রাজধানীর তেজগাঁওয়ে রেজিস্ট্রেশন কমপ্লেক্সে রহস্যজনক চুরির ঘটনায় ভূমিখেঁকো চক্রকে সন্দেহের মধ্যে রেখেছে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী। এ ঘটনায় মামলা হলেও এখন পর্যন্ত কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ। নিরাপত্তা প্রহরী বেষ্টিত এমন একটি সুরক্ষিত কমপ্লেক্সে দুর্বৃত্তরা রেজিষ্টার অফিসের মূল্যবান দলিল ও বালাম বই চুরি করেছে। শুধু তাই নয়, তারা শুধু কম্পিউটারের হার্ডডিক্স চুরি করেনি তারা ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরার ফুটেজও নিয়ে গেছে, যাতে তাদের চিহ্নিত না করা যায়। যেসব কম্পিউটারের হার্ডডিক্স চুরি হয়েছে সেইগুলোতে উত্তরা, বাড্ডা ও পূর্বাচলের জমির খতিয়ান ও রেজিস্ট্রির তালিকা রয়েছে। এর আগে ২০১৭ ও ২০১৮ সালে এমন ঘটনা ঘটেছে। ওই চুরির বিষয়টিকে শক্তভাবে আমলে নেয়নি কর্তৃপক্ষ। এজন্য আবারও চুরির ঘটনা ঘটেছে।
আইন শৃঙ্খলা বাহিনী বলছে, এবারের চুরির ঘটনাটি মনে হয়েছে পরিকল্পিত। এতে অফিসের নিরাপত্তা প্রহরী, কর্মচারী ও কর্মকর্তারাও সন্দেহের মধ্যে আছেন। বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে আমলে নিয়েছে তদন্তকারীরা। পুলিশের পাশাপাশি ডিবিসহ অন্যান্য সংস্থাও তদন্ত শুরু করেছে। তারা আশা করেছেন, দ্রুত চোরদের চিহ্নিত করা হবে এবং তাদের আইনের আওতায় আনা হবে। ইতিমধ্যে সিআইডির ক্রাইম সিনের সদস্যরা সেখান থেকে কিছু আলামত সংগ্রহ করেছেন। বুধবার সন্ধ্যা থেকে বৃহস্পতিবার ভোরের যে কোনো সময়ে এই চুরির ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় বৃহস্পতিবার রাতে বাদী হয়ে বাড্ডা রেজিষ্টার অফিসের সাব রেজিস্ট্রার মনিরুল ইসলাম তেজগাঁও শিল্পাঅঞ্চল থানায় একটি মামলা করেছেন। মামলা নম্বর-২৪। মামলার এজাহারে অভিযোগ আনা হয়েছে যে, কমপ্লেক্সের দ্বিতীয়, তৃতীয় তলা ও চতুর্থ তলার গ্রীল ভেঙ্গে দুর্বৃত্তরা অফিসের মূল্যবান শত শত দলিল, বালাম বই, কম্পিউটারে হার্ডডিক্স ও সিসি ক্যামেরার ফুটেজ চুরি করে নিয়ে গেছে। এ বিষয়ে পুলিশের তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল জোনের এসি এম এম মইনুল ইসলাম মানজমিনকে জানান, ‘বৃহস্পতিবার রাতে মামলা হয়েছে। বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করা হচ্ছে। তবে এখন পর্যন্ত কাউকে গ্রেপ্তার বা নথিপত্র উদ্ধার করা যায়নি।
মামলার তদন্তের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানার এক কমকর্তা জানান, ভবনটির নিরাপত্তা প্রহরীদের গাফিলতি রয়েছে। সেখানে যেই সেই ঢুকতে পারেন। এবার যেভাবে চুরি হয়েছে তাতে মনে হয়েছে যে, দুর্বৃত্তরা একাধিকবার কমপ্লেক্সে এসে রেকি করে গেছে। এই চুরির সঙ্গে ভূমি ব্যবসায়ীদের শক্তিশালী একটি সিন্ডিকেট জড়িত রয়েছে। উত্তরা ও বাড্ডা এলাকার ২০০৬ সালের পর সম্পন্ন হওয়া দলিলগুলো টার্গেট ছিল চোর চক্রের। সূত্র জানায়, ২০১৬ সালের নভেম্বরে এবং ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে রেজিস্ট্রেশন কমপ্লেক্সে দুই দফা চুরি হয়। ওই দফায় বাড্ডা ও উত্তরা সাব-রেজিষ্ট্রি অফিসে চুরি হয়। বালাম বই ও কয়েক হাজার দলিল চুরি হয়। ওই দুই ঘটনার কোন কুল কিনারা হয়নি। পরবর্তীতে চুরি ঠেকাতে ভবনের বিভিন্ন অংশে ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরা বসায় কর্তৃপক্ষ। এবার সেই ক্যামেরা ও সিসি ক্যামেরার ভিডিও ফুটেজ সংরক্ষণ করা কম্পিউটারের হার্ডডিস্কও নিয়ে গেছে দুর্বৃত্তরা। তদন্তকারীরা বলছেন, উত্তরা ও বাড্ডা, পূর্বাচল একটি ভূমিখেকো গোষ্ঠী নিরীহ লোকজনের ভূমি দখলের জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছে। কিন্তু, ওইসব জমির বৈধ নথি থাকার কারণে তারা দখল করতে পারেনি। চক্রটি ভাড়া করা চোরদের দিয়ে পরিকল্পিতভাবে কমপ্লেক্সে চুরির ঘটনা ঘটিয়েছে বলে ধারণা তাদের। সূত্র জানায়, এ ঘটনার সন্দেহের বাইরে নেই অফিসের নিরাপত্তা প্রহরী কর্মকর্তা ও কর্মচারীরাও। তাদের গতিবিধি নজরদারিতে রয়েছে। এছাড়াও তাদের মোবাইল কললিস্টও পরীক্ষা নিরীক্ষা করা হচ্ছে।