× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ২০ এপ্রিল ২০২৪, শনিবার , ৭ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১১ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

মোবাইল ফোনের জন্য খুন করা হয় হৃদয়কে

শেষের পাতা

রাশেদ আহমদ খান, হবিগঞ্জ থেকে
১৭ জানুয়ারি ২০২০, শুক্রবার

সদর উপজেলার উত্তর তেঘরিয়া গ্রামের স্কুলছাত্র ইসমাইল হোসেন হৃদয় হত্যার মূল রহস্য উদঘাটন করেছে পুলিশ। এ মামলার অন্যতম আসামি হত্যাকাণ্ডের মূলহোতা স্কুলছাত্র শাহরিয়ার মারুফ সাইমিন (১৫) দায় স্বীকার করে আদালতে লোমহর্ষক বর্ণনা দিয়েছে।

আদালতে সাইমিন জানায়, পার্শ্ববর্তী বাড়ির ইসমাইল হোসেন হৃদয়ের হাতে একমাস আগে একটি বিদেশি ক্যামেরা মোবাইলফোন দেখে সে। মোবাইলফোনটি তার বাবা বিদেশ  থেকে পাঠিয়েছেন। এ মোবাইলফোন নিয়ে নদীর পাড়ে তার সহপাঠীদের ছবি তোলে হৃদয়। এ দৃশ্য দেখে মোবাইলফোনটির প্রতি সাইমিনের প্রচণ্ড লোভ হয়। এ কারণে সে হৃদয়ের সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ে তুলে। একপর্যায়ে ১০ই জানুয়ারি বিকালে সাইমিন শহরের পোদ্দারবাড়ি এলাকায় নাটক দেখার জন্য হৃদয়কে প্রস্তাব দেয়।
তার মোবাইলফোন দিয়ে নাটকের ছবি ও ভিডিও করার পরামর্শ দেয়। এতে মোটা অঙ্কের টাকা পাওয়া যাবে বলেও লোভ দেখায় সাইমিন। এতে হৃদয় রাজি হয়। সে অনুযায়ী সাইমিন বিকাল ৪টার দিকে হৃদয়কে নিয়ে রওয়ানা হয়। তারা ধুলিয়াখাল-মিরপুর রোডের মশাযান ব্রিজের পর সিএনজি থেকে নামে। তাকে নিয়ে সাইমিন তার নানাবাড়ি চরহামুয়া নোয়াবাদ যাওয়ার কথা বলে নদীর বেড়িবাঁধ দিয়ে  যেতে থাকে। চলার পথে নদীর চরে সবজি ও শস্যক্ষেত দেখে নদীর ধারে গিয়ে ছবি তুলতে বললে হৃদয় নদীর কিনারায় যায়। এসময় ফিল্মি স্টাইলে সাইমিন কলাগাছের ছোলা দিয়ে হৃদয়ের দুই হাত সামনে দিয়ে বেঁধে ফেলে। এরপর পা দুইটিও বাঁধে। নদীর পাড়ে একটি বাঁশের মোড়া দিয়ে হত্যার উদ্দেশ্যে তার মাথায় উপর্যুপরি কয়েকটি আঘাত করে। এতে হৃদয় মারাত্মক আহত হয়ে নিস্তেজ হয়ে পড়ে। পরে হাত-পা বাঁধা অবস্থায় ধাক্কা দিয়ে খোয়াই নদীর পানিতে ফেলে দেয়। পরে দ্রুত  মোবাইলফোনটি নিয়ে নিজ বাড়িতে চলে যায় সাইমিন।

বুধবার সন্ধ্যায় পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে লোমহর্ষক হত্যাকান্ডের এসব বর্ণনা দেন পুলিশ সুপার মোহাম্মদ উল্লাহ। বুধবার বিকালে হবিগঞ্জের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট নূরুল হুদা চৌধুরীর আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে লোমহর্ষক হত্যাকাণ্ডের বর্ণনা  দেয় সাইমিন।

গত ১০ই জানুয়ারি উত্তর তেঘরিয়া গ্রামের সৌদি প্রবাসী ফারুক মিয়ার ছেলে পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র ইসমাইল হোসেন হৃদয় (১০)কে পোদ্দারবাড়ি এলাকায় নাটক দেখার কথা বলে বাড়ি  থেকে বের হয়। প্রতিবেশী শাহরিয়ার মারুফ ওরফে সাইমিন নাটক দেখানোর জন্য তাকে নিয়ে যায়। কিন্তু রাত ৮টা পর্যন্ত হৃদয় বাড়িতে ফিরে না আসায় তার মা বিষয়টি চাচাদের জানিয়ে হৃদয়ের সঙ্গে থাকা মোবাইলফোন নাম্বারে যোগাযোগের জন্য বলেন। বারবার তার মোবাইলফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তা বন্ধ পান পরিবারের সদস্যরা। আশেপাশে খোঁজাখুঁজি করেও তাকে না পেয়ে মা শাহেনা আক্তার সদর মডেল থানায় এসে একটি সাধারণ ডায়েরি করেন। বিভিন্ন পত্রিকায় নিখোঁজের সংবাদও ছাপা হয়।

মাইকিং করা হয়। ১৩ই জানুয়ারি সকাল ১০টায় সদর উপজেলার লস্করপুর ইউনিয়নের চরহামুয়া গ্রামের পাশে খোয়াই নদী থেকে তার লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। লাশের মাথায় একাধিক আঘাতের চিহ্ন দেখে এটি হত্যাকাণ্ড বলে নিশ্চিত হয় পুলিশ। এদিনই সাইমিনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করে পুলিশ। পরে নিহতের চাচা  মো. টেনু মিয়া বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে ১৪ই জানুয়ারি সদর মডেল থানায় হত্যা মামলা করেন। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা নিযুক্ত করা হয় সদর মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ মো. মাসুক আলীকে। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার  মো. রবিউল ইসলাম, তদন্তকারী অফিসারসহ পুলিশের একটি টিমের নিবিড় জিজ্ঞাসাবাদে সাইমিন হত্যাকাণ্ডের কথা স্বীকার করে। পরে বুধবার সন্ধ্যায় আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয় সে।

সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ সুপার মোহাম্মদ উল্ল্যাহ জানান, হৃদয়ের  মোবাইলফোনটি উদ্ধারের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। এ ঘটনায় আর কেউ জড়িত আছে কি-না তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. রবিউল ইসলাম, ডিআই-১ কাজী কামাল উদ্দিন, সদর মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ মো. মাসুক আলী, এসআই মো. সাহিদ মিয়া প্রমুখ।
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর