বরগুনা জেনারেল হাসপাতালকে ১০০ শয্যা থেকে ২৫০ শয্যায় উন্নীত করার লক্ষ্যে গণপূর্ত বিভাগের মাধ্যমে ৭ তলা ভবন নির্মাণের কাজ শুরু হয় ২০১৩ সালে। ৩১ কোটি ৩১ লাখ ৪৩ হাজার ৫৭৭ টাকা ব্যয়ে ভবনটি নির্মাণের কাজ পায় ভোলার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান আঃ খালেক এন্টারপ্রাইজ। ৩০ মাসের মধ্যে ভবনের নির্মাণ কাজ শেষ করে হস্তান্তর করার কথা থাকলেও সাত বছরেও শেষ হয়নি নির্মাণ কাজ। তবে কাজ শেষ হওয়ার আগেই ভবনটির চারপাশ থেকে বড় বড় ফাটল দেখা গেছে।
অন্যদিকে নির্মাণকাজ শেষ করার আগেই উদ্বোধন করা হয়েছে এ হাসপাতালটি। গত বছরের ২৭শে অক্টোবর বরগুনার তালতলীতে জেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত সভায় বরগুনার ২৭টি প্রকল্প উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তার মধ্যে বরগুনা হাসপাতালের নতুন এ ভবন টি রয়েছে। কিন্তু উদ্বোধনের এক বছর পরও নতুন ভবনে কার্যক্রম শুরু হয়নি। অর্থ সংকটের কারণে এ বছরের আগস্ট মাস থেকে কাজও বন্ধ রয়েছে।
কাজ বন্ধের ব্যাপারে বরগুনা গণপূর্ত বিভাগের কর্মকর্তারা অভিযোগ করে বলেন, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের গাফিলতির কারণে নির্মাণ কাজ এখনো শেষ হয়নি।
তাছাড়া এ পর্যন্ত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ৩১ কোটি চার লাখ টাকা তুলে নিয়েছে। আঃ খালেক এন্টারপ্রাইজের ব্যবস্থাপক জিয়াউদ্দিন বলেন, এখন পর্যন্ত ৯৯ দশমিক ৫০ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। গত বছরের জুন মাসে সর্বশেষ কাজের বিল দেয়া হয়েছে। এরপর আর বিল দেয়া হয়নি। বর্তমানে অর্থাভাবে কাজ বন্ধ রয়েছে। বরাদ্দ পেলে কাজ শুরু হবে। অর্থ বরাদ্দ পেলে ডিসেম্বর মাসেই ভবনটির কাজ শেষ করাসহ হাসপাতাল ভবন কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করা হবে। তবে আরও ৫০ লাখ টাকা বিল পেলে এ কাজ দ্রুত শেষ করতে পারতাম।
বরগুনা হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. সোহরাব হোসেন বলেন, হাসপাতালটিতে নির্ধারিত শয্যার চেয়ে দ্বিগুণ রোগী ভর্তি থাকেন। এসব রোগীকে হাসপাতালে মেঝেতে চিকিৎসা সেবা নিতে হয়। ২৫০ শয্যার হাসপাতাল ভবন চালু হলে সমস্যা থাকবে না। হাসপাতাল ভবন নির্মাণ করে আমাদের কাছে হস্তান্তরের জন্য বেশ কয়েকবার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে তাগিদ দেয়া হয়েছে। কিন্তু তারা হস্তান্তরে দেরি করছে। যার কারণে শয্যা সংকটের কারণে ব্যাহত হচ্ছে চিকিৎসা সেবা।
সরজমিন দেখা যায়, নতুন ভবনের উত্তর পাশে পুরনো হাসপাতাল ভবনের সঙ্গে চলাচল করার পথের কাজ করানো হচ্ছে। নতুন ভবনের ভেতরের দরজা-জানালা ও বৈদ্যুতিক সংযোগ দেয়া হয়েছে। তবে শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্র এখনো লাগানো হয়নি।
বরগুনা জেনারেল হাসপাতালের রোগী কল্যাণ সমিতির সভাপতি এডভোকেট সঞ্জীব দাস বলেন, উদ্বোধনের একবছর পরও হাসপাতাল চালু না হওয়ায় হতাশ জেলাবাসী। হাসপাতালটির নির্মাণের শুরু থেকেই গড়িমসি করছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।
বরগুনা গণপূর্ত অধিদপ্তর কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মাজিদুর রহমান বলেন, আমি এখানে নতুন যোগদান করেছি। তবে জানাতে পেরেছি ভবনটি নির্মাণে ওই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে ৩১ কোটি ৪ লাখ টাকার বিল দেয়া হয়েছে। নির্ধারিত সময়ে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান হাসপাতাল ভবনের নির্মাণকাজ শেষ করতে পারেনি।