জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি) শিক্ষার্থীদের দীর্ঘ আন্দোলনের পর ক্যাম্পাসের দ্বিতীয় ফটক অবৈধ দখল মুক্ত হলেও এখনো লাগানো হয়নি লৌহার ফটক । এমনকি সেখানে নিরাপত্তার জন্যেও নেই কোনো সিসি ক্যামেরা। সন্ধ্যার পর একমাত্র নাইট গার্ডই ভরসা। যার কারণে ঘটছে নানা ধরণের অপ্রীতিকর ঘটনা। সরজমিন দেখা যায়, দ্বিতীয় ফটকে কোন ধরনের লৌহ কপাট না থাকায় অনায়াসেই যে কেউ ঢুকতে পারছেন ক্যাম্পাসে। এতে ক্যাম্পাসের সার্বিক নিরাপত্তা বিঘ্নিত হচ্ছে। ফলে, বেড়েছে শিক্ষার্থীদের মালামাল ছিনতাই হওয়ারও সম্ভাবনা। কিছুদিন আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের এই গেট দিয়ে প্রায় ১০-১৫টি সাইকেল ও মটর বাইক চুরি হয়েছে।
এছাড়াও ফটকের অদূরে এখনো বাহাদুর শাহ পরিবহনের গাড়িগুলো যাত্রী উঠা নামা করছে। এতে লেগে থাকে সার্বক্ষণিক যানজট। এ কারণে শিক্ষার্থীরা দ্বিতীয় ফটকে চলাচল সুবিধা ঠিকমতো পাচ্ছে না। দ্বিতীয় ফটকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশ কয়েকটি বাস য় রাখা হয়। এই ফটক দিয়ে চলাচল কারী উল্কা-৩ বাসের সোহেল রানা বলেন, আমরা এই ফটকটি উদ্ধার করেছিলাম যাতে বিশ্ববিদ্যালয়ে সাবলীলভাবে ঢোকার মতো কিছু সুবিধা পাই। কিন্তু এখনো বেশ কিছু সীমাবদ্ধতা থাকায় আমরা কাঙ্খিত সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছি। এছাড়া লোহার গ্রিল না থাকায় সেখান থেকে সহজেই বাইরের লোকজন ঢুকে যায় ক্যাম্পাসে। এতে অরক্ষিত হয়ে পড়েছে আমাদের ক্যাম্পাসের নিরাপত্তা ব্যবস্থা, এজন্য প্রশাসনকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা করতে হবে। ব্যবস্থাপনা বিভাগের আরেক শিক্ষার্থী বলেন, ফটকটিতে প্রতিশ্রুতি মোতাবেক যতদ্রুত সম্ভব লৌহ ফটক লাগিয়ে ক্যাম্পাসের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা উচিৎ প্রশাসনের। অনুসন্ধানে জানা যায়, দীর্ঘদিন যাবৎ নতুন ভবন মেরামতের নামে জবির এই গেটটি ছিল সম্পূর্ণ অব্যবহৃত। এতে করে গেটের সামনেই অবস্থিত ‘বাহাদুর শাহ’ লেগুনা স্ট্যান্ডের বাস পার্কিং এর অভয়ারণ্যে পরিণত হয়েছিল যায়গাটি। এই যায়গায় দিনে-দুুপুরেও শিক্ষার্থীদের বিশেষ করে ছাত্রীদের যাওয়ার উপযুক্ত পরিবেশ ছিল না একেবারেই। দীর্ঘদিন ধরে শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে মানববন্ধন, স্মারক-লিপি ও নানা আন্দোলনের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে দ্বিতীয় গেট উন্মূক্ত করনের দাবি জানিয়ে আসছিলো। আশানুরূপ ফল না পেয়ে গত ১৭ই সেপ্টেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারন শিক্ষার্থীরা মিছিল নিয়ে ঝালাইকৃত টিনসমেত বন্ধ কপাট ভেঙে গেটটি উন্মূক্ত করে। এবং গেইট দখল করে দীর্ঘদিন ধরে থাকা অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করে। পরে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সহায়তায় এই গেটের সামনে অবস্থিত লেগুনা স্ট্যান্ড ও ২৫ টির বেশী টং দোকান অপসারন করা হয়। এসময় আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা নতুন লৌহ কপাট নির্মাণ করে গেটে লাগানোর দাবি তুললে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে ১ মাসের মধ্যে গেটের সাথে গ্রীল লাগানোর প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়। কিন্তু চলতি বছরের ১৭ই জানুয়ারি ৪ মাস কেটে গেলেও বাস্তবায়নের মুখ দেখেনি শিক্ষার্থীরা। এ বিষয়ে দ্বিতীয় ফটক উন্মূক্তকরণের সাথে প্রত্যক্ষভাবে অংশগ্রহনকারী শিক্ষার্থী তাওসিব মাহমুদ সোহান জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক নিরাপত্তার সাথে জড়িত এমন বিষয়ে প্রশাসনের এই ঢিলেমি হতাশাজনক। এই চার মাসের মধ্যে আমরা পুনর্বার স্মারকলিপি দিয়েও কোন কার্যকরী প্রতিফলন পাইনি, আমরা আশা করবো প্রশাসন অনতিবিলম্বে ব্যবস্থা গ্রহন করবে। এবিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টর মোস্তফা কামালের কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তাজনিত যে কোন বিষয়ে আমরা সজাগ দৃষ্টি রাখি। খুব দ্রুতই আমরা নতুন ফটক লাগানোর ব্যাপারে কাজ করবো।