× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ১৬ এপ্রিল ২০২৪, মঙ্গলবার , ৩ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৭ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

শেয়ারবাজারে কেন মহা ধস

প্রথম পাতা

অর্থনৈতিক রিপোর্টার
১৭ জানুয়ারি ২০২০, শুক্রবার

শেয়ারবাজারে কেন বারবার টানা দরপতন হচ্ছে? এ প্রশ্ন এখন সর্বত্র। এ ছাড়া পতনের প্রবণতা দেখে অনেকেই বিস্মিত। তবে তারা মনে করেন, বিনিয়োগকারীদের আস্থা সংকট আর সুশাসনের অভাবে শেয়ারবাজারে এ দুরবস্থা দেখা দিয়েছে। তাদের মতে, অনেক সংস্কার হয়েছে। দেয়া হয়েছে বিভিন্ন প্রণোদনা ও প্রস্তাবনা। নেয়া হয়েছে এক গুচ্ছ উদ্যোগ। পদক্ষেপ নেয়া হয়। কিন্তু তা বাস্তবায়িত হয়নি।
অন্যদিকে ডিএসই ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) নেতৃত্বশূন্যতা নিয়ে দ্বন্দ্ব। এছাড়া গ্রামীণফোন এবং টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক সংস্থার দ্বন্দ্বের নিষ্পত্তির না হওয়া। বিদেশি বিনিয়োগকারীদের মধ্যে নেতিবাচক ধারণা জন্মেছে। যার প্রভাব বাজারে পড়ছে। ফলে বাজার বারবার টানা পতনের ধারায় চলে এসছে। তথ্যে দেখা গেছে, গত এক বছরেই ঢাকার শেয়ারবাজারের প্রধান সূচক কমেছে এক হাজার পয়েন্ট। আর বাজার মূলধন কমেছে ১ লাখ কোটি টাকা। এতে নাকাল হয়েছে বিনিয়োগকারীরা। পুঁজি হারিয়ে অনেকেই হয়েছেন নিঃস্ব।

এদিকে পুঁজিবাজারের চলমান সংকট নিরসনে অর্থমন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ব্যাংক ও বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিএমবিএ) বৈঠকে বসার সিদ্ধান্ত ও পুঁজিবাজারের তারল্য সংকট নিরসনে সরকারি ৪ ব্যাংকে বিনিয়োগের নির্দেশ দেয়া হয়। আর এমন খবর প্রকাশে বাজারে কিছুটা ইতিবাচক প্রভাব পড়ছে বলে মনে করছেন পুঁজিবাজার বিশ্লেষকরা।

এদিকে বাজার পরিস্থিতির উন্নতি চান ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের পরিচালনা পর্ষদ। তারা সম্প্রতি অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের সঙ্গে দেখা করে একগুচ্ছ প্রস্তাবনা দিয়েছেন। ডিএসইর প্রস্তাবনার মধ্যে রয়েছে পুঁজিবাজার থেকে দীর্ঘমেয়াদি অর্থায়নের ব্যবস্থা, রাষ্ট্রায়ত্ত কোম্পানির শেয়ার পুঁজিবাজারে আনা, বহুজাতিক কোম্পানিকে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত করতে উদ্বুদ্ধ করা। গ্রামীণফোন এবং বিটিআরসির মধ্যে দ্বন্দ্বের নিষ্পত্তি, ডিএসই ও পুঁজিবাজারের লেনদেনের ওপর কর হ্রাস, অডিট রিপোর্টের স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা। অর্থমন্ত্রী বলেন, বর্তমানে পুঁজিবাজারে কমপ্লায়েন্স অত্যন্ত দুর্বল। একে আরো কঠোর করতে হবে। শতভাগ কমপ্লায়েন্স হতে হবে। সরকারি কোম্পনিগুলোকে যত দ্রুত সম্ভব পুঁজিবাজারে আনা হবে। ডিএসইর এক পরিচালক বলেন, ডিএসইর তরফ থেকে যেসব প্রস্তাবনা দেয়া হয়েছে এর আলোকে ব্যবস্থা নেয়া হলে বাজার আগের অবস্থান ফিরে পাবে।

ডিএসই ও সিএসইতে নেতৃত্বশূন্যতা নিয়ে দ্বন্দ্ব: বাজার যখন চরম খারাপ অবস্থায়, তখন ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) নিয়োগ নিয়ে ডিএসইর পরিচালকদের মধ্যে দ্বিধাবিভক্তি দেখা দিয়েছে। সংস্থাটির একজন প্রভাবশালী সদস্য তার পছন্দের ব্যক্তিকে ওই পদে বসাতে অতীতের সব রীতিনীতি ভঙ্গ করেন। প্রভাবশালী ওই সদস্য ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশের (আইসিবি) সাবেক এমডি কাজী সানাউল হককে নিয়োগ দিতে যোগ্য অনেককে বাদ দেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এ নিয়ে পর্ষদ সভায় পরিচালকরা একমত হতে পারেননি। পরে সিদ্ধান্ত হয়েছে, সানাউল হকের বিষয়ে একাধিক পরিচালক যেসব পর্যবেক্ষণ তুলে ধরেছেন, তাসহ এমডি নিয়োগের অনুমোদনের বিষয়টি বিএসইসিতে পাঠানো হবে। এমডি নিয়োগকে কেন্দ্র করে ডিএসইর শেয়ারধারী চার পরিচালকের মধ্যে তিনজন রয়েছেন এক পক্ষে আর অন্য পক্ষে প্রভাবশালী ওই সদস্য। ডিএসইর পরিচালকদের এ দ্বন্দ্ব প্রকাশ্য রূপ নেয়ায় তা বিনিয়োগকারীদের মধ্যেও নেতিবাচক বার্তা চলে যাচ্ছে। যে ব্যক্তিকে নিয়ে ডিএসই দ্বিধাবিভক্ত, তিনি দায়িত্ব পেলে বাজারের উন্নয়নে কতটা কাজ করতে পারবেন, তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে। অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) এমডির পদটিও সাত মাসের বেশি সময় শূন্য রয়েছে। কয়েক দফায় বিজ্ঞাপন দিয়েও সংস্থাটি এমডি নিয়োগে ব্যর্থ হয়েছে। ফলে ভারপ্রাপ্ত এমডি দিয়ে চলছে উভয় প্রতিষ্ঠান।

জানা গেছে, ডিএসইর পক্ষ থেকে একদিকে ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে কাজী সানাউল হকের অনুমোদন চাওয়া, অন্যদিকে ডিএসই থেকেই নিয়োগ না দেয়ার পক্ষে যুক্তি তুলে ধরে চিঠি দেয়ায় নিয়ন্ত্রক সংস্থা অস্বস্তির মধ্যে পড়েছে।
প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা: এদিকে পতনের ধারা থেকে পুঁজিবাজারকে তুলতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপ চেয়েছেন জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য কাজী ফিরোজ রশীদ। বুধবার সংসদে অনির্ধারিত আলোচনায় এ প্রসঙ্গ তোলেন বিরোধী দলের এই সংসদ সদস্য।

পরে বিএনপির হারুনুর রশীদ বলেন, মন্ত্রীরা বিপর্যয় দেখতে পান না। গত এক সপ্তাহ ধরে মানুষ শেয়ারবাজারের জন্য রাস্তায় শুয়ে পড়েছে। কান্নায় বিপর্যস্ত। লাখ লাখ পরিবার ধুলায় মিশে যাচ্ছে। এ ব্যাপারে সরকার দৃশ্যমান কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে আমরা আশ্বস্ত হতে পারছি না। পরে পুঁজিবাজার নিয়ে কথা বলেন বিএনপির সংরক্ষিত আসনের সদস্য রুমিন ফারহানা।

বাজার বিশ্লেষক অধ্যাপক আবু আহমেদ বলেন, ব্যাংক খাতের তারল্য সংকটও শেয়ারবাজারে সমস্যা তৈরি করছে। গ্রামীণফোন, পিপলস লিজিংয়ের অবসায়ন, তিতাস গ্যাসের লভ্যাংশ ঘোষণার সীমা নিয়ন্ত্রক সংস্থার বেঁধে দেয়ার ইস্যুতে বিদেশি বিনিয়োগকারীসহ দেশি বিনিয়োগকারীরা নতুন বিনিয়োগে আগ্রহ হারিয়েছেন। প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ না থাকায় দরপতন ব্যাপকতা পাচ্ছে বলে তিনি মনে করেন।

বাজার পর্যলোচনা: এদিকে গতকাল ডিএসইতে সপ্তাহের শেষ কর্মদিবস মূল্য সূচকের বড় উত্থানে লেনদেন শেষ হয়েছে। এদিন ডিএসই প্রধান বা ডিএসইএক্স সূচক ৮১ পয়েন্ট বেড়ে অবস্থান করছে ৪ হাজার ১৪৯ পয়েন্টে। ডিএসইতে ২৬৭ কোটি ৪৯ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। যা আগের দিনের চেয়ে ২৪ কোটি ৬৬ লাখ টাকা বেশি। আগের দিন লেনদেনের পরিমাণ ছিল ২৪২ কোটি ৮২ লাখ টাকা। অপর বাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের সার্বিক সূচক বেড়েছে ২৩০ পয়েন্ট। এদিন উভয় বাজারে লেনদেনও সামান্য বেড়েছে।
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর