× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ২০ এপ্রিল ২০২৪, শনিবার , ৭ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১১ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

হরিপুর সীমান্তে মিলনমেলা

বাংলারজমিন

হরিপুর (ঠাকুরগাঁও) প্রতিনিধি
১৪ ডিসেম্বর ২০১৯, শনিবার

প্রতি বছরের ন্যায় এ বছরও শুক্রবার ঠাকুরগাঁওয়ের হরিপুর সীমান্তে বসলো এপার-ওপার দুই বাংলার মিলনমেলা। দেখা যায়, লক্ষাধিক মানুষের মিলনমেলায় যেমনি ছিল কান্নার রোল তেমনি বয়ে গেছে আনন্দের বন্যা।
স্বজনেরা প্রতি বছর এই দিনটিতে নিজেদের নিকটাত্মীয়ের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাতের জন্য অপেক্ষা করে। লাখো লোকের ভিড়ে স্বজনকে খুঁজতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা সময় পার করে অনেকে। জেলা শহর থেকে প্রায় ৭৫ কিলোমিটার দূরে হরিপুর উপজেলার ভাতুরিয়া ইউনিয়নের গোবিন্দপুর গ্রামে জামোরকালি জিউ মন্দির কমিটি প্রতি বছর এই মেলার আয়োজন করে। ঠাকুরগাঁওয়ের হরিপুর উপজেলার চাপসার সীমান্তের নিভৃত পল্লী গোবিন্দপুরে কুলিক নদীর পাড়ে বসেছে ভারত-বাংলাদেশিদের মিলনমেলা। দুই দেশের বিভিন্ন জেলা-উপজেলা থেকে আগত হাজার হাজার নারী-পুরুষ ও আবালবৃদ্ধ দুই দেশে বসবাসরত তাদের আত্মীয়-স্বজনদের সঙ্গে দেখা করে মনের ভাষা আদান-প্রদানের জন্য সূর্য ওঠার সঙ্গে সঙ্গেই ভিড় করতে থাকে উভয় সীমান্তে। স্থানীয়রা বলেন, বৃটিশ আমল থেকেই সীমান্তঘেঁষা গোবিন্দপুরের এই মেলা ‘পাথর কালি মেলা’ নামে পরিচিত। প্রতি বছরে এখানে একদিনের জন্য এই মেলাটি বসে আসছে।
দেশ স্বাধীনের পরে মেলাটি বাংলাদেশের অংশে পড়লেও মেলায় ভারতীয়দের অংশগ্রহণের জন্য ঐদিন সীমান্ত উন্মুক্ত করে দেয় ভারত। কোনো প্রকার বাধা ছাড়ায় সীমান্তের কাঁটাতারের কাছে এসে আত্মীয়-স্বজনদের সঙ্গে কুশল বিনিময় করতে পারে দুই দেশের মানুষ। ভারত-বাংলাদেশের হাজার হাজার মানুষ এ মেলায় এসে দুই দেশে বসবাসরত আত্মীয়-স্বজনদের সঙ্গে দেখাসাক্ষাৎ করে খুশি করার জন্য এক অপরকে মিষ্টি, আপেল, কমলা, থ্রিপিস, শাড়ি, লুঙ্গি, ইলিশ মাছসহ নানাপ্রকার খাদ্য ও কাপড় আদান প্রদান করে। খবরটি লোকমুখে দুই দেশের বিভিন্ন জেলা-উপজেলায় ছড়িয়ে পড়ে। এতে দুই দেশে বসবাসরত আত্মীয়-স্বজনরা সহজেই দেখা করার জন্য এ দিনটির অপেক্ষা থাকে দুই দেশের মানুষ।

সাধারণত কালিপূজার পরে ডিসেম্বর মাসের সপ্তাহের প্রথম শুক্রবার এ মেলা বসানো হয়। প্রতি বছরের মতো এবারো আত্মীয়-স্বজনদের সঙ্গে দেখা করতে গত কয়েকদিন ধরেই দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে হাজার হাজার মানুষ স্থানীয় আত্মীয়-স্বজনদের বাড়িতে আশ্রয় নেয়। এছাড়াও শুক্রবার সকাল থেকে সাইকেল, মোটরসাইকেল, ভ্যান, অটোচার্জার, পাগলু, মাইক্রোবাস, পিকআপ, নছিমন যোগেও হাজার হাজার আত্মীয়স্বজন ‘পাথর কালি’ নামের এই মেলাটি দেখতে আসে। সকাল ৯টা থেকে শুরু করলেও সীমান্তের কাছে ১০টাই ভিড়তে শুরু করে মানুষ। ভারতের মাকড়হাট ক্যাম্পের বিএসএফ সদস্যরা সীমান্তের ৩৪৬নং পিলারের সীমানায় কাঁটাতারের পাশে ভিড়তে দেয় দুই দেশের মানুষকে। শুরু হয় দুই দেশের মানুষের দেখা-সাক্ষাৎ ও ভাববিনিময়। দীর্ঘদীন পর স্বজনদের কাছে পেয়ে একে অপরকে দেখে কান্নায় ভেঙে পড়েন। মেলাস্থলে গাইবান্ধার গোবিন্দ উপজেলার অখিল চন্দ্র পাল (৬২)-এর সঙ্গে কথা হয়। তিনি জানালেন ভারতের রায়গঞ্জে তার বড়ভাই শিশির চন্দ্রের বাড়ি। দেশ স্বাধীনের আগে তার বড়ভাই ভারতে চলে যাই। দেশ স্বাধীনের পরে তার পরিবারের লোকজন এবং সে ভিসা পাসপোর্ট ছাড়া খুব সহজে যাতায়াত করতে পারে না। তাই ভাই ও ভাইয়ের ছেলেমেয়েদের সঙ্গে দেখা করতে প্রতি বছর মেলায় এখানে আসে।
এছাড়াও দিনাজপুরের জ্যোতিষ চন্দ্র রায়ের সঙ্গে কথা হয়, জ্যোতিষ চন্দ্র রায় (৫০) বলেন, লোকমুখে শুনে আসছি এই মেলার কথা। তাই এবার নিজে দেখতে এসেছি। ভারতের উত্তর দিনাজপুরে আমার বোনজামাই থাকেন, তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। তবে এখনো কারো সঙ্গে দেখা করতে পারিনি। রসুলপুরের মুর্তজা (৫৫) জানান, মালদার কালিয়াচোখ থানাই ভাগিনা আশরাফ আলী (৩৫) থাকেন দেশ স্বাধীনের আগে আমার বোনের ভারতে বিয়ে হয়েছে বোনের শ্বশুরবাড়িতে যাওয়া হয় না। তাই এখানে এসেছি সবার সঙ্গে দেখা করতে। সেতাবগঞ্জের বিমল, রঞ্জন, দীপু, সঞ্জয়, পীরগঞ্জের রাজু, শাহাআলম, ঠাকুরগাঁওয়ের অনিল, গণেশ, পুলক, মধু, পঞ্চগড়ের বিনয় চন্দ্র, মহেশ চন্দ্র, গীতা রানী, দেবীগঞ্জের শ্যামলীসহ হাজারো মানুষ জানান, ভারতে বসবাসরত আত্মীয়-স্বজনদের সঙ্গে দেখা করতেই এ মেলায় এসেছে এবং এ দিনটির জন্য প্রতিবছর তারা উপেক্ষা করে থাকেন।
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর