× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, শুক্রবার , ৬ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১০ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

বিএসটিআই’র অনুমোদন ছাড়াই মানহীন এলইডি পণ্যে খুলনার বাজার সয়লাব

বাংলারজমিন

স্টাফ রিপোর্টার, খুলনা থেকে
৩০ জানুয়ারি ২০২০, বৃহস্পতিবার

খুলনা মহানগরীতে বের হলেই চোখে পড়বে রাস্তা দিয়ে ইজিবাইকে মাইকিং করে বিক্রি হচ্ছে এলইডি লাইট। নানা আকর্ষণীয় অফার দিয়ে বিক্রি করা হচ্ছে এ সকল এলইডি লাইট। কিন্তু এ লাইট কিছুদিন যেতে না যেতেই নষ্ট হচ্ছে। ৬ মাসের গ্যারান্টি দেয়া হচ্ছে। কিন্তু তার আগেই এ সকল এলইডি লাইট নষ্ট হলে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না মালিককে। প্যাকেটে বাজার এন্ট্রি কার্ডে নেই কোনো প্রকার ঠিকানা। আর এভাবেই প্রতারণার শিকার হচ্ছে সাধারণ মানুষ। বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী প্রযুক্তি এলইডি।
বিদ্যুৎ খরচ বাঁচাতে সবাই ঝুঁকছে এই এলইডি প্রযুক্তির দিকে। তবে নিম্নমানের এলইডি পণ্যের কারণে প্রতিনিয়ত ঠকছেন ক্রেতারা। আমদানি করা এলইডি পণ্যে নেই মান নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা বিএসটিআইয়ের তদারকিও। ফলে প্রতারিত হলেও এক্ষেত্রে গ্রাহকরা কোথাও অভিযোগেরও সুযোগ পাচ্ছেন না। অপরদিকে বিএসটিআই বলছে অভিযোগ পেলে আইনের আওতায় এনে শাস্তির ব্যবস্থা করা হবে। কোনো প্রকার অনুমতি ছাড়াই নগরীতে মাইক ব্যবহার করছে এলইডি ব্যবসায়ীরা।
প্রচলিত পণ্যের তুলনায় প্রায় ৯০ শতাংশ পর্যন্ত বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী পণ্য এলইডি। তাছাড়া এলইডি পণ্য টেকসইও বটে। একটি এলইডি বাতির স্থায়িত্ব থাকে ৫০ হাজার ঘণ্টারও বেশি। যা সাধারণ বাতির তুলনায় কয়েকগুণ বেশি স্থায়িত্বশীল। আলোর শক্তি, মেয়াদ, তাপমাত্রা, পরিবেশের ওপর প্রভাব সব মিলিয়ে এলইডি এখন সবার পছন্দের প্রথমে। এলইডি পণ্য উৎপাদনের ক্ষেত্রে মান নিয়ন্ত্রণ সংস্থা বিএসটিআইয়ের অনুমোদন বাধ্যতামূলক। তবে আমদানি করা এলইডি পণ্যের ক্ষেত্রে বিশেষ সুযোগ রয়েছে। কোনো ধরনের মান তদারকি ছাড়াই দেশে প্রবেশের সুযোগ থাকায় দেদারছে নিম্নমানের পণ্য প্রবেশ করছে বাজারে। আর সরল মনে ক্রেতারা এসব পণ্য কিনে ঠকছেন। নিম্নমানের এসব পণ্যের ৮০ শতাংশের অবস্থান নগরীর খালিশপুরে আইডিয়াল স্কুলের পাশে সবুজ সংঘ মাঠ সংলগ্ন এলাকায়। এখানেই নামে-বেনামে গড়ে উঠেছে প্রায় ৫০টির মতো ঘরোয়া অবৈধ কারখানা। এর মধ্যে একা ওয়াইন সরকারের রয়েছে ডিজিটাল এবং হাসনাত নামের এলইডি লাইট। যার জন্য প্রায় ২৫টি ইজিবাইক ব্যবহার করা হচ্ছে। ফয়সালের দুইটি ডিনারে প্রায় ৪০টি ইজিবাইকে পাওয়ার এবং ডিজিটাল নাম ব্যবহার করে এলইডি লাইট বিক্রি করছে। কবির বটতলায় সবুজ সংঘ মাঠের পাশে সোহরাবের রয়েছে পাওয়ার এবং হাসনাত নামের এলইডি তৈরির কারখানা। এ মালিকের নামে অঞ্চলে প্রায় ৪০টির মতো ইজিবাইক। খালিশপুরে লিবার্টি হলের সামনে স্থায়ীভাবে মাইক ব্যবহার করে বিক্রি হচ্ছে এ সকল মানহীন এলইডি লাইট। এ ছাড়া বাসার মধ্যে তৈরি হচ্ছে এ সকল মানহীন এলইডি লাইট যা থেকে প্রতারিত হচ্ছে জনগণ এবং হচ্ছে প্রতিনিয়ত শব্দ দূষণ। নগরীতে মাইক ব্যবহার করে এলইডি লাইট বিক্রয়কারী ২০টি গাড়িতে অভিযান চালিয়ে দেখা গেছে গাড়ির এলইডি লাইটের প্যাকেটে নেই কোনো ঠিকানা। নেই মোবাইল ফোন নম্বর। অথচ দেয়া হচ্ছে ৬ মাসের গ্যারান্টি। লাইট নষ্ট হলে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না এ সকল বিক্রেতাদের।
ইজিবাইকে এলইডি লাইট বিক্রয়কারী আবির (ছদ্মনাম) বলেন, আমার জানামতে কোনো গাড়িতে আমাদের কোনো অনুমতি নেই। তবে কীভাবে চলে এমন এক প্রশ্নের জবাবে এই বিক্রেতা বলেন, মালিক ভালোই জানেন তবে আমাদের পুলিশে ধরে না। কারণ জানতে চাইলে এই বিক্রেতা বলেন, আমরা মাইকের মুখটা খুলে ফেলি। যার কারণে দূর থেকে বুঝতেই পারে না যে মাইক আছে কি না। মুজগুন্নী এলইডি লাইট বিক্রয়কারী প্রতিষ্ঠান জব্বার ইলেকট্রনিক্সের মালিক জব্বার মিয়া বলেন, আমরা দোকানে যে সকল এলইডি লাইট বিক্রি করি তার দাম বেশি, তার গ্যারান্টি দিলে একজন ক্রেতা এখানে এসে সেটা পরিবর্তন করে নিতে পারেন। কিন্তু যারা অটোতে করে রাস্তায় বিক্রি করছে, তারা কম দামে মানহীন এ সকল পণ্য বিক্রি করে, একদিকে ক্রেতাদের ঠকাচ্ছে। অন্যদিকে এলইডি লাইট এর প্রতি মানুষের আস্থা হারাচ্ছে।
এক ক্রেতা হাজি মহসিন রোডের ভুক্তভোগী শাওন বলেন, আমি একটি এলইডি লাইট ১০-১৫ দিন হয়েছে কিনেছি। এখন নষ্ট হয়ে গেছে কিন্তু ৬ মাসের গ্যারান্টি দেয়া সত্ত্বেও আমি তাদের গাড়ি খুঁজে পাচ্ছি না। যার কাছে যাই সে বলে এটা আমাদের না।
খুলনা নাগরিক আন্দোলনের মহাসচিব এস এম দেলোয়ার হোসেন বলেন, এলইডি উন্নত প্রযুক্তি। ভালো সেবা পাওয়ার জন্য ক্রেতারা বেশি দামে এলইডি পণ্য কেনেন। কিছুদিন না যেতেই এসব পণ্য নিয়ে নানা অভিযোগ উঠছে। বিদেশি নিম্নমানের এলইডি পণ্যের কারণে দেশীয় শিল্প বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। গ্যারান্টি-ওয়ারেন্টির নানা ফাঁদে ফেলা হচ্ছে ক্রেতাদের। জোরালো তদারকি না থাকলে এলইডি পণ্য থেকে ক্রেতাদের আস্থা উঠে যাবে। বিএসটিআইয়ের মান তদারকি বাড়ানো দরকার। না হলে মানহীন পণ্য কিনে ভোক্তাদের প্রতারিত হবার সম্ভাবনা বাড়বে।
বিএসটিআই’র সহকারী পরিচালক মৃনাল কান্তি বিশ্বাস বলেন, বিএসটিআই অনুমতি ছাড়া এগুলো বাজারজাত করতে পারবে না। তবে আমরা সুনির্দিষ্ট কোনো প্রমাণ পেলে সঙ্গে সঙ্গে অভিযান করে তাদের শাস্তির আওতায় আনতে সক্ষম হবো।
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর