১১ দফা দাবিতে খুলনা-যশোর অঞ্চলের রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলগুলোয় চলমান অনশন কর্মসূচি দু’দিনের জন্য স্থগিত ঘোষণা করা হয়েছে। এই দু’দিনের মধ্যে বিষয়টি সমাধান না হলে ১৭ই ডিসেম্বর পুনরায় তারা অনশন শুরু করবেন। সিবিএ-ননসিবিএ নেতা সোহরাব হোসেন এ তথ্য জানিয়েছেন।
পাটকল শ্রমিকরা ১০ই ডিসেম্বর বেলা ২টা থেকে অনশন কর্মসূচি শুরু করেন। ১৩ই ডিসেম্বর রাত ১টায় তারা দু’দিনের জন্য কর্মসূচি স্থগিতের ঘোষণা দেন। এ কর্মসূচি চলাকালে আব্দুস সাত্তার নামের এক শ্রমিক মারা যান এবং দুই শতাধিক শ্রমিক অসুস্থ হন।
খুলনা বিভাগীয় শ্রম দপ্তরের আহ্বানে শুক্রবার সন্ধ্যায় ত্রিপক্ষীয় বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে ৯ পাটকলের সিবিএ-ননসিবিএ নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠকে শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী বেগম মন্নুজান সুফিয়ান বলেন, শনিবার এ বিষয় নিয়ে বস্ত্র ও পাটমন্ত্রীর সঙ্গে তিনি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে যাবেন। এ ছাড়া শ্রমিকদের মজুরি কমিশন বিষয়ে পাট মন্ত্রণালয় আন্তঃমন্ত্রণালয়ের বৈঠক আহ্বান করেছেন। সেখানে বিষয়টি সমাধান হবে।
যে কারণে শ্রমিক নেতাদেরকে অনশন কর্মসূচি আপাতত স্থগিত করার আহ্বান জানান তিনি। এরপরই অনশন কর্মসূচি দু’দিনের জন্য স্থগিত করার ঘোষণা দেয়া হয়।
এরপর শুক্রবার দিবাগত রাত সোয়া ১টায় শ্রমিক নেতাদের দেয়া তিনদিনের স্থগিতাদেশ মেনে নেয় সাধারণ শ্রমিকরা। তবে প্যান্ডেল স্টেজ সব ঠিক থাকবে বলে পাটকল শ্রমিক নেতারা জানান। প্লাটিনাম জুট মিলের সিবিএ সভাপতি শাহানা শারমিন বলেন, ১৫ই ডিসেম্বরের সভায় দাবি বাস্তবায়ন না হলে ১৭ই ডিসেম্বর থেকে আবারো অনশন পালন করা হবে।
প্লাটিনাম জুট মিলের সিবিএ সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবির জানান, শ্রম প্রতিমন্ত্রীর আশ্বাসের প্রেক্ষিতে আমরণ অনশন কর্মসূচি আপাতত স্থগিত করা হয়েছে। ১৫ই ডিসেম্বর দাবি পূরণ না হলে ১৭ই ডিসেম্বর থেকে আবারো আমরণ অনশন কর্মসূচি শুরু করা হবে। অনশন স্থগিত হওয়ার পর খালিশপুরের বিআইডিসি সড়ক থেকে অনশনরত সব শ্রমিক ঘরে ফিরে গেছেন।
মতবিনিময় সভায় শ্রম প্রতিমন্ত্রী বেগম মন্নুজান সুফিয়ান শ্রমিক নেতাদের উদ্দেশ্যে বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজেই এই পাটকল এবং শ্রমিকদের ব্যাপারে অত্যন্ত আন্তরিক। প্রধানমন্ত্রীর ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় খুলনার বন্ধ হওয়া পাটকলগুলো চালু হয়েছে। এ সরকারের আমলে মজুরি কমিশন ২০১৫ পাস হয়েছে এবং এ সরকারই তা বাস্তবায়ন করবে।
এদিকে আমরণ অনশন কর্মসূচি স্থগিত করে চারদিন পর শনিবার সকালে পাটকল শ্রমিকরা কাজে যোগদান করেছেন। বেলা ২টার দিকে সর্বশেষ ক্রিসেন্ট জুট মিলের শ্রমিকরা যোগদান করেন। পাটকল সিবিএ-ননসিবিএ সংগ্রাম পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক মো. মুরাদ হাসান বলেন, ‘রাতে অনশন স্থগিতের পর শনিবার সকাল থেকে শ্রমিকরা কাজে যোগ দিতে শুরু করেছেন। দুপুর ২টায় ক্রিসেন্ট মিলের শ্রমিকরা কাজে যোগ দেন।’
প্লাটিনাম জুট মিলের সাবেক সভাপতি খলিলুর রহমান বলেন, ‘আমার মিলের শ্রমিকরা সকালে যোগদান করেছেন এবং উৎপাদন শুরু করেছেন।’
ক্রিসেন্ট জুট মিলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সহরাব হোসেন জানান, তার মিলের শ্রমিকরা বেলা ২টা থেকে কাজে যোগদান করেন।
প্লাটিনাম জুট মিলের প্রকল্প প্রধান মো. গোলাম রব্বানী জানান, তার মিলে সকাল ৬টা থেকেই শ্রমিকরা কাজে যোগদান করেছেন। এখন মিল এলাকা স্বাভাবিক রয়েছে।
রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল সিবিএ-নন সিবিএ সংগ্রাম পরিষদের ১১ দফা বাস্তবায়ন দাবিতে গত ১০ই ডিসেম্বর থেকে খুলনাঞ্চলের রাষ্ট্রায়ত্ত ৯টি পাটকলের সামনে অনির্দিষ্টকালের জন্য আমরণ অনশন শুরু হয়। এতে প্রায় অর্ধ লাখ পাটকল শ্রমিক অংশ নেন। ইতিমধ্যে গত বৃহস্পতিবার (১২ই ডিসেম্বর) প্লাটিনাম জুট মিলের শ্রমিক আব্দুস সাত্তার মারা যান। শুক্রবার সকাল ১০টায় তার নামাজে জানাজা শেষে গ্রামের বাড়ি পটুয়াখালীতে দাফন করা হয়। এ ছাড়া ২ শতাধিক শ্রমিক এ অনশনে অসুস্থ হয়ে পড়েন।