২০০৮-এ শেষ পাকিস্তান সফরে ছিলেন মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ। এরপর বাংলাদেশ আর পাকিস্তান সফরে যায়নি। যদিও রিয়াদ পাকিস্তান ক্রিকেট লীগে খেলতে সেখানে গিয়েছিলেন ২০১৭তে। তবে এবার জাতীয় দলের নেতৃত্ব দিতে যাচ্ছেন তিনি। গতকাল টি-টোয়েন্টি সিরিজে তাকে অধিনায়ক করে দল ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। ১১ বছর আগের সেই দলের আরেক সদস্য তামিম ইকবালও আছেন বর্তমান দলে। অভিজ্ঞদের সঙ্গে আছেন এই প্রজন্মের বেশ কয়েকজন তরুণ ক্রিকেটারও। এদের মধ্যে চমকের নাম হাসান মাহমুদ।
সব কিছু ঠিক থাকলে ২২শে জানুয়ারি পাকিস্তানের উদ্দেশে দেশ ছাড়বে বাংলাদেশ দল। এক কথায় রিয়াদের দলের সামনে এখন পাকিস্তান ভয় জয় করার মিশন। বেশি আলোচনায় সেখানকার নিরাপত্তা পরিস্থিতি। আর তা বিবেচনা করে সফর থেকে নিজের নাম প্রত্যাহার করে নিয়েছেন দেশের সবচেয়ে অভিজ্ঞ উইকেট-রক্ষকব্যাটসম্যান মুশফিকুর রহীম। দল নিয়ে প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদিন নান্নু বলেন, ‘আমাদের চেষ্টা ছিল যতটা সম্ভব অভিজ্ঞ দল দেয়ার। আশা করছি তারা সব চাপ উড়িয়ে ভালো খেলবে। অবশ্যই আমরা বিপিএলে যারা ভালো করেছে তাদের দিকেই নজর দিয়েছি। সেই হিসেবেই দল সাজিয়েছি।’
নেই ইমরুল তবে আছেন ৬ ওপেনারপাকিস্তান সফর দিয়ে জাতীয় দলে ফিরছেন দেশসেরা ওপেনার তামিম ইকবাল। ইংল্যান্ড বিশ্বকাপ থেকে ফিরে তার নেতৃত্বে শ্রীলঙ্কা সফরে গিয়েছিল বাংলাদেশ দল। কিন্তু সেখান থেকে ব্যর্থ হয়ে ফিরে স্বেচ্ছায় বিশ্রামে যান তামিম। খেলেননি দেশের মাটিতে আফগানিস্তানের বিপক্ষে সিরিজে। যাননি ভারত সফরেও। ইনজুরি, ফর্মহীনতা, পারিবারিক সমস্যা কাটিয়ে ফিরেছেন বিপিএলে। ব্যাট হাতে রানও পেয়েছেন ঢাকা প্লাটুনের হয়ে। ১২ ম্যাচে ৩ ফিফটিতে করেছেন ৩৯৬ রান। দলে জায়গা করে নিয়েছেন আরো পাঁচ ওপেনার লিটন কুমার দাস, সৌম্য সরকার, নাঈম শেখ, আফিফ হোসেন ও নাজমুল হোসেন শান্ত। এই পাঁচজনই ব্যাট হাতে ওপেন করতে নেমে সফল ছিলেন সদ্য সমাপ্ত বঙ্গবন্ধু বিপিএলে।
তবে শান্তর দলে সুযোগ পাওয়াটা অনেকটাই ভাগ্য প্রসূত। বিপিএলে চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সের হয়ে ৪৪২ রান করা ইমরুল কায়েস হঠাৎ পড়েছেন ইনজুরিতে। তাই সুযোগটা এসেছে শান্তর। প্রধান নির্বাচকও জানিয়েছেন এমনটা। নান্নু বলেন, ‘সাকিব নেই, এ সফরে মুশফিককেও পাওয়া যাবে না। মিডল অর্ডারে অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যানের অভাব। তাই ঐ জায়গায় ইমরুল কায়েসই ছিল আমাদের ‘ফার্স্ট চয়েজ’। কিন্তু তার তো হ্যামস্ট্রিং ইনজুরি। সে কারণেই আমরা নাজমুল হোসেন শান্তকে বিবেচনায় এনেছি।’ তার মানে শান্ত হচ্ছেন মিডল অর্ডারে ভরসা, ওপেনিংয়ে নয়। এছড়াও মিডল অর্ডারে অভাব মেটোনোর জন্য দলে রাখা হয়েছে মোহাম্মদ মিঠুনকেও। এই বিপিএলে যদিও তার পাফরম্যান্স আহামরি ছিল না। প্রথম ম্যাচে সিলেট থান্ডার হয়ে প্রথম ম্যাচে ঝড়ো ফিফটি তুলে নিলেও আর ঝলক দেখাতে পারেননি।
পেস বিভাগেও বিপিএলের পারফরমার ও অভিজ্ঞরা সুযোগ পেয়েছেন। তবে চমক হিসেবে রাখা হয়েছে হাসান মাহমুদকে। দেশসেরা পেসার মোস্তাফিজ শুরুটা ভালো না করলেও শেষ পর্যন্ত ২০ উইকেট নিয়ে তিনি ছিলেন শীর্ষে। সমান ২০ উইকেটের মালিক রুবেল হোসেনও। ৯ উইকেট পাওয়া শফিউল ইসলামের ওপরও ভরসা রেখেছেন নির্বাচকরা। আছেন সর্বশেষ ভারত সফরে তিন বছর পর জাতীয় দলে ফেরা পেসার আল আমিন হোসেনও। হাসান মাহমুদকে নিয়ে প্রধান নির্বাচক বলেন, ‘অভিজ্ঞ চার পেসার দলে আছে। আর হাসান মাহমুদ আমাদের এইচপি ছাড়াও বয়সভিত্তিক সব দলে দারুণ করেছে। এবার বিপিএলেও ওর পারফরম্যান্স দেখেন। আর ভারতে আল আমিন সুযোগ পেয়ে দারুণ বল করেছে।’
স্পিনে আস্থা মেহেদী-বিপ্লবেস্পিন আক্রমণে আস্থা রাখা হয়েছে তরুণ লেগি আমিনুল ইসলাম বিল্পবে। আছেন মেহেদী হাসান। তবে তার দলে জায়গা পাওয়া অলরাউন্ডার হিসেবেই। ২০১৮তে বাংলাদেশের হয়ে একটি টি-টোয়েন্টি খেলেছেন শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সিলেটে। এরপর আর জায়গা হয়নি। তবে জাতীয় এইচপি এবং ‘এ’ দলে খেলছেন নিয়মিতই। এবার বিপিএলে অফ স্পিনে ১২ উইকেট নিয়েছেন ওভারপ্রতি মাত্র ৬.৭৬ রান দিয়ে। ব্যাট হাতে ৩ ফিফটিতে ২৫৩ রান করেছেন ১৩৬.০২ স্ট্রাইক রেটে। তাকে নিয়ে জাতীয় দলের আরেক নির্বাচক হাবিবুল বাশার বলেন, ‘আমরা মিরাজকে বিবেচনাতে নেইনি। কারণ আমাদের কাছে মনে হয়েছে মেহেদী বেশ কিছুদিন থেকে ভালো খেলছে। যেটা মিরাজ পারছে না।’
বাংলাদেশ টি-টোয়েন্টি দলমাহমুদুল্লাহ রিয়াদ (অধিনায়ক), তামিম ইকবাল, সৌম্য সরকার, নাঈম শেখ, নাজমুল হোসেন শান্ত, লিটন কুমার দাস, মোহাম্মদ মিঠুন, আফিফ হোসেন, মেহেদী হাসান, আমিনুল ইসলাম বিপ্লব, মোস্তাফিজুর রহমান, শফিউল ইসলাম, আল আমিন হোসেন, রুবেল হোসেন ও হাসান মাহমুদ।