তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানা হেফাজতে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন করপোরেশন (বিএফডিসি) কর্মকর্তা আবু বকর সিদ্দিকী বাবুর মৃত্যু রহস্য আরো ঘনীভুত হচ্ছে। যে সিসিটিভি ফুটেজ ঘিরে পুলিশ তদন্ত চালিয়ে যাওয়ার কথা বলছে ওই ফুটেজ নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছে নিহতের পরিবার।
পুলিশ বলছে, থানার সিসি ক্যামেরার ফুটেজ বিশ্লেষণ করে বাবুর আত্মহত্যার বিষয়টি তারা নিশ্চিত হয়েছেন। থানা পুলিশ ও তদন্ত সংশ্লিষ্টরা এমন দাবি করলেও পরিবারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, ফুটেজে ওই ব্যাক্তির পরনে যে কাপড় দেখা গেছে সেটি বাবুর পোশাক নয়। এছাড়া ময়নাতদন্তে বাবুর গলায় চিকন দাগ ছাড়াও মাথা ও পায়ে আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে। বাবুর পরিবার ও সহকর্মীরা পুলিশি নির্যাতনে তার মৃত্যু হয়েছে বলে বারবার বলে আসছে। এর পেছনে এক নারী ও পুলিশের যোগসাজস রয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন। এদিকে পুলিশ বাবুর আত্মহত্যার পেছনে পরকীয়া সম্পর্কের বিষয়টিকে সামনে আনছে।
বলছে, রোকসানা আক্তার মায়া নামের ওই নারীর সঙ্গে অন্তরঙ্গ সময় কাটানোর ছবি ছিল বাবুর কাছে। তা প্রকাশ হওয়ার ভয়েই হয়তো তিনি আত্মহত্যা করেছেন।
ডিএমপির তেজগাঁও জোনের সিনিয়র পুলিশ কর্মকর্তা ও তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, সিসি ক্যামেরার ফুটেজে এটা স্পষ্ট ছিল যে বাবু হাজতের ভেতরে বারবার হাঁটাচলা করছিলেন। তিনি হয়তো আত্মহত্যার সুযোগ খুঁজছিলেন। পুলিশ কর্মকর্তাদের কাছে প্রশ্ন ছিল আত্মহত্যা করার মত কোনো পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছিলো কিনা আর কেনইবা আত্মহত্যার জন্য সে থানা হাজত বেছে নিবেন। জবাবে পুলিশ কর্মকর্তারা বলেন, রোকসানা আক্তার মায়া নামের এক নারীর সঙ্গে আবু বকর সিদ্দিকী বাবুর টানা দুই বছর পরকীয়া ছিল। বাবু তার আগের স্ত্রীর সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে ওই নারীর সঙ্গে আলাদা বসবাস শুরু করেন। বিষয়টি দুই পরিবারের মধ্যেই জানাজানি হয়ে যায়। এ নিয়ে তাদের দুই সংসারে কলহ সৃষ্টি হয়। পরে ওই নারী বাবুর কাছ থেকে সরে যেতে চেয়েছিলেন। যা মেনে নিতে পারেনি বাবু। তাই ওই নারীকে বুঝিয়ে আবার মেলামেশা শুরু করেন। ওই নারীর সঙ্গে তার বেশ কিছু অন্তরঙ্গ ছবি ছিল। ছবি প্রকাশের ভয় দেখিয়ে সম্পর্ক চালিয়ে যেতে বাবু বলেছিলেন বলে ওই নারী পুলিশের কাছে অভিযোগ করেন।
নিহতের পরিবার ও সহকর্মীরা ঘটনাটিকে হত্যাকাণ্ড দাবি করে আসছেন। তারা বলছেন, ময়না তদন্তে তার শরীরে আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে। এছাড়া তাকে সুস্থ অবস্থায় ধরে নেয়া হয়েছিল। থানায় নেয়ার পর কি এমন ঘটনা ঘটে যে সে আত্মহত্যা করতে হলো? এছাড়া যে মামলায় তাকে গ্রেপ্তারের কথা বলা হচ্ছে ওই মামলাটি ঘটনার পরে হয়েছে বলে দাবি পরিবারের।
শনিবার বিকালে কাজ শেষে এফডিসি থেকে বের হয়ে সাতরাস্তা মোড়ে যান। এ সময় আটক হন আবু বক্কর সিদ্দিকী বাবু। তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানা পুলিশ তাকে আটক করে থানায় রাখে। ওই দিন রাতেই তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হলে চিকিৎসকরা মৃত ঘোষণা করেন। বাবুর গলায় চিকন করে কালো দাগ ছিল। ময়না তদন্ত করে চিকিৎসকরা জানান, মাথাসহ শরীরের আরও কয়েকটি স্থানে আঘাতের চিহ্ন তারা পেয়েছেন। পুলিশ হেফাজতে নির্যাতনে তার মৃত্যু হয়েছে দাবি করে প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ হচ্ছে এফডিসিতে। প্রতিবাদের প্রেক্ষিতে ঘটনা তদন্তে কমিটি গঠন করেছে পুলিশ। থানা হেফাজতে আত্মহত্যা হলেও পুলিশ এর দায় এড়াতে পারে না বলে জানিয়েছেন ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার মো. শফিকুল ইসলাম।