মেহজাবীন নাহার চৌধুরী। রাজধানীর একটি প্রাইভেট স্কুলের প্রথম শ্রেণির ছাত্রী। এবারের গ্রন্থমেলায় ও এসেছে প্রথমবারের মতো। এর আগে কখনো গ্রন্থমেলায় আসা হয়নি। বাবা শফিউল হক চৌধুরীর হাত ধরে যখন সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের শিশুচত্বরে নজর পড়ে তখন বায়না ধরে শিশুচত্বরের ইকরি, হালুম, টিকটিকিদের সঙ্গে খেলা করার, ওদের সঙ্গে কথা বলার। বাবাও মেয়ের আবদার অনুযায়ী সিসিমপুরের পাশে ইকরি, টিকটিকি, হালুমদের কাছে নিয়ে যান। ছোট মেহজাবীন ভীষণ খুুশি টিভি পর্দার এসব কার্টুন দেখে। হ্যালো- ইকরি বলে ডাক দেয় ও।
কার্টুনগুলোর সঙ্গে চিৎকার চেঁচামেচিতে সময় কাটায় অন্তত ৩০ মিনিট।
শুধু মেহজাবীন নাহার চৌধুরী নয়, মেলায় আগত শিশু কিশোরদের অন্যতম আকর্ষণ শিশুচত্বরের এ আয়োজন। সকলে এদের সঙ্গে খেলা করে। আর কোমলমতি এসব শিশুদের খেলা মেলার সৌন্দর্য বাড়িয়েছে কয়েকগুণ। গতকালও ছিল মেলা বেশ জমজমাট। ভালোবাসা দিবসের রঙ যেন এদিনও মেলায় রয়ে গেছে। মেলায় আগত দর্শনার্থীদের প্রায় অধিকাংশই বই হাতে বাসায় ফিরেছেন। সকাল ১১টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত ছিল মেলার শিশুপ্রহর। এসময় শিশু-কিশোরদের ব্যাপক উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায় গ্রন্থমেলায়। মেলার শিশুচত্বর ছিল জমজমাট। অন্য এলাকায়ও দর্শনার্থীদের ভিড় ছিল বেশ লক্ষণীয়। বিকেলেও মেলায় দর্শনার্থীদের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো।
ভালোবাসা দিবসের একদিন পরও মেলায় ছিল দিবসটির ছাপ। লাল শাড়ি, পাঞ্জাবিতে অনেকে হাজির হয়েছেন এদিন মেলায়। তরুণীর খোঁপায় ফুলের মঞ্জুরি, মাথায় বেণী শোভা পেয়েছে। বিকিকিনিও ছিল মেলায় বেশ ভালো। ঐতিহ্য প্রকাশনীর কর্ণধার আরিফুর রহমান নাঈম বলেন, বেচাবিক্রি ভালোই চলছে। তবে গতকাল থেকে একটু কম। অন্য প্রকাশের জনসংযোগ কর্মকর্তা আলা উদ্দিন টিপু বলেন, গতকালকের মতো আজও বিক্রি ভালো। আশা করছি সন্ধ্যার পর আরো বাড়বে। এদিকে সকালে ও বিকেলে শিশুচত্বরেও ভালো বেচাবিক্রি হয়েছে। তবে প্রত্যাশা অনুযায়ী হচ্ছে না বলে মনে করেন চত্বরের অনেক প্রকাশক। আদিগন্ত প্রকাশনীর স্বত্তাধিকারী ফারজানা কাইয়ুম বলেন, মেলায় আমাদের স্টলটি অনেক ভেতরে পড়ে গেছে তাই পাঠক এদিকে কম আসেন। আজকে ছুটির দিনেও এখানে বেচাবিক্রি ভালো না। টোনাটুনির সেলসম্যান মো. বাদল বলেন, বেচাবিক্রি ভালো চলছে। কিশোর ভুবনের পরিচালক বিনয় কুমরার রায় বলেন, বেচাবিক্রি ভালো, তবে আরো ভালো হওয়ার আশা করেছিলাম। কথা হয় আয়েশা নওরীন দুর্দনার সাথে। ও পড়ছে রাজধানীর এফএম স্কুলের পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রী। গ্রন্থমেলায় এসেছে বাবার সঙ্গে। কিনেছে দু’টি বই। যার একটি আমাদের পাখিরা। জানতে চাইলে ও বলে, মেলায় এসে খুব ভালো লাগছে। দু’টি বই কিনেছি, আরো কিনবো। এদিকে মেলায় গত শুক্রবার নতুন বই এসেছে ৩৬৯টি। এ নিয়ে চলতি মেলায় নতুন বইয়ের সংখ্যা ১ হাজার ৯৯১টি। প্রতিদিনই মেলায় নতুন নতুন বই নিয়ে আসছেন প্রকাশকরা। গতকাল সকাল ১০টায় মেলায় অনুষ্ঠিত হয় শিশু-কিশোর সংগীত প্রতিযোগিতার চূড়ান্ত পর্ব। বিকেল ৪টায় গ্রন্থমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় শাহ্জাহান কিবরিয়া রচিত জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। এতে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন আনজীর লিটন। আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন হরিশংকর জলদাস এবং খালিদ মারুফ। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন অধ্যাপক সৈয়দ মোহাম্মদ শাহেদ। সন্ধ্যায় ছিল কবিকণ্ঠে কবিতাপাঠ, আবৃত্তি এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।