জৈন্তাপুরে মাওলানা মিজানুর রহমান আজহারীর অনুষ্ঠানে যাচ্ছেন না সিলেটের সাবেক মেয়র ও আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সদস্য বদর উদ্দিন আহমদ কামরান। বিতর্কিত হলে অন্য আওয়ামী লীগ নেতারাও মাহফিলে না যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। তারা বলেছেন- অনুষ্ঠান নিয়ে নয়, মাওলানা আজহারীকে নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন আলেম-উলামারা। এ কারণে আজহারীকে তারা ওয়াজ মাহফিলের অনুষ্ঠানে নিতে চান না। প্রতিহতের ঘোষণাও দিয়েছেন। এই দাবিতে উলামারা অনড় রয়েছেন বলে জানান তারা। মাওলানা মিজানুর রহমান আজহারীর ২০শে জানুয়ারি সিলেটের জৈন্তাপুরে আসার কথা রয়েছে। উপজেলার দরবস্ত ইউনিয়নের হাজারী সেনগ্রাম সমাজকল্যাণ পরিষদ আয়োজিত তাফসীরুল কোরআন মাহফিলে বয়ান করার কথা তার।
মাহফিল উপলক্ষে সেনগ্রাম সমাজকল্যাণ সংস্থার তরফ থেকে প্রচারের জন্য সাঁটানো পোস্টারে দেখা গেছে মাহফিলে প্রধান অতিথি হিসেবে নাম রয়েছে সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান লুৎফুর রহমানের। একই সঙ্গে বিশেষ অতিথি হিসেবে সিলেট সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র ও আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সদস্য বদরউদ্দিন আহমদ কামরানের নাম রয়েছে। আজহারীর এই ওয়াজ মাহফিলে সিলেট আওয়ামী লীগের দুই শীর্ষ নেতার অতিথি হওয়া নিয়ে সমালোচনা শুরু হয়। জৈন্তাপুরের ওই মাহফিলের পোস্টার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। এতে মিজানুর রহমান আজহারীর সঙ্গে আওয়ামী লীগ নেতা লুৎফুর রহমান এবং বদরউদ্দিন আহমদ কামরানেরও নাম রয়েছে। তবে এই আয়োজনের ব্যাপারে কিছুই জানেন না বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সদস্য বদরউদ্দিন আহমদ কামরান। তিনি জানান- আমি এই তাফসীরুল কোরআন মাহফিল সম্পর্কে কিছুই জানি না। আর আজহারীকেও চিনি না। আমাকে না জানিয়েই পোস্টারে আমার নাম ব্যবহার করা হয়েছে। আওয়ামী লীগের এই নেতা বলেন, ওই অনুষ্ঠানে আমার যাওয়ার প্রশ্নই ওঠে না। কারণ আমি ১৮ই জানুয়ারি টুঙ্গিপাড়া যাবো। ২০ তারিখে ঢাকা সিটি নির্বাচনের প্রচারণায় থাকবো। অনেক আগে থেকেই আমার এই কর্মসূচি নির্ধারিত ছিল। সিলেট আওয়ামী লীগের নেতারা জানিয়েছেন- অনুষ্ঠান নিয়ে বিতর্ক দেখা দেয়ার কারণে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এডভোকেট লুৎফুর রহমানও অনুষ্ঠানে যাবেন না। দলীয় নেতারা তাকে অনুষ্ঠানে উপস্থিত না থাকার অনুরোধ জানাবেন। এদিকে- জৈন্তাপুরের এই অনুষ্ঠানই নয়, সিলেটের কানাইঘাট ও ওসমানীনগরের ওয়াজ মাহফিলের অনুষ্ঠানেও মাওলানা আজহারীকে প্রতিহতের ঘোষণা দিয়েছেন কওমি মাদ্রাসা অংশের আলেম-উলামারা। ইতিমধ্যে এ নিয়ে তিনটি এলাকায়ই পাল্টাপাল্টি অবস্থানে রয়েছে স্থানীয় জনগণ। এসব বিষয়ে হস্তক্ষেপ করেছে জেলা প্রশাসন। পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে গতকাল বিকেলে এ নিয়ে বৈঠক হয়েছে। জৈন্তাপুরের উপজেলা চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা কামাল আহমদ মানবজমিনকে জানিয়েছেন- জৈন্তাপুরের ওয়াজ মাহফিল আয়োজনে কোনো বাধা নেই। তবে- আজহারীকে ওয়াজ মাহফিলে দেখতে চান না আমাদের আলেম-উলামারা। তারা এ কথা স্পষ্ট জানিয়েছেন। ফলে ওয়াজ মাহফিল নিয়ে বিতর্ক দেখা দিয়েছে। তিনি জানান- বিতর্কিত হলে আমিও এই মাহফিলে যাবো না। সিলেটের হরিপুর মাদ্রাসার শায়খুল হাদিস মাওলানা ইউসুফ শ্যামপুরী জানিয়েছেন- আমাদের সন্তানরা, ছাত্ররা যতটুকু জানেন আজহারী তাও জানেন না। বরং তিনি বিতর্কিত কথা বলে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছেন। এ কারণে জৈন্তাপুরের মানুষ মাহফিলে তার উপস্থিতি চায় না। এ দাবিতে সবাই সোচ্চার। তিনি বলেন- নবী (সা:), তার পরিবার কিংবা সাহাবীদের নিয়ে বিতর্কিত বক্তব্য ধর্মপ্রাণ মানুষের মনে আঘাত করেছে। মাওলানা আজহারী আহলে সুন্নত জামাতের অনুসারী নয় বলেও জানান তিনি।