× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, বৃহস্পতিবার , ৫ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৯ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

ইয়াবার নতুন রুট বিয়ানীবাজার

বাংলারজমিন

মিলাদ জয়নুল, বিয়ানীবাজার (সিলেট) থেকে
২৭ জানুয়ারি ২০২০, সোমবার

 বিয়ানীবাজার সীমান্তে ইয়াবার নতুন রুটের সন্ধান পেয়ে ঘুম হারাম আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর। সীমান্ত পাড়ি দিয়ে দ্রুত বাংলাদেশে প্রবেশ করা ইয়াবার বিস্তার রোধ করতে হিমশিম খাচ্ছে তারা। বিশেষ করে ভারতের আসাম প্রদেশের করিমগঞ্জ, হাইলাকান্দি ও শিলচর জেলা হয়ে সিলেট সীমান্ত দিয়ে যেভাবে ইয়াবা প্রবেশ করছে তা উদ্বেগজনক।
অবশ্য ইয়াবা ব্যবসায় জড়িত ভারত-বাংলাদেশের মূল সিন্ডিকেটের কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এরমধ্যে দু’জন ভারতীয় নাগরিক। তারা অবৈধভাবে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করে। গত বছর র‌্যাব, পুলিশ ও বিজিবি পৃথক অভিযানে অর্ধশত ইয়াবা ব্যবসায়ীকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হলেও ইয়াবা প্রবেশ রোধ করা সম্ভব হচ্ছে না।
বিয়ানীবাজার-জকিগঞ্জ ও বড়লেখা উপজেলার ভারতের সঙ্গে সীমান্ত রয়েছে দুইশত কিলোমিটারের বেশি। বিশাল সীমান্তের ভারতীয় অংশের আসাম প্রদেশের শিলচর, হাইলাকান্দি ও করিমগঞ্জ জেলা হয়ে দেশে ইয়াবা প্রবেশ করছে। আর বাংলাদেশের জকিগঞ্জ ও বিয়ানীবাজার উপজেলার অরক্ষিত সীমান্ত এলাকার সুবিধা নিচ্ছে ইয়াবা পাচারের সঙ্গে জড়িত দুই দেশের বেশ কয়েকজন ইয়াবা কারবারি।
ভারতের কাঁটাতারের বেড়া পার করা গেলেই বাংলাদেশে ইয়াবা প্রবেশ হতে সময় লাগে মাত্র কয়েক মিনিট। এতে জড়িয়ে পড়েছে দুই দেশের প্রায় ২০ জন মাদক কারবারি। আর তাদের সহায়তা করে সীমান্ত এলাকার অনেক বাসিন্দা। জকিগঞ্জ উপজেলার সীমান্ত এলাকায় কমপক্ষে ২০টি স্পট, বিয়ানীবাজার উপজেলার মইয়াখালি, কোণারগাঁও, বারোজনি, গজুকাটা, বড়গ্রাম ও নয়াগ্রাম এলাকা এবং বড়লেখার বোবারথল দক্ষিণ ও উত্তর এলাকা দিয়ে ইয়াবা প্রবেশ করছে। পুলিশ ও র‌্যাব জানান, ২০১৯ সালে জকিগঞ্জ ও বিয়ানীবাজার উপজেলার সীমান্ত এলাকায় পৃথক অর্ধশতাধিক অভিযান চালিয়ে ৫২ জনকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে প্রেরণ করা হয়। ২রা অক্টোবর বিয়ানীবাজার থানা পুলিশ দুবাগের গজুকাটা এলাকা থেকে নুরুল ইসলাম ও মারুফ আহমদের কাছ থেকে ৮ হাজার পিস ইয়াবা এবং ২৯শে ডিসেম্বর র‌্যাবের অভিযানে আসামের বাসিন্দা বিনন্দ নম শুদ্র ও বিয়ানীবাজারের স্বর্ণ ব্যবসায়ী সুভাষ দাসকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাদের কাছ থেকে র‌্যাব ৬ হাজার ৭শ’ পিস ইয়াবা উদ্ধার করে। গত শনিবার বিকালে সীমান্তবর্তী গজুকাটা এলাকায় অভিযান চালিয়ে ইয়াবা সিন্ডিকেটের অন্যতম হোতা ফকির আলী ও নুরুল ইসলাম বদইকে ১ হাজার পিস ইয়াবাসহ গ্রেপ্তার করে বিয়ানীবাজার থানা পুলিশ। এরমধ্যে ফকির আলী ও বিনন্দ নম শুদ্র নামের দু’জন ভারতীয় নাগরিক। ইয়াবা সিন্ডিকেটের অপর শীর্ষ ব্যক্তি সুভাষ দাস (জেলহাজতে) বাংলাদেশ থেকে ব্যবসার টাকা অবৈধ পথে ভারতে পাচার করতো।
সীমান্ত এলাকা সূত্রে জানা যায়, বাংলাদেশ ও ভারতের দ্বৈত নাগরিক আব্দুস সালাম, আসামের ফকির আলী (জেলহাজতে), অজয় বড়ুয়া, বিনন্দ নমঃশূদ্র (জেলহাজতে), দ্বীপ এবং বাংলাদেশের মিজান আলী, জলাই, আবদুল বাছিত, কটই, সুভাষ দাস (জেলহাজতে) সহ ২০ জন ইয়াবা পাচারের সঙ্গে জড়িত।
বিয়ানীবাজার থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) অবনী শংকর কর বলেন, ইয়াবা পাচারের সঙ্গে বাংলাদেশ ও ভারতের সীমান্ত এলাকার দাগী কিছু লোক জড়িত রয়েছে। পুলিশ তাদের চিহ্নিত ও শনাক্ত করতে সক্ষম হয়েছে। জড়িত বেশির ভাগের অবস্থান ভারতের আসাম এলাকায়। কিছু লোক রয়েছে বিয়ানীবাজার ও জকিগঞ্জ উপজেলার। কিন্তু এরা বেশির ভাগ সময়ে দেশের বাইরে অবস্থান করে। জানা গেছে, মিয়ানমারের সঙ্গে ভারতের মিজোরাম, মণিপুর ও নাগাল্যান্ড প্রদেশের সীমানা রয়েছে। এ তিন প্রদেশের মধ্যে মিজোরামের চম্ফাই জেলায় ইয়াবা প্রবেশ করে মিয়ানমারের হাকা ও পালেতওয়া জেলা থেকে। মিজোরামের চম্ফাই থেকে আইজল হয়ে আসামের শিলচর-করিমগঞ্জ জেলা হয়ে সিলেটের জকিগঞ্জ, বিয়ানীবাজার ও বড়লেখা সীমান্ত এলাকা দিয়ে এবং চম্ফাই থেকে আইজল এবং থেকে মামিত ও কোলাসিবের যেকোনো একটি জেলা দিয়ে আসামের করিমগঞ্জ জেলায় প্রবেশ করে সিলেটের জকিগঞ্জ, বিয়ানীবাজার ও বড়লেখা সীমান্ত এলাকা দিয়ে দেশে ইয়াবা প্রবেশ করছে। সরজমিন গজুকাটা ও কোণারগাঁও সীমান্ত এলাকার বাসিন্দাদের সঙ্গে আলাপকালে জানা গেছে, ভারত ও বাংলাদেশকে বিভাজন করেছে কুশিয়ারা নদী। ভারতের কাঁটাতারের বাইরের থাকা নদীতে এসে পড়েছে পানি নিষ্কাশনের জন্য বড় বড় সুয়ারেজ। এসব সুয়ারেজ দিয়ে কাঁটাতারের ভেতর থেকে বৃত্তকার দড়ি কপিকলের মাধ্যমে নদীর তলদেশ দিয়ে দুই প্রান্তে সংযোগ করা হয়েছে। যেকোনো এক পাশ দিয়ে টান দিলে দড়ি ঘুরতে থাকে। ইয়াবা পাচারকারীরা গজুকাটা ও কোণারগাঁও এলাকায় এ কৌশলে ইয়াবা নিয়ে আসে। সিলেটের পুলিশ সুপার ফরিদ উদ্দিন পিপিএম বলেন, সিলেটকে মাদকমুক্ত রাখতে জেলার প্রত্যেক থানাকে বিশেষ নির্দেশনা দেয়া আছে। ইয়াবা প্রবেশ বন্ধ করতে সীমান্ত এলাকায় টহল ও নজরদারি বৃদ্ধি করা হয়েছে।

ইয়াবাসহ গ্রেপ্তার দুই ভারতীয় নাগরিক
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর