× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ১৭ এপ্রিল ২০২৪, বুধবার , ৪ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৮ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

ইউরোপের ২৭ দেশে থাকা অবৈধ বাংলাদেশিদের ফেরানোর চুক্তি পর্যালোচনা আজ

প্রথম পাতা

মিজানুর রহমান
১৬ জানুয়ারি ২০২০, বৃহস্পতিবার

ইউরোপীয় ইউনিয়ন জোটের ২৭ রাষ্ট্রে থাকা প্রায় ১ লাখ বাংলাদেশিকে ফেরানোর চুক্তির অগ্রগতি পর্যালোচনায় ঢাকায় আজ দুই পক্ষের কর্মকর্তারা বৈঠকে বসছেন। জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপের ওই বৈঠকটি হবে সেগুনবাগিচায়। এতে বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দিবেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পশ্চিম ইউরোপ ও ইইউ দেখভালের দায়িত্বপ্রাপ্ত মহাপরিচালক আন্দালিব ইলিয়াস।

আর ইউরোপীয় ইউনিয়নের পক্ষে নেতৃত্ব দিবেন কমিশনের স্বরাষ্ট্র বিষয়ক মহা-পরিদপ্তরের পরিচালক মাইকেট শাটার। ইইউ প্রতিনিধি দলটি এরইমধ্যে ঢাকায় পৌঁছেছে। ২০১৭ সালের ২১ শে সেপ্টেম্বর নিউইয়র্কে অনুষ্ঠিত দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে ইউরোপে নানা কারণে অনিয়মিত বা অবৈধ হয়ে পড়া বাংলাদেশিদের ফেরানোর সংক্রান্ত চুক্তি ‘স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিউর বা এসওপি’ সই হয়েছিল। চুক্তির আওতায় ইউরোপে বৈধতা পাওয়ার সব রকম আইনি লড়াইয়ে হেরে যাওয়া কয়েক’শ বাংলাদেশিকে এরইমধ্যে দেশে ফেরানো হয়েছে। বাকীদের বৈধ হওয়ার আইনী প্রক্রিয়া এখনও শেষ হয়নি বা চূড়ান্ত রায় হয়নি। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল প্রতিনিধিরা মানবজমিনকে জানিয়েছেন, কেবল ইউরোপ নয়, বিশ্বের কোথাও কোন বাংলাদেশি অবৈধভাবে থাকুক সরকার তা চায় না।
ফলে আন্তর্জাতিক আইন, বিধিবিধান এবং পদ্ধতি মেনে তাদের ফেরানোর পক্ষেই ঢাকার নীতিগত অবস্থান। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একাধিক সভায় তার সরকারের এ সংক্রান্ত ‘জিরো টলারেন্স’ নীতির বিষয়টি ব্যক্ত করেছেন। তবে দুনিয়ার দেশে দেশে থাকা বাংলাদেশিদের আইনি সুরক্ষা নিশ্চিতেও সরকার সচেষ্ট রয়েছে।

অপরাধী না হলে কোন বাংলাদেশির পছন্দের দেশে বৈধতা পাওয়ার আইনি সূযোগ থেকে বঞ্চিত না হওয়া অর্থাৎ জোর করে দেশে ফেরত না পাঠনো নিশ্চিত করতে সরকার দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। কর্মকর্তারা বলছেন, আজকের আলোচনায় দু’বছরে এসওপি বাস্তবায়নের অগ্রগতি বিশেষত মাঠ পর্যায়ে এ নিয়ে কোন চ্যালেঞ্জ বা প্রতিবন্ধকতা আছে কি-না? তা নিয়ে আলোচনা হবে। গত এপ্রিলে ব্রাসেলসে অনুষ্ঠিত এসওপি বাস্তবায়ন সংক্রান্ত জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপের সর্বশেষ বৈঠকে যেসব সিদ্ধান্ত হয়েছিল আজকের আলোচনায় তার অগ্রগতিও পর্যালোচনা হবে। উল্লেখ্য, ইউরোপের কোন্ দেশে কত বাংলাদেশি বৈধ এবং কত বাংলাদেশি অবৈধভাবে বসবাস করছেন তার সরকারি কোন ভাষ্য নেই। ইউরোপীয় কমিশনও এ নিয়ে সেগুনবাগিচাকে আজ অবধি কোন পরিসংখ্যান শেয়ার করেনি। তবে ইউরোপীয় কমিশনের পরিসংখ্যান দপ্তর ইউরোস্ট্যাটের অফিসিয়্যাল ওয়েব সাইটে ২০০৮ সাল থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত ৯৩ হাজার ৪৩৫ জন বাংলাদেশি ইউরোপের দেশগুলোতে অবৈধভাবে প্রবেশ করেছে মর্মে একটি পরিসংখ্যান রয়েছে।

এটি ধরেই অনানুষ্ঠানিকভাবে ইউরোপে প্রায় ১ লাখ বাংলাাদেশি অবৈধভাবে বসবাস করছে বলে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে রিপোর্ট হয়ে থাকে। কিন্তু ঢাকা বা ব্রাসেলস আনুষ্ঠানিকভাবে এ পরিসংখ্যানটি সত্য বা মিথ্যা- কোনটাই বলতে চায় না। বরং ঢাকা যেটা বলার চেষ্টা করে তা হলো- ইউরোপের সিস্টেম থেকে একেক সময় একেক তথ্য প্রচার করা হয়। ইউরোপের দেশগুলোর পরস্পরের মধ্যে যাতায়াত সহজ হওয়ায় এক ব্যক্তিকে একাধিক দেশে গণনা করার আশঙ্কা রয়েছে, ফলে ইউরোস্ট্যাটের পরিসংখ্যানটিও ত্রুটিমুক্ত নয়।

প্রত্যাবাসিত বাংলাদেশিদের পূনর্বাসন নিয়ে আলোচনা: কর্মকর্তারা বলছেন, ইউরোপে অবৈধভাবে অবস্থানরত বাংলাদেশিদের একটি উন্নয়ন মডেলের অধীনে ফেরত আনছে সরকার। যাতে তারা নিজে থেকেই দেশে ফিরে আসতে উৎসাহিত বোধ করে। ইতোমধ্যে ওই উন্নয়ন মডেলের আওতায় ইউরোপ ত্যাগ করা বাংলাদেশিদের প্রণোদনা দিতে সাড়ে ১২ মিলিয়ন ইউরো বরাদ্দ করেছে ইইউ। এটি বাস্তবায়নে আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা আইওএম কাজ করছে। ইইউর সঙ্গে বাংলাদেশের সই হওয়া এসওপি অনুযায়ী, ইউরোপের দেশগুলো থেকে স্বেচ্ছায় ফেরত আসা বাংলাদেশিদের ওই উন্নয়ন মডেলের আওতায় কর্মসংস্থানে পুঁজির যোগান, প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ সর্বোপরি পুনর্বাসন করা হবে। বৈধভাবে বাংলাদেশিদের ইউরোপ যাত্রা নির্বিঘ্ন করতে চায় ঢাকা: সেগুনবাগিচা বলছে, অবৈধদের ফেরানোর সংক্রান্ত এসওপি সইয়ে ঢাকাকে নজিরবিহীন চাপে ফেলেছিল ইউউ। নির্ধারিত সময় বেঁধে দিয়ে ব্রাসেলস হুমকি দিয়েছিল চুক্তি সই বিলম্ব হলে বৈধদের ভিসায় জটিলতা হবে। সেই সময়ে পরোক্ষভাবে বাংলাদেশিদের ভিসা জটিলতাও শুরু হয়েছিল। পরিসংখ্যান বলছে, ২০১৪ সালে ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোতে বাংলাদেশিদের জন্য প্রায় ২৬ হাজার, ২০১৫ সালে প্রায় ২১ হাজার এবং ২০১৬ সালে প্রায় ২৫ হাজার রেসিডেন্ট পারমিট ইস্যু হয়েছিল।

কিন্তু ২০১৭ সালের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত সেই রেসিডেন্ট পারমিট ইস্যু ৪ হাজার ১০০ তে নেমে এসেছিল। ওই সময়ে মন্ত্রী, এমপি এমনকি রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের ভিসাও বিলম্বিত করা হচ্ছিলো কোন কারণ ছাড়াই। ওই বছরের সেপ্টেম্বরে এসওপি সইয়ের পর পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে শুরু করে। এখন ঢাকার একটাই চাওয়া অবৈধদের ফেরানোর পাশাপাশি শিক্ষার্থী, ব্যবসায়ী এবং অফিসিয়্যাল বা একান্ত প্রয়োজনে বৈধভাবে ইউরোপ যাওয়া বাংলাদেশিদের ভিসাসহ অন্যান্য সূযোগ সুবিধা নির্বিঘ্ন করা। আজকের বৈঠকে তা নিয়েও বিস্তারিত আলোচনা হবে বলে আভাস মিলেছে।
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর