পর্দা নামলো অষ্টাদশ ঢাকা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের। গতকাল বিকেলে উৎসবের সমাপনী দিনে জাতীয় যাদুঘরের প্রধান মিলনায়তনে উপস্থিত ছিলেন অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, বিশেষ অতিথি সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ, অনুষ্ঠানের সভাপতি ও উৎসব কমিটির নির্বাহী সদস্য ম. হামিদ, উৎসব পরিচালক আহমেদ মুজতবা জামাল। অনুষ্ঠানের শুরুতেই ‘সাত সখীরে পার করিতে নিব আনা আনা’ গানের মাধ্যমে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান শুরু হয়। এরপর মঞ্চে ডাকা হয় ভারতীয় সংগীতশিল্পী ও নির্মাতা অঞ্জন দত্তকে। তিনি সবার অনুরোধে ‘পুরানো সেই দিনের কথা ভুলবি কি রে হায়’ শিরোনামের রবীন্দ্রসংগীত এবং ‘চাকুরীটা আমি পেয়ে গেছি বেলা শুনছো’ গানগুলো গেয়ে শোনান। এরপর স্বাগত বক্তব্যে উৎসব পরিচালক আহমেদ মুজতবা জামাল বলেন, নয় দিন আগে এখানেই শুরু করেছিলাম বসনিয়ার নির্মাতা এবং চলচ্চিত্র উৎসব সংগঠক হারিস পাসোভিককে উদ্ধৃতি করে। বলেছিলাম এই উৎসব নিয়ে আমাদের নিরন্তর যুদ্ধের কথা। অষ্টাদশ ঢাকা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের আজ বিদায়ক্ষণে আমি দুই-একটা প্রাপ্তির কথাও বলতে চাই।
আমরা এই উৎসবের মধ্য দিয়ে শিল্প ও মানবতা উদযাপন করি। আর সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী উপস্থিত আছেন। তার মাধ্যমে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়কে ধন্যবাদ জানাতে চাই। কারণ এবারের উৎসবে তিন লাখ টাকার অনুদান পেয়েছি আমরা। এছাড়া ‘উনবিংশ ঢাকা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব-২০২১’ আগামী বছর ১৬ থেকে ২৪শে জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হবে বলেও ঘোষণা করেন তিনি। অনুষ্ঠানের বিশেষ অতিথি সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ বলেন, একটা সময় পরিবারসহ সকলে মিলে চলচ্চিত্র দেখার একটি বিশেষ আনন্দ ছিল। এখন ভালো কলাকুশলী তৈরি হচ্ছে না তেমন। সিনেমা হলও বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। খারাপ একটা সময় পার করছি আমরা। তাই সরকারী উদ্যোগে চলচ্চিত্রের ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনার জন্য দেশের প্রতিটি উপজেলায় সিনেপ্লেক্স নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। অনুষ্ঠানে তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন। ‘লোকনাথ’ ছবির জন্য বেস্ট চিলড্রেন ফিল্ম বাদল রহমান পুরস্কার জিতেন ইরানের নির্মাতা মোহাম্মদ হাজি গোলামি। ‘ফাইনালি ভালোবাসা’ ছবির জন্য বেস্ট অডিয়েন্স পুরস্কার পান ভারতের অঞ্জন দত্ত। বাংলাদেশ প্যানোরমা বিভাগে সেরা চলচ্চিত্র হিসেবে ‘ন ডরাই’ সিনেমার জন্য পুরস্কার গ্রহণ করেন তানিম রহমান অংশু ও ছবির প্রযোজক মাহবুব রহমান। উইমেন ফিল্ম মেকার সেকশনে মেক্সিকোর ছবি ‘ভিডিও টেপ’ (স্পেশাল মেনশন), বেস্ট শর্ট ফিল্ম সেকশনে (মাই নেম ইজ পেটিয়া’ (রাশিয়া), স্পেশাল মেনশন ডকুমেন্টারিতে ‘দ্য হোয়াল অ্যান্ড দ্য রাভেন’, বেস্ট ডকুমেন্টারি জর্ডান, লেবানন, কাতার ও ফ্র্যান্সের যৌথ প্রযোজনায় এবং দিনা নাসেরের পরিচালনায় ‘টিনি সোউলস’, স্পেশাল মেনশন বেস্ট ফিচার সেকশনে ইরানের সিনেমা ‘পাটিও’, বেস্ট অ্যাওয়ার্ড ফিচার ফিল্ম সেকশনে পোলান্ডের সিনেমা ‘অল ফর মাই মাদার’, উইমেন ফিল্মমেকারস সেকশনে বেস্ট ডিরেক্টর হিসেবে ‘অল ফর মাই মাদার’ ছবির জন্য পুরস্কার পান পোলান্ডের মালগোরজাটা মেলাস্কা। স্পিরিচুয়াল ফিল্ম সেকশনে ইরানের ‘দ্য ফিস্ট অব দ্য গোট’, বেস্ট শর্ট ফিল্ম হিসেবে ক্রোয়েশিয়া, বেলজিয়াম, বসনিয়ার সিনেমা ‘দ্য স্ট্যাম্প’, বেস্ট ডকুমেন্টারি এই ক্যাটাগরিতে ইরানের ‘বিলাভড’, বেস্ট ফিচার ইন ফিচার ফিল্ম ক্যাটাগরিতে চায়নার ‘কোয়ালি অ্যান্ড রাইস’, এশিয়ান কম্পিটিশন বেস্ট স্ক্রিপ্ট রাইটার বিভাগে হুসায়েন কারাবি পুরস্কার পান তার্কির সিনেমা ‘ইনসাইডারস’ এর জন্য, বেস্ট সিনেমেটাগ্রোফি হিসেবে ভারতের অক্ষয় ইন্ডিকারের ‘রেডিয়াস’, বেস্ট অ্যাক্ট্রেস আরিজো এরিয়াপোড, ফেরেস্তা আফসার ও হাসিবার ‘হাভা, মরিয়াম, আয়েশা’ সিনেমার জন্য। এছাড়া এশিয়ানে বেস্ট অ্যাক্টর হয়েছেন লুইস অ্যাবুয়েল ‘এডওয়ার্ড’ সিনেমায় অভিনয়ের জন্য, বেস্ট ডিরেক্টর ‘ক্যাসল অব ড্রিম’ সিনেমার জন্য মিরকারিমি রেজা, স্পেশাল জুরিতে শ্রীলংকার সিনেমা ‘চিলড্রেন অফ দ্য সান’ এবং বেস্ট ফিল্ম অ্যাওয়ার্ডে ইরানের ‘ক্যাসল অফ ড্রিমস’ পুরস্কার পায়। এ ছবিটি পরিচালনা করেছেন রেজা মিরকারিমি।