বাংলারজমিন

আদালতের আদেশ অমান্য করে বগুড়ার স্কুলে অতিরিক্ত ফি আদায়ের অভিযোগ

প্রতীক ওমর, বগুড়া থেকে

২০২০-০১-২৯

আদালতের রায়কে তোয়াক্কা না করে বগুড়ার বেশকিছু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান অতিরিক্ত সেশন ফি আদায় করছে শিক্ষার্থীদের থেকে। এই তালিকায় শীর্ষে আছে টিএমএসএস স্কুল ও কলেজ বগুড়া, এসওএস হারম্যান মেইনর স্কুল এ্যান্ড কলেজ, বিয়াম মডেল স্কুর এ্যান্ড কলেজ বগুড়া, পুলিশ লাইনস স্কুল এ্যান্ড কলেজ বগুড়া, সিটি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় বগুড়া, ইয়াকুবিয়া উচ্চ বিদ্যালয় বগুড়া, আমর্ড পুলিশ ব্যাটালিয় স্কুল এ্যান্ড কলেজ। এমন অভিযোগ তুলে মঙ্গলবার আবদুল মান্নান আকন্দ নামের একজন সংবাদ সম্মেলন করেছেন। তিনি স্কুলগুলোর অতিরিক্ত সেশন ফি আদায়ের প্রতিবাদে ইতিমধ্যেই সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছেন। তিনি উচ্চ আদালতে এবিষয়ে রিট করেছিলেন। আদাল সেই রিটের প্রেক্ষাপটে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে অতিরিক্ত সেশন ফি আদায় না করার জন্য নির্দেশ দিয়েছে। সেই নির্দেশ যথাযথভাবে পালনের জন্য বগুড়া জেলা প্রশাসককে দায়িত্ব দেয়া হয়। সংবাদ সম্মেলনে আবদুল মান্নান আকন্দ বলেন, বগুড়া জেলা প্রশাসক আদালতের সেই রায়কে আমলে না নিয়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে গলা কাটা ফি আদায়ের সুযোগ করে দিয়েছেন। 

সাম্প্রতি ২রা জুলাই আদালত এসব অবৈধ টাকা ফেরত দিতে প্রতিষ্ঠানগুলোকে নির্দেশ দেয়। এই আদেশ কপি জেলা প্রশাসকের হাতে পৌঁছার দুই মাসের মধ্যে টাকা ফেরত নিশ্চিত করে জেলা প্রশাসকে একটি প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করতে বলা হয়েছে।

আদালতের এই আদেশ সহজে মানবে না প্রতিষ্ঠানগুলো এমন ধারণা থেকেই বগুড়ার অভিভাবকরা দাবি আদায় এবং আদালতের আদেশ বাস্তবায়নের জন্য সংঙ্গবদ্ধ হচ্ছেন। সম্প্রতি বগুড়ার শুকরা কমিউনিটি সেন্টারে সচেতন অভিভাবদের একটি মতবিনিময় সভা, বগুড়ার সাতমাথায় অভিভাবক সমাবেশ, একাধিকবার জেলা প্রশাসকের সাথে বৈঠক এবং একাধিকবার সাংবাদিক সম্মেলন করেছেন তিনি।

অভিভাবকদের অভিযোগ সেশন ফি’র নামে রীতিমতো ডাকাতি করছে বগুড়ার নামিদামী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো। সরকার নির্ধারিত নীতিমালা কেহই তোয়াক্কা করছে না। এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি ব্যাংকের ছাতার মতো গজে ওঠা প্রাইভেট শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর দৌরাত্ম্য সীমা অতিক্রম করেছে। এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে সন্তানদের ভর্তি করার পরে অনেকটা দেউলিয়া হয়ে যাচ্ছে মধ্যবিত্ত পরিবারগুলো। অতিরিক্ত সেশন ফি’ ছাড়াও বাজার থেকে চারগুণ পাঁচগুণ বেশি টাকায় এসব প্রতিষ্ঠান থেকে বই, খাতাসহ শিক্ষা উপকরণ বাধ্য হয়ে কিনতে হয়। এমন কি স্কুল ড্রেসও প্রতিষ্ঠান থেকে নিতে হয়। নামিদামী এসব স্কুল কলেজগুলোতে একবার কোন শিক্ষার্থীকে ভর্তি করানো হলে পর্যায়ক্রমে নানা বাহানায় একের পর এক খাত দেখিয়ে টাকা আদায় করা হচ্ছে। এসব খাতগুলো দেখলে যে কেউ পিলে চমকে যাবে। এসবের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে যে রশিদ বইয়ের মধ্যমে প্রতিষ্ঠানগুলো শিক্ষার্থীদের থেকে টাকা আদায় করে সেই রশিদ বইটাও কিনতে হয় তাদের কাছে। কম্পিউটার ল্যাব, বিদ্যুৎ বিল, খেলাধুলা, পাঠাগার, নেম প্লেট, কেন্দ্র ফি, দরিদ্র তহবিল, সিলেবাস ফি, প্রোসপেকটাস ফি (এটি মূলত প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন)। মজার ব্যাপার হলো- অনেক স্কুল আছে তারা পাঁচ দশ বছরেও ম্যাগাজিন প্রকাশ না করেও প্রতিবছর ম্যাগাজিন ফি নিচ্ছে। ফি নেয়া হচ্ছে মিলাদ মাহফিলেও। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর এমন ডাকাতি কারবার বন্ধ করতে বগুড়ার একজন সমাজসেবী আব্দুল মান্নান আকন্দ হাইকোর্টের শরণাপন্ন হন। তিনি জনস্বার্থে চলতি বছরের ৩রা ফেব্রুয়ারি একটি রিট পিটিশন দায়ের করেন। রিটকারীর আইনজীবী মোশারফ হোসেন মনির জানান, জনস্বার্থে বগুড়ার একজন সমাজসেবী আব্দুল মান্নান আকন্দ হাইকোর্টে রিট পিটিশন দায়ের করেন। ওই রিটের প্রেক্ষিতে গত ২রা জুলাই হাইকোর্টের বিচারক জে.বি.এম হাসান এবং বিচারপতি মো. খায়রুল আলমের নেতৃত্বাধীন বেঞ্চ একটি আদেশ দেন। আদেশে উল্লেখ করা হয় মাত্রাতিরিক্ত সেসন ফি’ গ্রহণকারী বগুড়ার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে সরকারি নীতিমালার বাইরে নেয়া বাড়তি টাকা অভিভাবকদের কাছে ফিরিয়ে দিতে হবে। হাইকোর্টের এই আদেশ বগুড়ার অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের জন্যও প্রযোজ্য হবে। এবিষয়ে রিটকারী আব্দুল মান্নান আকন্দ বলেন, বগুড়ার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সেশন ফি’র নামে রীতিমতো ডাকাতি চলছে। আমি এসব ডাকাতি বন্ধের প্রতিবাদ আজীবন করে যাবো। তিনি আরো বলেন, যদি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো যদি আদালতের রায়কে আবারো অবজ্ঞা করে তাহলে স্কুলগুলোর সামনে গিয়ে অবরোধ সৃষ্টি করা হবে।
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2025
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status