× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, বৃহস্পতিবার , ১২ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৬ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

প্রতিদিনই ঘটছে দুর্ঘটনা কী হলো চট্টগ্রামে?

দেশ বিদেশ

ইব্রাহিম খলিল, চট্টগ্রাম থেকে
১৯ জানুয়ারি ২০২০, রবিবার

প্রতিদিনই ঘটছে সড়ক দুর্ঘটনা। যার অধিকাংশই ঢাকা-চট্টগ্রাম ও চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কে। একের পর এক সড়ক দুর্ঘটনা ভাবিয়ে তুলছে সবাইকে। পরিসংখ্যান মতে, চলতি বছরের ৩রা থেকে ১৭ই জানুয়ারি পর্যন্ত প্রতিদিন সড়ক দুর্ঘটনায় আহত ও নিহতের ঘটনা ঘটেছে চট্টগ্রামে। এতে ৩০ জন নিহত ও ২৩ জন আহত হয়েছেন। সর্বশেষ ১৭ই জানুয়ারি চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের পটিয়া উপজেলার শান্তিরহাট এলাকায় দুই বাসের মুখোমুখি সংঘর্ষে স্বামী-স্ত্রীসহ তিনজন নিহত হন। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন এক শিশুসহ আরো পাঁচজন। নিহতরা হলেন, কক্সবাজার চকরিয়া থানাধীন কৈয়ারবিল গ্রামের সাজ্জাদ হোসেনের ছেলে জাহিদ হোসাইন (৪২) ও তার স্ত্রী নিগার সুলতানা (৩০), নোয়াখালী জেলার সোনাইমুড়ী উপজেলার মৃত কোরবান আলীর ছেলে ওমর ফারুক (৪০)।
এদের মধ্যে ওমর ফারুক ও জাহিদ দু’জনেই ব্যবসায়ী। আর জাহিদের স্ত্রী নিগার সুলতানা নগরীর চিটাগাং গ্রামার স্কুলের শিক্ষিকা। আহতরা হলেন, বাপ্পি গুপ্ত (৪৮), নিলু আক্তার (৪৫), নুরুল হক (৫৫), মিথিলা আক্তার (১১) ও আব্দুল কাদের (৩০)।
পটিয়া হাইওয়ে পুলিশের ওসি বিমল চন্দ্র ভৌমিক জানান, শুক্রবার সকালে কক্সবাজার ছেড়ে আসা চট্টগ্রামমুখী শ্যামলী পরিবহনের চেয়ারকোচ (ঢাকা মেট্রো ব-১৫-১৬২৪) পটিয়া শান্তিরহাট এলাকায় পৌঁছালে বিসমিল্লাহ পরিবহন নামের একটি লোকাল বাস (চট্টমেট্রো ব-১১-০১৩৩) ওভারটেক করার সময় মুখোমুখি সংঘর্ষ ঘটে। এতে দুটি বাসের সামনের অংশ দুমড়ে-মুচড়ে যায়। পরে স্থানীয় লোকজন ও পটিয়া ফায়ার সার্ভিস এবং হাইওয়ে পুলিশ এসে আহতদের উদ্ধার করে। এদিকে শুক্রবার সকালে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের মিরসরাইয়ের মস্তাননগর এলাকায় দ্রুতগামী একটি গাড়ির ধাক্কায় পারভীন আক্তার (৪২) নামে এক নারী নিহত হন। বাবার বাড়ি থেকে স্বামীর বাড়িতে যাওয়ার পথিমধ্যে মহাসড়ক পারাপারের সময় এ দুর্ঘটনা ঘটে। অপরদিকে একইদিন সকাল ১১টার দিকে বারইয়ারহাট-খাগড়াছড়ি সড়কে বালুবাহী পিকআপ ভ্যানের ধাক্কায় সিএনজিচালিত অটোরিকশা যাত্রী আবদুল্লাহ আল নোমান (২৫) নিহত হন। এর আগের দিন ১৬ই জানুয়ারি বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১১টার দিকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের মিরসরাইয়ে বারইয়ারহাট পৌরসদরে আনন্দ সুপার নামের একটি মিনিবাস চাপায় এক কলেজছাত্র নিহত হয়। তার নাম আবু সাঈদ (১৯)। সে উপজেলার বারইয়ারহাট ডিগ্রি কলেজের একাদশ শ্রেণির প্রথমবর্ষ ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগের ছাত্র। আবার ১৫ই জানুয়ারি চট্টগ্রাম-কাপ্তাই সড়কে বাসের ছাদ থেকে পড়ে দুই তরুণ নিহত হন। নিহতরা হলেন মো. রাকিব (১৮) ও গিয়াস উদ্দিন (১৮)। এ ঘটনায় রাকিবের আরেক বন্ধু মো. আলী (১৯) আহত হন। এর আগে ১৪ই জানুয়ারি মঙ্গলবার সকালে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে সীতাকুণ্ডের বাড়বকুণ্ডে একটি ফিলিং স্টেশনের সামনে নিজের গাড়ির চাকায় পিষ্ট হয়ে টাঙ্গাইল জেলার ধনবাড়ী থানার রূপশান্তি গ্রামের ইদ্রিস আলীর ছেলে মো. হাবেল (২৪) নিহত হন। ১৩ই জানুয়ারি সাতকানিয়া উপজেলার কেরানিহাট এলাকায় চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কে মাহেন্দ্র গাড়ি থেকে পড়ে কক্সবাজারের জামতলী রোহিঙ্গা ক্যামেপর আবদুল গফুরের ছেলে নুরুল আমিন (৩৫) নিহত হন।
১২ই জানুয়ারি সীতাকুণ্ডের ফৌজদারহাট বন্দর সংযোগ সড়কে গাড়ির ধাক্কায় নিহত হন এক পুলিশ সদস্যসহ দুই মোটরসাইকেল আরোহী। নিহত পুলিশ কনস্টেবল মো. আলমগীর হোসেন (২৪) চট্টগ্রাম রেঞ্জের পুলিশের উপ-মহাপরিদর্শকের (ডিআইজি) প্রোটোকলে নিয়োজিত ছিলেন। তিনি কুমিল্লা থেকে চট্টগ্রামে ফেরার পথেই দুর্ঘটনার শিকার হন। দুর্ঘটনায় অন্যজনের নাম শহিদুল ইসলাম (২৭)। দু’জনের বাড়ি কুমিল্লায়। বারআউলিয়া হাইওয়ে থানার সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) মো. শফিউল্লাহ জানান, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক থেকে বন্দরের দিকে ঘোরার সময় ঢাকামুখী অজ্ঞাত একটি গাড়ি নিহতদের মোটরসাইকেলকে ধাক্কা দিলে এই নিহতের ঘটনা ঘটে। ১১ই জানুয়ারি পাঁচলাইশ থানার মোহাম্মদপুর এলাকায় এস আলম পরিবহনের একটি বাসের নিচে চাপাপড়ে আরব-বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন কর্মকর্তা নিহত হন। নিহত মোকাম্মেল হক চৌধুরী (৫০) ওই ব্যাংকের এক্সিকিউটিভ অফিসার পদে কর্মরত ছিলেন। তিনি চট্টগ্রামের সাতকানিয়া উপজেলার বাজালিয়া এলাকার মোস্তাফিজুর রহমানের ছেলে। ১০ই জানুয়ারি রাতে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সীতাকুণ্ড কুমিরা গুল আহম্মদ জুটমিল গেট ও ফকিরহাট এলাকায় দুটি দুর্ঘটনায় মিরসরাই উপজেলার সমিতিরহাট এলাকার মেজবাহ উদ্দিন (৩৫) ও সীতাকুণ্ডের সলিমপুর ইউনিয়নের জঙ্গল লতিফপুর এলাকার মো. আবদুল্লাহ (৩৩) নিহত হন। অপর নিহত নারীর (৩০) পরিচয় জানা যায়নি। আহত হন দুই শিশুসহ ৫ জন।
অন্যদিকে, শুক্রবার রাত ৮টার দিকে ঢাকামুখী একটি প্রাইভেটকার গুল আহম্মদ এলাকায় পৌঁছলে নাহিদ নামে এক শিশু গাড়িটির সামনে দিয়ে দৌড় দেয়। তাকে রক্ষা করতে গিয়ে ব্যক্তিগত প্রাইভেটকারটি সড়ক বিভাজকের সঙ্গে ধাক্কা দিয়ে উল্টো লেন পরিবর্তন করে চট্টগ্রামমুখী লেনে গিয়ে পড়ে। এতে ট্রাকচাপায় প্রাইভেটকারে থাকা দুই যাত্রীসহ তিনজন আহত হন। এর আগে ৩ থেকে ৯ই জানুয়ারি পর্যন্ত ৭ দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছে ১১ জন। আহত হয়েছে ৯ জন। তবে সবচেয়ে বড় মর্মান্তিক দুর্ঘটনাটি ঘটে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সীতাকুণ্ডের ছলিমপুরস্থ ফৌজদারহাট-বন্দর সংযোগ সড়কে। এ দুর্ঘটনায় নিহত হন-বাংলাদেশ ব্যাংকের যুগ্ম পরিচালক সাইফুজ্জামান মন্টু ও তার দুই মেয়ে তাসফিয়া (১৪) ও তাসরিন (১২)। এ দুর্ঘটনায় তার স্ত্রী কনিক আক্তার (৩৫) ও ১০ বছরের শিশুপুত্র মন্টি গুরুতর আহত হয়ে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। গত ২৮শে ডিসেম্বর সকাল ৮টার দিকে এই দুর্ঘটনা ঘটে। পর্যালোচনায় দেখা যায়, এসব দুর্ঘটনা লক্করঝক্কড় বা ভাঙাচোরা সড়কের কারণে ঘটেনি। অধিকাংশ দুর্ঘটনা ঘটেছে চালকের বেপরোয়া গাড়ি চালানোর কারণে। ১৯টি দুর্ঘটনার মধ্যে ১৬টি দুর্ঘটনা ঘটেছে মুখোমুখি সংঘর্ষ ও গাড়ির ধাক্কায়। দুটি দুর্ঘটনা ঘটেছে রাস্তা পারাপারের সময়। একটি বাসের ছাদ থেকে পড়ে। ফলে দুর্ঘটনা কমাতে চালকদের গতি নিয়ন্ত্রণ ও সচেতনতা জরুরি বলে মনে করছেন সচেতন মহল।
চট্টগ্রাম জেলা যাত্রী কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোজাম্মেল হক চৌধুরীও মনে করছেন তাই। তিনি বলেন, ঢাকা-চট্টগ্রাম ও চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কে এখন ভাঙাচোরা কোনো গর্ত নেই। সড়ক খুব সুন্দর। তবুও কেন বাড়ছে দুর্ঘটনা। তিনি বলেন, একের পর এক দুর্ঘটনায় চট্টগ্রামের মানুষকে ভাবিয়ে তুলেছে। সড়ক দুর্ঘটনার ভয়ে যাতায়াতেও নিয়ন্ত্রণ এসেছে। সবমিলিয়ে সড়ক দুর্ঘটনার ট্রমাই ভুগছেন চট্টগ্রামের লোকজন। এতে চট্টগ্রামের ব্যবসা বাণিজ্যেও স্থবিরতা নেমে এসেছে।
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর