× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, শুক্রবার , ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৭ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

অভিশংসন: বোল্টন বোমায় টালমাটাল ট্রাম্পের প্রতিরক্ষা

বিশ্বজমিন

মানবজমিন ডেস্ক
(৪ বছর আগে) জানুয়ারি ২৮, ২০২০, মঙ্গলবার, ১০:০৯ পূর্বাহ্ন

সবকিছু প্রায় ভালোই গুছিয়ে এনেছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প। রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে ফাঁসানোর জন্য ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগে মার্কিন প্রেসিডেন্টকে অভিশংসনের উদ্যোগ নিয়েছে বিরোধী দল ডেমোক্রেটরা। অভিযোগ ওঠে, ইউক্রেনকে বৈদেশিক সাহায্য দেয়ার বিনিময়ে নিজের প্রতিপক্ষ জো বাইডেন ও তার ছেলের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরুর জন্য চাপ দিয়েছিলেন ট্রাম্প। কিন্তু দীর্ঘদিন স্বাক্ষ্যগ্রহণ শেষে প্রতিনিধি পরিষদে তাকে অভিশংসিত করা গেলেও, রিপাবলিকান নিয়ন্ত্রিত সিনেটে তেমন সম্ভাবনা সুদূরপরাহত ঠেকছিল। কারণ, ফক্স নিউজের মতো সংবাদ মাধ্যম, টুইটার আর মিত্রদের নিয়ে প্রচারণার মাধ্যমে প্রায় সব কিছু নিজের দিকে নিয়ে এসেছিলেন ট্রাম্প। সিনেটে অভিশংসিত হওয়ার হাত থেকে বাঁচা অবশ্য কঠিন কিছু ছিল না তার জন্য। তার নিজ দল রিপাবলিকানরাই এখানে সংখ্যাগরিষ্ঠ। নতুন কোনো স্বাক্ষীকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডাকার প্রয়োজন নেই, এমনটা ট্রাম্প ও রিপাবলিকান পার্টি প্রায় প্রতিষ্ঠিত করে ফেলেছিল।
কিন্তু তাদের বাড়া ভাতে রীতিমত ছাই দিলেন জন বোল্টন। অথচ, তিনিই কিনা কয়েকদিন আগেও ছিলেন ট্রাম্প শিবিরের প্রিয় মুখ। ছিলেন ট্রাম্পের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা। কিন্তু বেশ বৈরী পরিস্থিতিতেই হোয়াইট হাউজ ছাড়তে হয়েছিল বোল্টনকে। হয়তো সেই তিক্ততার শোধ তুলতে দেরি করেননি বোল্টন।

নিউ ইয়র্ক টাইমসের খবরে বলা হয়, সাবেক এই শীর্ষ হোয়াইট হাউজ কর্মকর্তা একটি বই লিখতে যাচ্ছেন। সেই বইয়ের পাণ্ডুলিপিতে এমন সব তথ্য আছে যা ইউক্রেন ইস্যুতে ট্রাম্পের বক্তব্যের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। যেমন, এক জায়গায় দাবি করা হয়েছে, বোল্টনকে ট্রাম্প নিজেই বলেছেন, ইউক্রেন যদি বাইডেনের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু না করে, তাহলে তাদেরকে তিনি সরকারি সাহায্য দেবেন না। এমন তথ্য প্রকাশ হয়ে যাওয়ার পর সিনেটে বিপাকে পড়েছেন রিপাবলিকানরা। কেননা, ডেমোক্রেটরা দীর্ঘদিন ধরেই দাবি করে আসছিলেন, বোল্টন সহ সাবেক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের এ বিষয়ে স্বাক্ষ্য দিতে ডাকতে হবে। কিন্তু বিশেষ নির্বাহী এখতিয়ার খাটিয়ে সাবেক হোয়াইট হাউজ কর্মকর্তাদের স্বাক্ষ্য দেয়া থেকে বিরত থাকতে বাধ্য করেছে ট্রাম্প প্রশাসন। অপরদিকে সিনেট রিপাবলিকানরা এতদিন ধরে বলে এসেছেন যে, প্রতিনিধি পরিষদের শুনানিতে এমন কোনো তথ্য উঠে আসেনি যে, নতুন স্বাক্ষীদের ডাকার প্রয়োজন হতে পারে। কিন্তু বোল্টনের এমন দাবির পর নিশ্চিতভাবেই ডেমোক্রেটদের দাবির যৌক্তিকতা প্রমাণিত হলো। এতদিন নতুন স্বাক্ষী না ডাকার বিষয়ে ঐক্যবদ্ধ থাকলেও, রিপাবলিকান সিনেটরদের মধ্যে এ ব্যাপারে এখন মতানৈক্য দেখা দিয়েছে।

রিপাবলিকান সিনেটর মিট রমনি বলেছেন, জন বোল্টনকে স্বাক্ষ্য দেয়ার পক্ষে কমপক্ষে ৪ জন রিপাবলিকান সিনেটর ভোট দেবেন, এমন সম্ভাবনা বেড়েছে। তিনি বলেন, বোল্টনের প্রাসঙ্গিকতা এখন অনেক স্পষ্ট। প্রসঙ্গত, ৪ জন রিপাবলিকান ও সকল ডেমোক্রেট সিনেটর পক্ষে ভোট দিলেই বোল্টনকে স্বাক্ষ্য দিতে বাধ্য করা যাবে। এছাড়া রিপাবলিকান সিনেটর সুসান কলিনস বলেছেন, নিউ ইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনের পর সিনেটে অভিশংসন শুনানিতে জন বোল্টনকে আমন্ত্রণ জানানোর পক্ষে যুক্তি শক্তিশালী হয়েছে। তিনি এক বিবৃতিতে বলেন, আমাদের সহকর্মীদের মধ্যে এ নিয়ে ইতিমধ্যেই কথাবার্তা শুরু হয়েছে।

যদি বোল্টনের বক্তব্য সত্য হয়, তাহলে ডেমোক্রেটরা এতদিন ধরে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ করে আসছেন, তা আরও জোরালো হবে। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ, ইউক্রেনকে বাইডেনের বিরুদ্ধে চাপ দিতে তিনি সরকারি সাহায্যকে ব্যবহার করেছেন। ক্ষমতার এই অপব্যবহার তিনি করেছেন মূলত নিজের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ ও ডেমোক্রেট দলীয় শীর্ষ প্রেসিডেন্ট পদপার্থী ও সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে রাজনৈতিকভাবে কাবু করতে।

তবে ট্রাম্প সোমবার অস্বীকার করে বলেছেন, তিনি বোল্টনকে এমন কোনো কথা বলেননি। বোল্টন সেপ্টেম্বরে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টার পদ ছাড়েন। ট্রাম্প বলেছেন, তিনি তাকে বরখাস্ত করেছেন। তবে বোল্টন বলেছেন, তিনি নিজেই পদত্যাগ করেছেন।

যে পাণ্ডুলিপি নিয়ে এত আলোচনা, সেই পাণ্ডুলিপি থেকে নিউ ইয়র্ক টাইমস সরাসরি উদ্ধৃত করেনি। তবে ওই পাণ্ডুলিপি পড়েছেন এমন ব্যক্তিবর্গকে উদ্ধৃত করা হয়েছে প্রতিবেদনে। এ ব্যাপারে বোল্টনের আইনজীবী চার্লস কুপার বলেন, কোনো গোপন তথ্য প্রকাশিত হচ্ছে কিনা, তা যাচাই করতে নিয়মানুযায়ী বইয়ের পাণ্ডুলিপি হোয়াইট হাউজে দেয়া হয়েছিল। কুপার বলেন, ‘নিউ ইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদন দেখেই এটি ম্পষ্ট যে, এই যাচাই প্রক্রিয়াতেই কোনো গলদ আছে।’ হোয়াইট হাউজের জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদ বোল্টনের পাণ্ডুলিপি যাচাই করছিল। পরিষদের বাইরে অন্য কোনো কর্মকর্তা এই বই দেখেননি। অর্থাৎ এমন সম্ভাবনাই বেশি যে, জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের কেউই হয়তো তা ফাঁস করে দিয়েছেন।

ট্রাম্প বোল্টনের দাবি অস্বীকার করে বলেছেন, ‘আমি কখনই জন বোল্টনকে বলিনি যে, ইউক্রেনকে সাহায্য দেয়ার বিষয়টি বাইডেন বা ডেমোক্রেটদের বিরুদ্ধে তদন্তের সঙ্গে সম্পৃক্ত। যদি বোল্টন এমনটা বলে থাকেন, তাহলে তিনি বলেছেন বইয়ের কাটতি বাড়াতে।’
জর্জ ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনের অধ্যাপক জোনাথন টার্লি, যিনি প্রতিনিধি পরিষদের অভিশংসন শুনানিতে রিপাবলিকানদের ডাকা একমাত্র স্বাক্ষী ছিলেন। তার মতে, নতুন এই তথ্য অত্যন্ত ক্ষতিকর হয়েছে ট্রাম্পের জন্য। বোল্টন ও অন্য স্বাক্ষীদের বক্তব্য শোনার দাবি এখন জোরালো হবে। এই সপ্তাহের শেষে এ নিয়ে ভোটাভুটি হতে পারে।

নিউ ইয়র্ক টাইমসের ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, ইউক্রেনকে অর্থ ছাড় দিতে বোল্টন ছাড়াও পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও ও প্রতিরক্ষামন্ত্রী মার্ক এসপার কয়েক সপ্তাহ ধরে পরামর্শ দিয়েছেন। কিন্তু ২০১৯ সালের আগস্টে বোল্টনের সঙ্গে এক আলাপচারিতায় ট্রাম্প বলেন, ইউক্রেনের কর্মকর্তারা বাইডেন ও হিলারি ক্লিনটনের (ট্রাম্পের বিরুদ্ধে সাবেক প্রধান প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী) বিষয়ে প্রাপ্ত তথ্য না দিলে, ইউক্রেনকে অর্থ না দেয়ার পক্ষে তিনি।
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর