কোন কিছু বুঝে উঠার আগেই রহিমা বেগম মিতা নামের এক নারীকে আয়ারল্যান্ড থেকে ধরে দেশে পাঠিয়ে দেয় সে দেশের ইমিগ্রেশন বিভাগ। দেশে পৌঁছে তার ওপর অবিচার হয়েছে এমন বিষয়টি সইতে না পেরে আত্মহত্যার পথ বেছে নেন রহিমা। প্রতিবেশীরা তাকে উদ্ধার করে নিয়ে আসে মৌলভীবাজার ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট সদর হাসপাতালে। এর পর থেকে ওখানেই চিকিৎসাধীন। এখন কিছুটা সুস্থ। কিন্তু ঘটনা স্মরণে বারবার মূর্ছা যাচ্ছেন তিনি। কেন তার সাথে এমন নিষ্ঠুর আচরণের কথা বলছেন আর কাঁদছেন। জানা যায় রহিমা বেগমের পৈতৃক বাড়ি মৌলভীবাজার সদর উপজেলার কামালপুর ইউনিয়নের রায়পুর গ্রামে।
তিনি ওই গ্রামের মৃত আহসান হাবিবের মেয়ে। ২০১০ সালের নভেম্বর মাসে স্টুডেন্ট ভিসায় লন্ডন পাড়ি দেন তিনি। বিদেশে পাড়ি দেয়ার সময় এক পুত্র ও কন্যা সন্তান দেশে রেখে যান। লন্ডনে তিনি প্রায় ৫ বছর অবস্থান করেন। পরে লন্ডন থেকে পাড়ি দেন আয়্যারল্যান্ডে। গত ১৭ই জানুয়ারি রহিমা বেগম মিতাকে আয়ারল্যান্ড স্থানীয় সময় দূপুর আড়াইটার দিকে তার মালিকানা মিতাস বিউটি শেলুন, ইউনিট ৫, কিলারনি শপিং অরকেড (স্মল টেসকো) ৯৫/৯৬ নিউ স্ট্রিট, কিলারী, কো-কেরি, আয়ারল্যান্ড থেকে ধরে নিয়ে আসে ইমিগ্রেশনের লোক। ২ দিন আটকে রেখে কাতার এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটে ঢাকাস্থ শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করে। একদিন ঢাকায় অবস্থানের পর তার ছেলে ইমন আহমেদ নিয়ে আসে মৌলভীবাজারে। ২৩শে জানুয়ারি রাতে আয়ারল্যান্ড ইমিগ্রেশনের লোক জনের অবিচার সইতে না পেরে রহিমা গলায় রশি লাগিয়ে আত্মহত্যার পথ বেছে নেন। ভাগ্যক্রমে রশি ছিঁড়ে বেঁচে গেলেও গুরুতর আহত হন রহিমা। তার চিৎকার শুনে আশপাশের লোক উদ্ধার করে মধ্য রাতে মৌলভীবাজার ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট সদর হাসপাতালে ভর্তি করেন। সেখানে চিকিৎসা নিয়ে এখন কিছুটা সুস্থ হয়ে উঠেন। রহিমা বেগম জানান আয়ারল্যান্ড ইমিগ্রেশনের লোক তাকে ধোকা দিয়ে এয়ারপোর্টে নিয়ে আসে। ওরা হুমকি দেয় তিনি যদি বিমানে না উঠেন তাহলে তারা তাকে লাশ বানিয়ে পাঠিয়ে দেবে। তারা তাকে বলে আপনার এদেশে থাকার অধিকার নাই। তারপর আমি বলি আমি কিভাবে যাবো আমার জীবনের মৃত্যু নিশ্চিত। আমার মা, বাবা কেউ নেই। কে আমাকে সাহায্য করবে। আমার থাকার মতো কোনো জায়গা নেই। আমার সাবেক স্বামী আমাকে লন্ডন থাকা অবস্থায় জীবনের হুমকি ফোনের মাধ্যমে বার বার দিতেন। এমনকি আমাকে মেরে ফেলার জন্য লিখিত পত্র লন্ডন পাঠান। সেই পত্র আমি আশ্রয় (অংুষঁস) এ যে সময় ইন্টারভিউর করি ওই সময় প্রমাণ হিসেবে জমা দেই। কোন কথা না শুনে আমাকে তারা এয়ারপোর্টে নিয়ে যায়। রহিমা বেগমকে নিয়ে ইমিগ্রেশনের ৩ জন লোক উড়জাহাজে উঠে এবং শাহ জালাল এয়ারপোর্টে নিয়ে আসে। উড়জাহাজের ভেতর তারা ঠিকমত পানি পান করতে দেয়নি। বাথরুমে গেলে দরজা বন্ধ করতে দেয়নি। রহিমা আরো জানান, তিনি লন্ডন ও আয়ারল্যান্ড হাসপাতালে নিয়মিত চিকিৎসা নিতেন ও চিকিৎসকের পরামর্শে ওষুধ সেবন করতেন। আয়ারল্যান্ড গিয়ে বিউটি পার্লারের ব্যবসা শুরু করেন একটি দোকান ঠিক করে। দোকানের ভাড়া প্রতিমাসে ১ হাজার ইউরো পাউন্ড দিয়ে আসছেন। পাশাপাশি ইলেকট্রিক বিল, এরিয়া ট্যাক্স, ইনকাম ট্যাক্স দিয়েছেন। রয়েছে তার পাবলিক সার্ভিস কার্ড। তিনি প্রথম দুই বছর ২০১৫ সালের ২৯শে জুলাই আশ্রয়ে (অংুষঁস) আসার পর প্রায় দুই বছর আয়ারল্যান্ড দুইটি স্কুলের সেচ্ছাসেবক এর কাজ করেন। এ ছাড়াও তিনি আমাদের অহড়ঃযবৎ ঐড়ংঃবষ অঃষধং ঐড়ঁংব এ গবৎৎু গধহধমবৎ এর সহযোগিতায় সেলাই শিখানোর জন্য সরকার থেকে চারটি সেলাই মেশিন বাড়িতে দেওয়া হয়। তাদের এক বছর সেচ্ছাসেবক হিসেবে
প্রশিক্ষণ দেন। সব কিছু চলছিল ঠিকঠাক। কিন্তু হঠাৎ কোন কারণ ছাড়াই তারা আমাকে বিমানে তুলে দেশে পাঠায়। আমার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও দুদেশের অর্জিত সকল শিক্ষা সনদ ও অনান্য সনদ অরক্ষিত অবস্থায় ফেলে আসতে হয়েছে। মা, বাবা ও স্বামীহারা রহিমার আকুল আর্তনাদ তাকে একবার সে দেশে যাওয়ার সুযোগ দেওয়ার। অথবা তার সকল সম্পদ ফিরিয়ে দেয়ার। অন্যথায় তার আত্মহত্যা ছাড়া কোনো বিকল্প নেই।