খুলনায় অবিরাম অনশনরত পাটকল শ্রমিক আবদুস সাত্তার প্যাদার (৫৫) মৃত্যুর ঘটনায় তার নিজবাড়ি পটুয়াখালী সদর উপজেলার বড়বিঘাই ইউনিয়নের তিতকাটা গ্রামে এখন চলছে শোকের মাতম। তার বড় ছেলে ইমরান (১৬) বিলাপ করে বলছিল, ‘বাবা তুমিতো চইল্লা গেলা, আমাগো কই থুইয়া গেলা। এহোন আমরা কই যামু, কেমনে বাঁচমু’। এ সময় সাত্তার প্যাদার স্ত্রী রওশনা বেগম (৪৫) শোকে বাকরুদ্ধ হয়ে গেছেন। পাটকল শ্রমিক সাত্তার প্যাদা ১৯৮৬ সালে বাড়িঘর ফেলে চাকরির খোঁজে গিয়ে খুলনার প্লাটিনাম জুট মিলে হেসিয়ান তাঁতের শ্রমিক হিসেবে চাকরি নেন। তিনিই পরিবারের একাত্র উপার্জনক্ষম ব্যাক্তি। তার তিন মেয়ে ও দুই ছেলের মধ্যে দুই মেয়ের বিয়ে হয়েছে। বড় ছেলে ইমরান মাদ্রাসা থেকে এ বছর এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছে।
ছোট ছেলে হুমায়ুন মাদ্রাসায় নবম শ্রেণিতে পড়ছে। বাড়িতে ভিটিটুকু ছাড়া আর কোনো জমিজমা নেই।
ছেলে ইমরান জানান, বাবা ১১ মাস ধরে বেতন পাচ্ছিল না। এ অবস্থায় অনন্যোপায় হয়ে মা গ্রামীণব্যাংক থেকে ৩০ হাজার টাকা লোন নেন চলতি বছরের মার্চ মাসে। সেই টাকায় ইদানীং আমাদের ভরণপোষণ, পড়াশোনাসহ অন্যান্য খরচ চলছিল। এখন এই টাকার কিস্তি পরিশোধ কীভাবে হবে তাও অনিশ্চিত।
খুলনা অঞ্চলের রাষ্ট্রায়ত্ত আটটি পাটকলের শ্রমিকরা ১১ দফা দাবিতে গত মঙ্গলবার থেকে আমরণ অনশন শুরু করে। অনশন চলাকালে বৃহস্পতিবার সকাল ১০টার দিকে সাত্তার প্যাদা গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সন্ধ্যায় তার মৃত্যু হয়।
মৃত সাত্তার প্যাদার লাশ শুক্রবার সন্ধ্যায় তার গ্রামের বাড়ি তিতকাটায় এসে পৌঁছলে সেখানে এক হৃদয়বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়। পরে জানাজা শেষে পারিবারিক গোরস্তানে তাকে দাফন করা হয়।