× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ২০ এপ্রিল ২০২৪, শনিবার , ৭ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১১ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

বান্দরবানে চার পরিবারের জন্য ৩১ লাখ টাকার ব্রিজ

বাংলারজমিন

নুরুল কবির, বান্দরবান থেকে
১৫ ডিসেম্বর ২০১৯, রবিবার

৩০ লাখ ৭৭ হাজার টাকা বরাদ্দে ব্রিজের কাজ শেষ হয়েছে এক মাস আগে। কাজের মান নিয়ে প্রশ্ন ছিল এলাকাবাসীর। আর এই ব্রিজ পার হলেই পাহাড় বেয়ে উপরে উঠে রয়েছে একই গোষ্ঠীর চার পরিবারের বসতি। রয়েছে ঠিকাদারের বাগান। নির্মাণ কাজ শেষে এলাকার মানুষ একবাক্যে বলছেন ক্ষমতার অপব্যবহারের পাশাপাশি সরকারের অর্থ অপচয় করা হয়েছে। এই ব্রিজের অবস্থান বান্দরবানের রোয়াংছড়ি উপজেলার আলেক্ষ্যং ইউনিয়নের বিজয়পাড়া এলাকায়।

সরজমিনে দেখা যায়, উপজেলার ইউনিয়নের হান্টুক্রী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে দিয়ে এই ব্রিজের পরে রয়েছে চারটি পরিবার। উপন জয় তঞ্চঙ্গ্যা, তার ভাই পিতল জয় তঞ্চঙ্গ্যা, পিচ্চল চান তঞ্চঙ্গ্যা ও ভগ্নিপতি পত্ন মণি তঞ্চঙ্গ্যার বাড়ি।
ব্রিজটি নির্মিত হওয়ায় এই চার পরিবার যতটাই-না লাভবান হয়েছেন তার চেয়ে বেশি লাভবান হয়েছেন ব্রিজ নির্মাণে সংশ্লিষ্ট আওয়ামী লীগ নেতা।

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের অর্থায়নে নির্মিত এই ব্রিজের ঠিকাদার ছিলেন রোয়াংছড়ি উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং আলেক্ষ্যং ইউনিয়নের চেয়ারম্যান বিশ্বনাথ তঞ্চঙ্গ্যা নিজেই। ক্ষমতার অপব্যবহার করে মরা ঝিরিতে ব্যক্তিস্বার্থে ব্রিজ নির্মাণ সরকারি অর্থের অপচয় ছাড়া আর কিছুই নয় অভিযোগ স্থানীয়দের। প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিস ও স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা গেছে, জেলার রোয়াংছড়ি উপজেলার আলেক্ষ্যং ইউনিয়নের বিজয়পাড়ার পার্শ্ববর্তী ঝিরির ওপরে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের অর্থায়নে ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ১২ মিটার  দৈর্ঘের একটি আরসিসি গার্ডার ব্রিজ নির্মাণ করা হয়েছে। শাহ আমানত ট্রেডার্স লাইসেন্সে ৩০ লাখ ৭৭ হাজার টাকায় যৌথভাবে ব্রিজটি নির্মাণ করেছেন বিশ্বনাথ তঞ্চঙ্গ্যা। স্থানীয়দের অভিযোগ, শুষ্ক মৌসুমে ওই ছড়ায় একফোঁটা পানিও থাকে না। শুধু বর্ষায় বৃষ্টির সময় হাঁটু পানি হয় ঝিরিতে। ওই এলাকায় কোনো গ্রামীণ চলাচলের সড়কও নেই।

তবে এই ওই পরিবারের বাড়ি পার হয়ে রয়েছে ইউনিয়ন চেয়ারম্যান ও রোয়াংছড়ি উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বিশ্বনাথ তঞ্চঙ্গ্যার জায়গা। রয়েছে বাগান। ব্রিজটি নির্মাণ নিয়ে প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও)র সঙ্গে ঠিকাদার আওয়ামী লীগ নেতা বিশ্বনাথ তঞ্চঙ্গ্যার বাক-বিতণ্ডার ঘটনাও ঘটে। প্রকল্প কর্মকর্তাকে চেয়ার নিয়ে মারতে যাওয়ার অভিযোগও উঠেছে এই আওয়ামী লীগ নেতার বিরুদ্ধে।

বিজয়পাড়ার স্থানীয় বাসিন্দা শিশির তঞ্চঙ্গ্যা, রবীন্দ্র তঞ্চঙ্গ্যা বলেন, এই ছড়ায় ব্রিজের কোনো প্রয়োজন ছিল না। ঝিরিতে বছরের অধিকাংশ সময় কোনো পানি থাকে না। এটি সরকারি অর্থের অপচয়। তারা বলেন, এই অঞ্চলে অনেক পাহাড়ি গ্রাম আছে, যেখানে যাওয়ার জন্য ঝিরি ও ছড়ায় ব্রিজ খুবই দরকার। জনস্বার্থে সরকারি অর্থায়নে ব্রিজটি সেখানেই করার দরকার ছিল।

তবে অভিযোগ অস্বীকার করে রোয়াংছড়ি উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান বিশ্বনাথ তঞ্চঙ্গ্যা বলেন, কাজে কোনো ধরনের অনিয়ম হয়নি। ব্রিজের ওই পাশে বেশ কয়েকটি পরিবার বসবাস করে। আমার নিজের বাগানের জমিও আছে। এখন রাস্তা না থাকলেও ভবিষ্যতে ওইদিকে আরেকটি পাহাড়ি গ্রাম হবে।
প্রকল্প কর্মকর্তার (পিআইও) বাক-বিতন্ডার ঘটনাও ঘটেছে বলে স্বীকার করেছেন এই আওয়ামী লীগ নেতা। পার্বত্যমন্ত্রীও জানে ব্রিজটি নির্মাণের কথা, বলেন তিনি।

 রোয়াংছড়ি উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) মো. ময়নুল ইসলাম জানান, গ্রামীণ সড়ক এবং কাবিখা প্রকল্পের রাস্তার সংযোগ স্থানে পিআইও ব্রিজগুলো নির্মাণ করা হয়। কিন্তু পাহাড়ি অঞ্চলে সেটি অনেক সময় বিবেচ্য হয় না। এ ক্ষেত্রেও তেমনটি হয়েছে। তবে ব্রিজ নির্মাণের আগে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কয়েকবার আলোচনা করে ব্রিজের প্রস্তবনা পাঠানো হয়েছিল। পার্বত্যমন্ত্রী, উপজেলা চেয়ারম্যান, ইউএনও সবার সুপারিশে ব্রিজটির অনুমোদন হয়েছে।
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর