জাতীয় সংসদে ক্রসফায়ারে ধর্ষক হত্যার দাবি দুই সংসদ সদস্যের ব্যক্তিগত মত বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। গতকাল সচিবালয়ে সমসাময়িক ইস্যু নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ মন্তব্য করেন। ওবায়দুল কাদের বলেন, দেখুন আমি বিষয়টি অনলাইনে দেখেছি। আমি তখন সিঙ্গাপুরে ছিলাম। সে কারণে আমি সেইদিন সংসদে ছিলাম না। যারা এনকাউন্টারের পক্ষে বক্তব্য রেখেছেন আমার মনে হয় এটা তাদের ব্যক্তিগত মতামত। এটা সরকার ও আমাদের দলের কোনো বিষয় নয়। তিনি বলেন, ক্রসফায়ারকে তো আমরা সাপোর্ট করতে পারি না।
কারণ, এটা সংবিধানের আওতার বাইরে। এটা সংবিধানসম্মত নয়। ব্যক্তিগতভাবে কারও অভিমত থাকতে পারে। দ্যাট ইজ ডিফারেন্ট। একটি মামলায় ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র প্রার্থী ইশরাক হোসেনের বিচার শুরু হয়েছে। এটা আগে-পরে হতে পারত কি না- এ বিষয়ে মন্ত্রী বলেন, আগে-পরে হতে পারত কি না, আইন তো তার নিজস্ব গতিতে চলবে। এখানে আগে-পরের বিষয় নয়। বিষয়টি হয়তো ম্যাচিউরড হয়ে গেছে, সে কারণে এই সময়ে অভিযোগপত্র দেয়ার সময় হয়েছে। এটা দুদকের বিষয়, আপনি দুদক চেয়ারম্যানকে জিজ্ঞাসা করুন। বিএনপির প্রার্থীরা হামলা-মামলার অভিযোগ করে আসছে- এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে ওবায়দুল কাদের বলেন, হামলা-মামলার অভিযোগ তো আমাদের প্রার্থীরাও কোথাও কোথাও করছে। আমাদের প্রার্থীদের কাছ থেকেও অভিযোগ এসেছে। এ ব্যাপারে আমরা যথেষ্ট সতর্ক আছি। এখন তো নির্বাচন কমিশনই আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে নিয়ন্ত্রণ করবে। বিষয়টি নির্বাচন কমিশনের দেখা উচিত।
দুই দলের প্রার্থীরাই নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন করছেন। আপনি কী মনে করছেন এ ক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশন ব্যর্থ- আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, আমি ব্যর্থ কথাটা বলব না। আমি মনে করি, নির্বাচন কমিশনের আরো কঠোর হওয়া উচিত। ব্যবস্থা নেয়ার মতো ম্যাকানিজম তাদের কাছে আছে। কারণ, এখন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী অ্যাবসিলিউটলি তাদের কন্ট্রোলে। আচরণবিধি লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে কোনো প্রতিবন্ধকতা আছে বলে মনে করি না। এখানে সরকারের কোনো হস্তক্ষেপ নেই।
ঢাকার দুই সিটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের অনেক বিদ্রোহী প্রার্থী দেখা যাচ্ছে- এ বিষয়ে কাদের বলেন, ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণের কমিটি এবং নির্বাচন পরিচালনা কমিটি আছে, তারা স্বতন্ত্র ও বিদ্রোহী যারা আছেন তাদের নিয়ে বসছেন। এ ব্যাপারে একটা সিদ্ধান্ত তো আসবেই। এখন তো প্রত্যাহারেরও সুযোগ নেই-আমি সংবাদ সম্মেলন করে বললাম, আমি আর নির্বাচনে থাকছি না। তাহলে তো প্রত্যাহার হয়ে গেলো। গতবারের অনেক বিদ্রোহী প্রার্থী এবার মনোনয়ন পেয়েছেন- এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তিনি বলেন, সেটা আমাদের দলের অভ্যন্তরীণ ব্যাপার, সেটা আমাদের ওপর ছেড়ে দিন।
বিএনপির ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনের (ইভিএম) বিরোধীতার বিষয়ে কাদের বলেন, বিএনপি এনালগ বাংলাদেশে বিশ্বাসী, তারা ডিজিটাল বাংলাদেশ চায় না। এ কারণে তারা আধুনিক প্রযুক্তিতে বিশ্বাস করে না। আমরা মনে করি, এটা আধুনিক প্রযুক্তি। নির্বাচন কমিশন সরকারের নির্দেশ মতো কাজ করছে বলে বিএনপির দাবির বিষয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, প্রধান নির্বাচন কমিশন বা নির্বাচন কমিশনারদের আপনি জিজ্ঞাসা করতে পারেন। আমরা তো কোনো নির্দেশ দিচ্ছি না। আমরা তাদের পুরো স্বাধীনতা দিয়েছি। কর্তৃত্বপূর্ণ স্বাধীন ভূমিকা পালনে কোনো প্রকার বাধা সরকারের পক্ষ থেকে নেই। কোনো প্রকার বাড়াবাড়ি না করে সুষ্ঠু, অবাধ ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন করতে চান এটা প্রধানমন্ত্রী পরিষ্কারভাবে বলে দিয়েছেন।
ওবায়দুল কাদের বলেন, ঢাকা সিটি নির্বাচন বিষয়ে আদালতের রায় নিয়ে আমি প্রশ্ন নিতে চাই না বা আমি কোনো মন্তব্য করতে চাই না। বিষয়টি যেহেতু আদালত পর্যন্ত গড়িয়েছে, আর আদালত একটি নির্দেশনা দিয়েছেন; ফলে তা নির্বাচন কমিশনকে মেনে চলতে হবে। তিনি বলেন, হাইকোর্ট তো নিশ্চয়ই বাংলাদেশের জাতীয় স্বার্থের বাইরে কিছু ভাববেন না। নির্বাচন পেছানোর আবেদন হাইকোর্টে খারিজ করে দেয়ার বিষয়টি তারা অবশ্যই ভেবেচিন্তেই করেছেন। যেহেতু বিষয়টি কোর্ট পর্যন্ত গড়িয়েছে, তাই কোর্টের আদেশ মেনে চলা উচিত।