× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, বৃহস্পতিবার , ৫ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৯ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

নানা কৌশলে আমদানি হচ্ছে মাদক বাণিজ্যে নারী ও শিশু

শেষের পাতা

রুদ্র মিজান
১৫ জানুয়ারি ২০২০, বুধবার

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কঠোর নজরদারি। রয়েছে মাদকবিরোধী অভিযান। প্রায়ই গ্রেপ্তার হচ্ছে মাদক ব্যবসায়ী। এরমধ্যেই সীমান্ত দিয়ে ঢুকছে মরণনেশা মাদক। মিয়ানমার সীমান্তে বিজিবি’র ও বিভিন্ন স্থলাঞ্চলে র‌্যাব,
পুলিশের তৎপরতা বেড়ে গেলে বিকল্প পথে মরণ নেশা ইয়াবা আমদানি করছে মাদক কারবারিরা। চট্টগ্রাম হয়ে আসা এই মরণনেশা ছড়িয়ে পড়ছে ঢাকাসহ সারা দেশে। মাদক বাণিজ্যে দিনদিন বাড়ছে নারী ও শিশুদের সম্পৃক্ততা। মাদক বিক্রির সুবিধার জন্যই তাদের সম্পৃক্ত করা হচ্ছে।
অনেকেই পর্দার আড়ালে থেকে মাদক ব্যবসায় বিনিয়োগ করছেন। তারা সমাজসেবী, রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী, ব্যবসায়ী হিসেবে পরিচিত। এমনকি সরকারি চাকরিজীবীদের অনেকে এই মরণনেশার বাণিজ্যে সম্পৃক্ত।
গত বছরের মে মাসে মাদক বিরোধী বিশেষ অভিযান শুরু হলে মাদক ব্যবসায়ীদের অনেকে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়। অনেকে আত্মগোপনে চলে যায়। কেউ কেউ দেশ ছেড়ে পালিয়ে যায়। প্রকাশ্যে মাদক বেচা-কেনাও কমে যায়। বিজিবি সূত্রে জানা গেছে, অভিযানের পর জুলাই মাসে ৩ লাখ ২ হাজার ৫শ’ ২৯ পিস ইয়াবা জব্দ করে বিজিবি। আগস্ট মাসে জব্দ করা হয় ২ লাখ ৬৬ হাজার ৮শ’২৮ পিস। সম্প্রতি আবার ইয়াবা আমদানি বেড়েছে বলে মনে করছেন আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্মকর্তারা। গত বছরের অক্টোবর ও নভেম্বর মাসে বিজিবি কর্তৃক ইয়াবা জব্দ করা হয়েছে ১৫ লাখ ৮ হাজার ৫শ’ ২৭ পিস। এসব বিষয়ে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)’র মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মো. সাফিনুল ইসলাম জানান, বিজিবি সক্রিয় থাকায় ইয়াবা আমাদানির রুট পরিবর্তন করেছে মাদক ব্যবসায়ীরা। তারা এখন জলপথ দিয়ে ইয়াবা আমদানি করছে।
গোয়েন্দা সূত্রে জানা গেছে, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানের ফলে টেকনাফ ভিত্তিক ইয়াবা পাচারকারী সিন্ডিকেট ছত্রভঙ্গ হয়ে গেছে। তারা পুরনো রুট পরিবর্তন করে নিত্য নতুন কৌশল অবলম্বন করছে। মিয়ানমারের মংডু টাউনশিপ থেকে স্পীবোটে বুচিডং ছেরাদ্বীপ হয়ে মাদক মিয়ানমারের কারবারিরা ইয়াবা পৌঁছে দেয় বাংলাদেশের ইঞ্জিনচালিত নৌকা ও ট্রলারে অবস্থানরত পাচারকারীদের কাছে। তারপর সেখান থেকে স্থল পথে, জলপথে এমনকি আকাশপথে ইয়াবা ছড়িয়ে দেয়া হচ্ছে সারা দেশে। সূত্রমতে, মিয়ানমার থেকে সড়কপথে কক্সবাজার হয়ে ঢাকায় ইয়াবা পাচার করতে অনেক বাধা বিপত্তির সম্মুখীন হতে হয়। বিভিন্নস্থানে চেকপোস্টে তল্লাশির শিকার হতে হয়। এসব কারণে মাদক কারবারিরা রুট পরিবর্তন করে সাগর পথে কক্সবাজার থেকে ইয়াবা নিয়ে পটুয়াখালী ও চাঁদপুর হয়ে ঢাকায়  আসে।
ঢাকায় বিভিন্ন এলাকায় রয়েছে মাদক কারবারিদের প্রভাবশালী সিন্ডিকেট। অনেক সময় মাদক কারবারিদের আটক করার পর বিব্রতকর পরিস্থিতির শিকার হন আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তারা। তদবির আসে বিভিন্নস্থান থেকে। পর্দার আড়ালে থেকে অনেকেই এই মাদক ব্যবসায় বিনিয়োগ করছেন। ইতিমধ্যে তাদের অনেকের পরিচয় পেয়েছেন গোয়েন্দারা। গোয়েন্দারা জানান, মাদক ব্যবসায়ীরা আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর নজরদারি থেকে নিজেদের রক্ষা করতে নারী ও শিশুদের সম্পৃক্ত করছে। দিনে দিনে এই প্রবণতা বাড়ছে বলে জানান তারা।
মাদক কারবারিদের একজন চট্টগ্রামের জাবেদ। মাদক ব্যবসার স্বার্থেই নারায়ণগঞ্জে বাসা নিয়ে থাকতো। মাদক বাণিজ্যের সুবিধার্থে নিজের সুন্দরী স্ত্রী ফারজানা আক্তার সুমিকেও এই ব্যবসায় জড়িত করে। জাবেদের আরেক সহযোগী এনামুল হক জিয়া। কক্সবাজারের এই বাসিন্দাও নিজের  স্ত্রী আনোয়ারাকেও এই ব্যবসায় জড়িত করে। সূত্রমতে, খাইরুল আমিন নামে এক মাদক পাচারকারী চট্টগ্রাম থেকে ইয়াবা নিয়ে ঢাকায় পৌঁছে দেয়। পরবর্তীতে ইয়াবা বাসায় রেখে ঢাকার বিভিন্ন ডিলারদের কাছে পৌঁছে দেয় ফারজানা ও আনোয়ারা। একাধিকবার এই চক্রের সদস্যদের গ্রেপ্তার আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। সর্বশেষ র‌্যাব-১১ এর অভিযানে ৮ হাজার পিস ইয়াবাসহ গ্রেপ্তার করা হয় ফারজানা ও আনোয়ারাকে। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, এরকম শতাধিক ডিলার পর্যায়ের মাদককারবারি রয়েছে ঢাকাতে। কেউ কেউ বিদেশে থেকেও মাদক ব্যবসা পরিচালনা করছে। তাদের মধ্যে অন্যতম আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর তালিকায় শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ী ইসতিয়াক। সূত্রমতে, বর্তমানে মালয়েশিয়াতে অবস্থান করেও তার লোকজনকে দিয়ে এই মরণনেশার বাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছে। তার সিন্ডিকেটের হয়ে মাদক বাণিজ্য পরিচালনা করছে পারভেজ, আরশাদ, মোল্লা আনোয়ার, আলমগীর, জসিম, মাহমুদ পটল, সান্নু, বাবু, আরমান, টেরু সেলিম, বেজি নাদিম, শাহজাদা, চায়না সুমন, জিলানী, রমজানের ছেলে আসলাম, মার্কেট ক্যাম্প ইনচার্জ কামালের ছেলে সাজু, মোস্তফা মনু, গাপ্পি, আসলাম, সেলিম, বশির কসাই, লাম্বু মনু, পেলু আরমানসহ আরও অনেকে। চক্রটি মোহাম্মদপুর, বসিলা, ধানমন্ডি, আদাবর, শ্যামলি এলাকায় মাদক বাণিজ্য করে। যদিও চক্রের প্রায় সবাই মোহাম্মদপুর জেনেভা ক্যাম্পের বাসিন্দা। ওই চক্রটি শিশু ও নারীদের মাধ্যমে বিভিন্নস্থানে মাদক পাচার করে থাকে। নারীদের মধ্যে অন্যতম জেনেভা ক্যাম্পের পলু কসাইয়ের বউ শিমা, পাখি, আশ্রাফের স্ত্রী রোজিনা। জেনেভা ক্যাম্পের রিলিফ কমিটির সেক্রেটারী এস এম সীমা কোরাইশির বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে নিজে আড়ালে থেকে রাজনৈতিক দলের পরিচয় ব্যবহার করে তিনি মাদক ব্যবসায়ীদের শেল্টার দেন। এমনকি মাদক বাণিজ্যে নিজের সম্পৃক্ততার অভিযোগও উঠেছে। যদি এসব বিষয়ে অস্বীকার করে তিনি বলেছেন, অভিযোগ সত্য না। রাজনীতি করার কারণেই একটি চক্র তার বিরুদ্ধে মিথ্যা তথ্য প্রচার করছে বলে জানান তিনি। এছাড়াও রাজধানীর তেজগাঁও, রামপুরা, খিলগাঁও, বাগিচা, বাড্ডা, মিরপুর, ভাষানটেক এলাকায় নানা কৌশলে বিক্রি হচ্ছে মাদক। এসব বিষয়ে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক খোরশিদ আলম বলেন, মাদক কারবারিরা নানা কৌশল ব্যবহার করছে। সবকিছু মাথায় রেখেই আমরা অভিযান অব্যাহত রেখেছি। প্রায়ই মাদক কারবারিদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে বলে জানান তিনি।
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর