নিজের নামে বরাদ্দকৃত রাইফেল বুকে ঠেকিয়ে আত্মহত্যা করেছেন পুলিশের এক নায়েক। তার নাম শাহ মো. আবদুল কুদ্দুস (৩১)। তিনি মিরপুর-১৪ নম্বর পুলিশ লাইনে নায়েক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। তিনি হবিগঞ্জের মাধবপুর উপজেলার বহরা ইউনিয়নের রসলুপুর গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা শাহ মো. আব্দুল ওয়াহাবের ছেলে। গতকাল ভোর ৫টার দিকে রাজধানীর মিরপুরে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) পাবলিক অর্ডার ম্যানেজমেন্ট (পিওএম) মাঠে এ ঘটনা ঘটে। পুলিশ বলছে, কুদ্দুস নিজের নামে বরাদ্দ করা রাইফেল বুকে ঠেকিয়ে গুলি করে আত্মহত্যা করেছেন। মৃত্যুর আগে তিনি ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দিয়েছেন। ওই স্ট্যাটাসে পারিবারিক অশান্তির বিষয় উঠে এসেছে।
কাফরুল থানার ওসি মো. সেলিমুজ্জামান জানান, কনস্টেবল শাহ মোহাম্মদ কুদ্দুস পিওএম ব্যারাকে থাকতেন। গতকাল ভোরে অন্যদের মতো তারও পিওএমের বাইরে দায়িত্ব ছিল। গতকাল ভোর সাড়ে পাঁচটার দিকে পুলিশের অন্য সদস্যরা তাদের নামে বরাদ্দ করা রাইফেল নিয়ে দায়িত্ব পালন করতে গাড়িতে ওঠেন। তবে সে সময় শাহ মোহাম্মদ কুদ্দুসকে খুঁজে পাওয়া যায়নি। পরে মাঠের এক কোণায় গুলিবিদ্ধ হয়ে মৃত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখা যায়। পুলিশ তার লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠায়। ওসি বলেন, শাহ মোহাম্মদ কুদ্দুসের ব্যবহৃত রাইফেলটি জব্দ করা হয়েছে। মৃত্যুর আগে তার ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দেওয়া হয়। ধারণা করা হচ্ছে, কুদ্দুস নিজেই এই স্ট্যাটাস দিয়েছেন। সেখানে তিনি পারিবারিক অশান্তির কথা লিখেছেন।
জানা গেছে, পারিবারিক কলহের কারণে মানসিকভাবে অশান্তিতে ছিলেন কুদ্দুস। মৃত্যুর আগে তিনি ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছেন। তার স্ট্যাটাসটি হুবহু তুলে ধরা হলো- ‘আমার মৃত্যুর জন্য কাউকে দায়ী করব না। আমার ভেতরের যন্ত্রণাগুলো বড় হয়ে গেছে, আমি আর সহ্য করতে পারছি না। প্রাণটা পালাই পালাই করছে। তবে অবিবাহিতদের প্রতি আমার আকুল আবেদন আপনারা পাত্রী পছন্দ করার আগে পাত্রীর মা ভালো কিনা তা আগে খবর নেবেন। কারণ পাত্রীর মা ভালো না হলে পাত্রী কখনই ভালো হবে না। ফলে আপনার সংসারটা হবে দোজখের মতো। সুতরাং সকল সম্মানিত অভিভাবকদের প্রতি আমার শেষ অনুরোধ, বিষয়টি বিশেষভাবে গুরুত্ব দেবেন। আল্লাহ হাফেজ। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ, উত্তর বিভাগ (এসটিএফ), মিরপুর-১৪, ঢাকা।’
কুদ্দুসের মৃত্যুর খবরে ঘটনাস্থলে গিয়ে সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করেন, কাফরুল থানার এসআই মোজাম্মেল হক। সুরতহাল প্রতিবেদনে কুদ্দুসের বুকে দুটি গুলির চিহ্নের কথা উল্লেখ করেন তিনি। এসআই মোজাম্মেল হক বলেন, আমি ভোরে খবর পেয়ে মাঠে গিয়ে কুদ্দুসের মরদেহ পড়ে থাকতে দেখি। এরপর ঘটনাস্থল কর্ডন করা হয়। কুদ্দুসের ডিউটি ছিল সকালে। এ জন্য সে একটি ফুল লোডেড এসএমজি বন্দুক রিকুইজিশন নিয়েছিল। সেটি দিয়েই গুলি চালিয়েছে। তার বুকে দুটি ছিদ্র ছিল। ভেতরে কয়টি গুলি আছে তা ময়নাতদন্তের পর জানা যাবে। এ ঘটনায় কুদ্দুসের সহকর্মী ও তার কাছাকাছি কয়েকজন পুলিশকে জিজ্ঞাসাবাদ করে তথ্য নেয়া হয়েছে বলেও জানান তিনি।
নিহত কুদ্দুসের ভাই পুলিশের সিলেট রেঞ্জে কর্মরত এএসআই শাহ মো. তুহিন জানান, তার ভাই আ. কুদ্দুসের সঙ্গে এক বছর আগে মাধবপুর উপজেলার মৌজপুর গ্রামের সৈয়দ মো. কাউছারের মেয়ে হাবিবুন্নাহারের বিয়ে হয়। বিয়ের পর থেকেই তার স্ত্রী হাবিবুন্নাহার ও শাশুড়ি সৈয়দা রুনিয়ার সঙ্গে পারিবারিক কলহ দেখা দেয়। কলহের জের ধরে তার স্ত্রী হাবিবুন্নাহার শ্বশুর বাড়িতে ৬ মাস আটক ছিলেন। পরে স্থানীয় লোকজনের সহযোগিতায় ২ মাস আগে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে বিরোধ মিটিয়ে হাবিবুন্নাহারকে তার শ্বশুরালয়ে পাঠানো হয়।