বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে) নির্বাচন-২০২০ সামনে রেখে গতকাল জাতীয় প্রেস ক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে কেমন নেতৃত্ব চাই শীর্ষক এক গোল টেবিল বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। দৈনিক যুগান্তরের উদ্যোগে আয়োজিত এ আলোচনা সভায় সাবেক ফুটবলার, ক্লাব সংগঠক, জেলা ও বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থার সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। যুগান্তরের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সাইফুল আলমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন যুগান্তরের সিনিয়র স্পোর্টস রিপোর্টার মোজাম্মেল হক চঞ্চল। সভায় বক্তারা গেল ১২ বছরের ফুটবল যে এক চুলও এগোয়নি সেই বিষয়টি তুলে ধরার পাশাপাশি বাফুফে সভাপতি কাজী মো. সালাউদ্দিনের কর্মকাণ্ডের সমালোচনা করেন।
আগামী ২৮শে এপ্রিল বাফুফের বর্তমান কমিটির মেয়াদ শেষ হবে। এর মধ্য দিয়ে নিজের তৃতীয় মেয়াদ পূর্ণ হবে বাফুফের সভাপতি কাজী সালাউদ্দিনের। আগামী ৩০শে এপ্রিল হবে নতুন নির্বাচন। আসন্ন নির্বাচনে সালাউদ্দিন জোটকে রুখতে একাট্ট সাবেক খেলোয়াড়, সংগঠকরা। গোল টেবিলে বৈঠকে এমনটাই জানান তারা।
বাফুফের সভাপতি হিসেবে সালাউদ্দিন ব্যর্থ বলেই আজ এই গোল টেবিল বৈঠক করতে হচ্ছে, এমনটাই জানান প্রবীণ ক্রীড়া সংগঠক স্থপতি মোবাশ্বের হোসেন। মোবাশ্বের হোসেনের সঙ্গে সুর মেলান চট্টগ্রাম বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক সিরাজউদ্দিন মো. আলমগীর। ১২ বছরে ১২টা প্লেয়ারও তৈরি করতে পারেননি কাজী সালাউদ্দিন, এমন মন্তব্য সাবেক তারকা ফুটবলার শেখ মোহাম্মদ আসলামের। এখানে উপস্থিত কেউ যদি বর্তমানে জাতীয় দলে খেলছে এমন ১২টা প্লেয়ারের নাম বলতে পারে, তাহলে আমি চুড়ি পরে এখান থেকে চলে যাবো- চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেন জাতীয় দলের সাবেক এই ফুটবলার। বাফুফে নির্বাচনে যে ১৩৪ জন কাউন্সিলর আছেন তাদেরকে আগামী নির্বাচনে স্বচ্ছ ব্যক্তিকে বেছে নেয়ার অনুরোধ করেন আরেক সাবেক ফুটবলার আবদুল গাফফার। সদ্য সমাপ্ত জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নামে অনুষ্ঠিত বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপ আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টের পারফরম্যান্স নিয়ে প্রশ্ন তোলেন সাবেক ফুটবলার আশরাফউদ্দিন আহমেদ চুন্নু। টুর্নামেন্টে উদ্বোধনী থেকে সমাপনী অনুষ্ঠানে তাদের মতো রাষ্ট্রীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত খেলোয়াড়দের বাফুফে সভাপতি দাওয়াত দেননি বলে সমালোচনা করেন এবং সাবেক খেলোয়াড়দের যে সালাউদ্দিন সম্মান দিচ্ছেন না এ জন্য আগামী নির্বাচনে তাকে খেসারত দিতে হবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি। তবে শেখ রাসেল ক্রীড়া চক্রের সভাপতি নুরুল আলম চৌধুরী ব্যর্থতার দায় শুধু সালাউদ্দিনকে দিতে রাজি নন। কারণ ২১ সদস্য বিশিষ্ট বাফুফের কমিটিতে দুটি পদে মাত্র দুজন ব্যক্তি আসীন। একটিতে সভাপতি পদে কাজী সালাউদ্দিন; দ্বিতীয়টি সিনিয়র সহ-সভাপতি হিসেবে আছেন সাবেক তারকা ফুটবলার আব্দুস সালাম মুর্শেদী এমপি। ব্যর্থতার দায় সালাম মুর্শেদীর ঘাড়েও বর্তায়। তিনি যদি সভাপতিকে ঠিকঠাক পরিচালনা করতেন, তাহলে ফুটবলের আজ এই অবস্থা হতো না, মন্তব্য নুরুল আলম চৌধুরীর। সাবেক ফুটবলার এবং জাতীয় দলের সাবেক কোচ গোলাম সারোয়ার টিপু সালাউদ্দিনের সমালোচনার পাশাপাশি নিজেদের দিকেও অঙ্গুলি সংকেত করেন। গোল টেবিল বৈঠকে সাবেক ফুটবলার, সংগঠকদের বরং বাফুফে নির্বাচনে যারা ভোট দেবেন সেই সমস্ত কাউন্সিলরদের ডেকে এমন একটি সভা করার পরামর্শ টিপুর। সভায় উপস্থিত স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের অধিনায়ক জাকারিয়া পিন্টু বরাবরের মতো সালাউদ্দিনকে সভাপতির পদ থেকে সরে যাওয়ার আহ্বান জানান; একই সঙ্গে গেল ১২ বছরে তার বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের সমালোচনাও করেন। যমুনা টিভির সিনিয়র স্পোর্টস রিপোর্টার মানজুর মোর্শেদের সঞ্চালনায় সভায় আরো উপস্থিত ছিলেন বাফুফের বর্তমান কমিটির সহ-সভাপতি বাদল রায়, বাফুফের কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য ফজলুর রহমান বাবুল, সাবেক ফুটবলার হাসানুজ্জামান খান বাবলু, ওয়াহিদুজ্জামান পিন্টু, কায়সার হামিদ, খুলনা বিভাগীয় ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি অ্যাডভোকেট মো. সাইফুল, ক্রীড়া সংগঠক আলিমুজ্জামান আলম, ক্রীড়া সংগঠক আবু হাসান চৌধুরী প্রিন্স, ক্রীড়া সংগঠক শাকিল মাহমুদ চৌধুরী এবং প্রবীণ সাংবাদিক মুহাম্মদ কামরুজ্জামান।