিযোগ পাওয়ায় একটি উপ-কমিটিকে তদন্ত কার্যাদেশ দিয়েছি। তাদের প্রতিবেদন পেলেই দ্রুত কৃষকদের সেচযন্ত্রের লাইসেন্স দেয়ার বিষয়টি সম্পন্ন করা হবে।