চেয়ারম্যান আর সদস্যদের দ্বন্দ্বে অচল ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগরের বিষ্ণুপুর ইউনিয়ন পরিষদ। তালা ঝুলছে পরিষদে। বেশির ভাগ সময় তালাবদ্ধ থাকায় ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন ইউনিয়নের মানুষ। এদিকে চেয়ারম্যান মো. জামাল উদ্দিন ভূঁইয়ার বিরুদ্ধে পরিষদে মাদকসেবনসহ নানা অভিযোগ তুলে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে তার অপসারণের আবেদন করেছেন পরিষদের ৭ জন সদস্য। একাধিক মামলারও আসামি চেয়ারম্যান। ইউনিয়ন পরিষদের সচিবও মামলার আসামি হয়ে অন্যত্র বদলি হয়েছেন। গত ১৫ই ডিসেম্বর চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে মন্ত্রণালয়ে দেয়া আবেদনটিতে স্বাক্ষর করেন ৪নং ওয়ার্ডের সদস্য মো. হুমায়ুন কবির, ৫নং ওয়ার্ডের মো. আক্তার হোসেন, ৭নং ওয়ার্ডের মো. শফিকুল ইসলাম, ৮নং ওয়ার্ডের মো. হানিফ মিয়া, ৯নং ওয়ার্ডের মো. হারিজ মিয়া, সংরক্ষিত ৪, ৫ ও ৬নং ওয়ার্ডের আমবিয়া খাতুন এবং ৭, ৮ ও ৯ নং ওয়ার্ডের মোসাম্মৎ হাসিনা বেগম। তাদের অভিযোগ চেয়ারম্যান ক্ষমতার অপব্যবহার করে ইউপি কার্যালয়ে মাদক সেবন করেন।
এমন একটি ছবিও দিয়েছেন তারা আবেদনের সঙ্গে। অর্থ আত্মসাতের একাধিক মামলায় তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা থাকার কথা উল্লেখ করা হয় এতে। এ ছাড়া ৮ম শ্রেণির এক ছাত্রীর বিয়ে সম্পন্ন করতে ভুয়া জন্ম সনদ দেয়ার অভিযোগ তদন্তে প্রমাণিত হলে চেয়ারম্যান জামাল ও পরিষদের সচিব সুব্রত রায়ের বিরুদ্ধে আদালত গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে বলে সদস্যরা তাদের আবেদনে জানান। নিয়মিত পরিষদের মাসিক সভা হয় না বলেও অভিযোগ করেন ওই সদস্যরা। তবে চেয়ারম্যান জামাল উদ্দিন ভূঁইয়া তার বিরুদ্ধে দেয়া অভিযোগটি পুরোপুরি সাজানো দাবি করেন। অভিযোগকারী তিন সদস্য হানিফ মিয়া, মো. হুমায়ুন কবির ও আক্তার হোসেনের বিরুদ্ধে কাজ না করে অর্থ আত্মসাতের উল্টো অভিযোগ করেন জামাল। বলেন, তাদেরকে কাজ বাস্তবায়নের জন্য চাপ দেয়ায় তারা এই অভিযোগ দিয়েছেন। পরিষদে মাদকসেবনের অভিযোগও মিথ্যা দাবি করে চেয়ারম্যান বলেন এটিও সাজানো। দরখাস্তের সঙ্গে দেয়া ছবিটি তৈরি করা বলে জানান তিনি। মূলত একটি চক্র তার বিরুদ্ধে সক্রিয় বলে জানান তিনি। স্থানীয় লোকজন জানিয়েছেন- চেয়ারম্যান ও সদস্যদের মধ্যে এর আগে মারামারির ঘটনাও ঘটে। জেলে যান দুজন সদস্য। এনিয়ে মামলা-মোকদ্দমাও হয়। একবারেই সীমান্তবর্তী এই ইউনিয়নে মাদক চোরাচালান ও কারবার নিয়েও বিরোধে লিপ্ত জনপ্রতিনিধিরা। স্থানীয় একাধিক সূত্র জানিয়েছে চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে অভিযোগকারী ইউপি সদস্য হানিফ এলাকার ডাকসাইটে মাদক ব্যবসায়ী। হুমায়ুন কবির এবং আক্তার হোসেনও মাদকের স্পট পরিচালনা করেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এমন নানা বিরোধে পরিষদ এখন অচল। গত দুই মাস ধরেই পরিষদ তালাবদ্ধ দেখতে পাচ্ছেন এলাকার মানুষ। মাসিক চাল বিতরণের জন্য ইসহাক নামের একজন সদস্য আসেন পরিষদে। তবে বিজয়নগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মেহের নিগার পরিষদের কাজকর্ম বন্ধ আছে কিনা সেটি জানেন না বলেই জানান। তবে চেয়ারম্যান মঙ্গলবার তার অফিসে এসেছিল এবং সে সময় তার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে বলে তাকে জানিয়েছেন। থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আতিকুর রহমান বলেন, তিনি থানায় নতুন যোগ দিয়েছেন। চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা আছে কিনা সেটি তার জানা নেই।