চীনে এক নতুন ভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছে। করোনাভাইরাস নামে নতুন এই রোগের প্রাদুর্ভাব চীনে উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। গত দু’দিনে সেদেশে ১৩৯ জন আক্রান্তের খবর পাওয়া গেছে। আক্রান্তদের মধ্যে আছে বেইজিং এবং শেনঝেন শহরের বাসিন্দারাও। এদিকে থাইল্যান্ড এবং জাপানের পর দক্ষিণ কোরিয়াতেও একই ভাইরাসে সংক্রমণের ঘটনা ঘটেছে। এখন পর্যন্ত এই রোগে আক্রান্তের সংখ্যা ২০০ ছাড়িয়ে গেছে। মারা গেছে অন্তত তিন জন। দ্রুত ছড়িয়ে পড়া এই নতুন ভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে বাংলাদেশেও সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।
তবে বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত কেউ শনাক্ত না হলেও বিমানবন্দরে কর্তৃপক্ষকে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নিতে বলেছে বাংলাদেশের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর)। সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর পরিচালনা কর্তৃপক্ষ। রোগটির উপর নজরদারি বাড়িয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ও।
সার্স ভাইরাস সংক্রমণের অভিজ্ঞতা থেকে এবার চীন থেকে নতুন রোগটির ছড়িয়ে পড়া আটকাতে বিভিন্ন দেশ ইতিমধ্যে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিতে শুরু করেছে। বাংলাদেশের প্রস্তুতি সম্পর্কে আইইডিসিআর-এর পরিচালক অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা বলেন, বাংলাদেশে এখনও এ ভাইরাসে আক্রান্ত কোনো রোগী শনাক্ত হয়নি। তবে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর নজরদারি বাড়িয়েছে। আমরা নিবিড়ভাবে বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করছি। আমরা সতর্ক আছি এবং আমরা প্রস্তুতও আছি।
বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষকে চিঠি দেয়া হয়েছে জানিয়ে সেব্রিনা ফ্লোরা বলেন, বিমানবন্দরের স্বাস্থ্যকর্মীদের আমরা প্রশিক্ষণ দিয়েছি। সিভিল এভিয়েশনে চিঠি দিয়ে বলেছি, যেসব যাত্রী চীন থেকে আসছেন, তারা যেনো এয়ারপোর্টের থার্মাল স্ক্যানারের ভেতর দিয়ে যান। সেটা যেন নিশ্চিত করা হয়। যদি কারও জ্বর পাওয়া যায়, তাহলে আমরা ধরতে পারবো। চীন থেকে সরাসরি ঢাকায় যাত্রী পরিবহন করে এমন তিনটি এয়ারলাইন্সের সঙ্গে ইতিমধ্যে কথা বলা হয়েছে বলে জানান তিনি। সেব্রিনা ফ্লোরা জানান, করোনাভাইরাস শ্বাসতন্ত্রের রোগ। এটার প্রধান লক্ষণ জ্বর। সঙ্গে সর্দি, কাশি, গলাব্যথা থাকে।
তিনি আরও বলেন, সবাইকে সতর্ক করছি। হেলথ কার্ড তৈরি করছি। যারা চীন থেকে আসবে, তাদের ওই কার্ডটা দিয়ে দেয়া হবে। তাদের বলা হয়েছে, আসার সময় জ্বর না থাকলেও চীন থেকে আসার ১৪ দিনের মধ্যে যদি জ্বর হয়, তাহলে যেন আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন।
শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের পরিচালক এ এইচ এম তৌহিদ-উল-আহসান বলেন, তারা ইতিমধ্যে নানা পদক্ষেপ নিয়েছেন। তিনি বলেন, ভাইরাসটির বিভিন্ন লক্ষণ সম্পর্কে বিমানবন্দরে ডিজিটাল ফরমেটে তথ্য দেয়া হয়েছে। চীন থেকে যেসব যাত্রী বাংলাদেশে আসবে, তাদের থার্মাল স্ক্রিনিংয়ের মধ্য দিয়ে যেতে হবে। পাশাপাশি তাদের স্বাস্থ্য সংক্রান্ত তথ্যের একটি কার্ড পূরণ করতে হবে। ঢাকায় আসার পর সেটি বিমানবন্দরের স্বাস্থ্য ডেস্কে জমা দিতে হবে।
তৌহিদুল বলেন, থার্মাল স্ক্যানারে পরীক্ষায় কোনো যাত্রীর শরীরের তাপমাত্রা ১০০ ডিগ্রি ফারেনহাইটের বেশি পাওয়া গেলে তাকে প্রথমে বিমানবন্দরের পর্যবেক্ষণ কক্ষে রাখা হবে। পরে তাকে প্রয়োজনে কুর্মিটোলা হাসপাতালে স্থানান্তর করা হবে। স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা তার শারীরিক অবস্থার তথ্য সংগ্রহে রাখবেন। সর্তকতা জারি হলেও এখনও করোনাভাইরাসে আক্রান্ত বা আক্রান্ত হতে পারেন, এমন কাউকে পাওয়া যায়নি বলে জানান তৌহিদুল আহসান।
চীনা কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, করোনাভাইরাস মানুষ থেকে মানুষে সঞ্চারিত হয়। এতে আক্রান্ত হলে সর্দিজ্বর হয়, সেই সঙ্গে মাথা ব্যথা, কাশি, শরীরের অস্বস্তি বোধ হয়। গবেষকরা বলছেন, আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শে এলে তো বটেই, হাঁচি-কাশি থেকে বায়ুর মাধ্যমেও এই ভাইরাস ছড়াতে পারে।
রোগটি কতটা মারাত্মক- এ প্রশ্নে সেব্রিনা ফ্লোরা বলেন, রোগটিকে তেমনভাবে প্রাণঘাতি বলা যায় না। তারপরও এখন পর্যন্ত তিনজন মানুষ মারা গেছে, সে কারণে গুরুত্ব কমও না। এখন পর্যন্ত বেশিরভাগ আক্রান্তই সিরিয়াস না। তিনজন যেহেতু মারা গেছে সে কারণে আমাদের সবদিক থেকেই প্রস্তুতি রাখতে হবে।