× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, বৃহস্পতিবার , ১২ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৬ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

হারিয়ে যাওয়া শিশুকে মায়ের কোলে ফিরিয়ে দিলেন ওসি

বাংলারজমিন

আশরাফুল ইসলাম, কিশোরগঞ্জ থেকে
২৫ জানুয়ারি ২০২০, শনিবার

বৃহস্পতিবার রাত ১১টা। কিশোরগঞ্জ জেলা শহরের পুরানথানা এলাকায় রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে কাঁদছিল সাত বছর বয়সী একটি ছেলে শিশু। বিষয়টি টহলরত এক পুলিশ সদস্যের নজরে আসার পর তিনি শিশুটির অভিভাবকের খোঁজ করেন। কিন্তু আশপাশে কোথাও অভিভাবকের দেখা মিলেনি। শিশুটিকে জিজ্ঞাসা করে পুলিশের ওই সদস্য জানতে পারেন, ছেলেটি ট্রেনে করে ভৈরব থেকে কিশোরগঞ্জ চলে এসেছে। তার সঙ্গে আর কেউ নেই। এ পরিস্থিতিতে পুলিশের ওই সদস্য বিষয়টি কিশোরগঞ্জ সদর মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. আবুবকর সিদ্দিক পিপিএমকে অবহিত করেন। ওসি আবুবকর সিদ্দিক ছেলেটিকে থানায় নিয়ে আসার নির্দেশ দেন।
থানায় নিয়ে আসার পর পরম যত্নে শিশুটির কাছে নাম-ঠিকানা জানতে চান ওসি মো. আবুবকর সিদ্দিক। শিশুটি তখন জানায়, তার নাম মোক্তাদির। পিতার নাম রহমত আলী। কাঁচামালের ব্যবসা করেন। মায়ের নাম নাসিবা খাতুন। মোক্তাদিরের বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার আশুগঞ্জ উপজেলার সোহাগপুর গ্রামে। কিন্তু বাবা-মা কিংবা আত্মীয়স্বজনের কারো মোবাইল নম্বর জানে না সে। এ অবস্থায় শিশুটিকে তার অভিভাবকের কাছে পৌঁছে দিতে উদ্যোগী হন কিশোরগঞ্জ সদর মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. আবুবকর সিদ্দিক পিপিএম। মানবিক এই পুলিশ কর্মকর্তা মধ্যরাতেই ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জে যোগাযোগ করে বিভিন্ন মাধ্যমে সংগ্রহ করেন ছেলেটির মায়ের মোবাইল নম্বর। মা নাসিবা খাতুনকে জানান, তার ছেলে মোক্তাদির বর্তমানে ওসি’র হেফাজতে রয়েছে। তিনি যেন এসে ছেলেকে নিয়ে যান। ছেলের প্রাপ্তি সংবাদ মাকে জানানো ছাড়াও শিশুটিকে নিজের হেফাজতে রেখে তার খাওয়া-দাওয়াসহ সার্বিক দেখাশোনাও করছেন ওসি আবুবকর সিদ্দিক। রাত পোহাতেই শুক্রবার ভোরে সন্তানের জন্য ব্যাকুল মা নাসিবা খাতুন ছুটে আসেন কিশোরগঞ্জে। সকালে কিশোরগঞ্জ সদর মডেল থানায় গিয়ে সন্তানকে কোলে তুলে নিলে সৃষ্টি হয় এক আবেগঘন পরিবেশের। কান্না থামিয়ে মায়ের কোলে ওঠে মোক্তাদির হাসে স্বস্তির হাসি। কিশোরগঞ্জ সদর মডেল থানার ওসি মো. আবুবকর সিদ্দিক পিপিএম এর মহানুভবতা আর প্রচেষ্টায় এভাবে বাবা-মা আর স্বজনদের ফিরে পেয়েছে ছোট্ট শিশুটি।

শিশুটির মা নাসিবা খাতুন জানান, তাদের চার সন্তানের মধ্যে মোক্তাদির সবার ছোট। আশুগঞ্জের জামালপুর মাদরাসায় মোক্তাদিরকে কয়েকদিন আগে ভর্তি করানো হয়েছিল। কিন্তু মাদরাসা থেকে পালিয়ে বৃহস্পতিবার বিকালে কোথায় যেন হারিয়ে যায়। ছেলের সন্ধানে তারা বিভিন্ন জায়গায় খোঁজাখুজি করেন। শেষ রাতে পুলিশের মাধ্যমে তারা জানতে পারেন, তার শিশু সন্তান মোক্তাদির কিশোরগঞ্জ সদর মডেল থানায় রয়েছে। ভোরে থানায় এসে তিনি ছেলেকে ফিরে পেয়ে এখন আনন্দে আত্মহারা।
কিশোরগঞ্জ সদর মডেল থানার ওসি মো. আবুবকর সিদ্দিক পিপিএম জানান, ছেলেটি মাদরাসা থেকে পালিয়ে ভৈরব চলে যায়। সেখান থেকে সে একটি ট্রেনে চড়ে। বৃহস্পতিবার রাতে কিশোরগঞ্জ রেলওয়ে স্টেশনে নামার পর হাঁটতে হাঁটতে শহরের পুরানথানা এলাকা পর্যন্ত আসে। এভাবে অচেনা জায়গায় এসে বিপদে পড়ে একপর্যায়ে শিশুটি কান্না শুরু করে। বিষয়টি তিনি জানতে পেরে শিশুটিকে উদ্ধার করে নিজ হেফাজতে এনে রেখে পরিবারের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করেন এবং এক পর্যায়ে পরিবারের কাছে খবর পৌঁছাতে সক্ষম হন। শুক্রবার সকালে আনুষ্ঠানিকভাবে শিশুটিকে তার মায়ের জিম্মায় তিনি প্রদান করেছেন। ওসি মো. আবুবকর সিদ্দিক পিপিএম বলেন, ছেলেটিকে তার পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দিতে পেরে ভীষণ ভালো লাগছে। মনে হচ্ছে, একটি ভালো কাজ করতে পেরেছি।
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর