থাকেন যাত্রাবাড়ীর একটি মেসে। নির্বাচনী প্রচারণায় মাঠে নামেন মাঝে মধ্যে। নিজের ব্যানার পোস্টার নিজেই লাগান। নির্বাচনে জয়ের ব্যাপারেও তিনি আশাবাদী। তিনি ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের বাংলাদেশ কংগ্রেস দলের প্রার্থী আকতার-উজ্জামান আয়াতুল্লাহ । ২০১৫ সালেও তিনি একই সিটি করপোরেশনে নির্বাচন করেছেন । তখন তিনি লাউ প্রতীক নিয়ে পেয়েছিলেন ৩৬২ ভোট। আর এবার নির্বাচন করছেন ডাব প্রতীক নিয়ে।
তিনি নির্বাচনী হলফনামায় কোনো আয় নেই উল্লেখ করলেও তার নির্বাচনী প্রচারনায় সম্ভাব্য ব্যয় ধরেছেন প্রায় ২৫ লাখ টাকা। এর মধ্যে দুই লাখ টাকা তার নিজে, বাকি ২৩ লাখ পাবেন আত্মীয়স্বজন থেকে। এই প্রার্থী গত কয়েকদিন আগে রমনা পার্কে নিজের ব্যানার নিজে লাগিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছিলেন। ঢাকা উত্তরের আরেক প্রার্থী বাঘ প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করছেন পিডিপির শাহীন খান। তার ভাষ্যে তিনি নির্বাচন করছেন শখ করে আর মানুষের কাছে পরিচিতি পাওয়ার জন্যে। তার হলফনামা ঘেটে দেখা যায় পাঁচ লাখ টাকার মধ্যেই নির্বাচন সেরে ফেলার পরিকল্পনা তারা। এ টাকা আসবে তার ব্যবসার আয় থেকে। ৫০ হাজার পোস্টারে আড়াই লাখ টাকা, যাতায়াতে ৫০ হাজার টাকা, লিফলেটে এক লাখ টাকা, মাইকিংয়ে এক লাখ টাকা খরচ করবেন তিনি।
পথসভা, ঘরোয়া বৈঠক, ব্যানার, কর্মীদের ব্যয়, নির্বাচনী ক্যাম্পে কোনো খরচ নেই তার। নির্বাচনী জমজমাট লড়াইয়ে এ প্রার্থীকে নিয়ে কোন আলোচনা নেই। শাহিন খান বলেন, নির্বাচন করা শখ হয়েছে। তাই করছি। তাছাড়া নির্বাচন করলে অনেক পরিচিত পাওয়া যায়। আয়াতুল্লা বা শাহিন খানই নয়, তার মতো আরো দশ প্রার্থী নির্বাচন করছেন দুই সিটিতে। জয়ের ব্যপারে শতভাগ আশাবাদী হতে দেখা গেছে। কয়েকদিন পরেই ঢাকা দুই সিটি নির্বাচন। আসন্ন সিটি নির্বাচনকে সামনে রেখে ঘুম নেই প্রার্থীদের। প্রচার প্রচারণা সার্বক্ষণিক ব্যস্ততার মধ্যে কাটাতে হচ্ছে তাদের। যত মাঠ চষে বেড়াতে পারবেন, ততই পৌঁছাতে পারবেন ভোটারদের দ্বারে দ্বারে। এমন প্রত্যাশা প্রার্থীদের। অথচ বড় দুই দলের চার প্রার্থী ছাড়া বাকি প্রার্থীদের দেখা যায় না গণসংযোগের মাঠে। আলোচনায় নেই কোনো প্রার্থী। দুই সিটির অলিগলি পাড়া-মহল্লায়ও তাদের পোস্টারও, লিফলেট কিছু দেখা মেলেনি। এলাকার ভোটারারও চিনেন না তাদেরকে। তবে কিছু পোস্টার টানানোর চিত্রও দেখা গেছে। আবার এমন প্রার্থীও দেখা মিলেছে, যার পোস্টার বছরজুরে দেখা মিলে ঢাকা দুই সিটি করপোরেশনে। যদিও তিনি দক্ষিণে জাতীয় পার্টির প্রার্থী মোহাম্মদ সাইফুদ্দিন মিলন লাঙ্গল প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করছেন। কেনো তিনি দুই সিটিতে পোস্টার শাটান এই প্রশ্নের উত্তর নেই তার কাছে। এই প্রার্থী আগেও কয়েবার প্রার্থী হয়েছিলেন সিটি এবং সংসদ নির্বাচনে। প্রার্থীতা প্রত্যাহারও করেছেন। এবার তিনি নির্বাচনে লড়ছেন। দক্ষিণের কয়েকজন ভোটারের সঙ্গে কথা বলেও জানা যায়, বড় দুই দলের প্রার্থী ছাড়া অন্য কোনো প্রার্থী গণসংযোগ চোখে পড়েনি তাদের। আসন্ন সিটি নির্বাচনে দক্ষিণে জাতীয় পার্টির হাজী মোহাম্মদ সাইফুদ্দিন মিলন (লাঙ্গল), ইসলামী আন্দোলনের আবদুর রহমান (হাতপাখা), ন্যাশনাল পিপলস্ পার্টির (এনপিপি) বাহরানে সুলতান বাহার (আম), বাংলাদেশ কংগ্রেসের আকতার-উজ্জামান ওরফে আয়াতুল্লা(ডাব),এবং গণফ্রন্টের আব্দুস সামাদ সুজন (মাছ ) প্রতীক নির্বাচনে অংশ নেবেন। ইসলামী আন্দোলনের আবদুর রহমান নির্বাচন করছেন হাতপাখা প্রতীক নিয়ে। এই প্রার্থীর পক্ষে প্রচারণাও হচ্ছে বিভিন্ন এলাকায়।
এদিকে উত্তরে সিটিতে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি মনোনীত প্রার্থী বাদেও মেয়র পদে নির্বাচন করছেন আরও চারজন। তারা হলেন, পিডিবি মনোনীত প্রার্থী শাহিন খান (বাঘ), ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের শেখ মোহাম্মদ ফজলে বারী মাসউদ (হাতপাখা),সিপিবির আহমেদ সাজেদুল হক (কাস্তে) ও এলডিপির আনিসুর রহমান দেওয়ান (আম)। এসব প্রার্থীদের সঙ্গে কথা বলার পর তারা দাবী করছেন ,তাদের প্রচারণা চলছে জোরেশোরে। কিন্তু তারা গণমাধ্যমের কোনো সহযোগিতা পান না। যার ফলে এতো প্রচারণা করার পরেও মানুষের কাছে তারা পৌছাতে পারে না। শুধু তাই নয় তারা দাবি করছেন,গণমাধ্যমে প্রেস রিলিজ পাঠালেও তাদের গণসংযোগের কোনো সংবাদ গণমাধ্যমে যায় না। গণমাধ্যম বড় দুটি দলের প্রার্থীদের নিয়েই ব্যস্ত। যে কারণে অন্য মেয়র প্রার্থীরা উপেক্ষিত। আবার কেউ কেউ কিছু পোস্টার ছাপালেও নির্বাচনে জয়ের ব্যপারে শতভাগ আশাবাদী হতেও দেখা গেছে তাদের। উত্তরে কাস্তে প্রতীক নিয়ে মেয়র পদে লড়ছেন সিপিবির আহমেদ সাজেদুল হক। তিনি বলেন, বড় দলের প্রার্থীদের কোটি টাকার পোস্টারের বিপরীতে আমাদের লাখ টাকার পোস্টার দেখা যাবে না। সেটাই স্বাভাবিক। তবুও আমরা পোস্টার লাগাচ্ছি।
নির্বাচন কমিশনের নিয়ম অনুযায়ী প্রচারণা করছি। আমরা মূলত: ঢাকার অবহেলিত এলাকাগুলোতে প্রচারণা চালানোর চেষ্টা করি। কারণ তাদের কাছে কেউ যেতে চায়না। কাওরান বাজারে বেশ কয়েকদিন গুটি কয়েক মানুষ নিয়ে মিছিল করতে দেখা গেছে ইসলামি আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী শেখ মোহাম্মদ ফজলে বারী মাসউদ। তিনি বলেন , আমরা প্রচারণা করে যাচ্ছি কিন্তু আমাদের প্রচারণা চোখে পড়ছে না, কারণ আমাদের মিডিয়া কাভারেজ নেই। গণমাধ্যম আমাদের কাছে আসছে না। তবে নির্বাচনের প্রচারণার দশ দিন চলে গেলেও দুই একদিন হলো পোস্টার লাগিয়েছেন আম প্রতীক নিয়ে নির্বাচনের মাঠে থাকা প্রার্থী আনিসুর রহমান দেওয়ান। এমন দাবী করলেও এলাকার কোনো জায়গায় তার পোস্টার চোখে পড়েনি। তিনি বলেন,আমার পোস্টার লাগানো শুরু হয়েছে। পুরো উত্তর সিটিতে ব্যাপক হারে আমরা গণসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছি। ভোটারদের থেকেও সাড়া পাচ্ছি।