শিক্ষকদের কাছে জিম্মি শিক্ষার্থীরা। লক্ষ্মীপুরে পাঠ্য তালিকার বাইরে সরকারি নির্দেশনা অমান্য করে প্রতিটি বিদ্যালয়ে চলছে নিষিদ্ধ গাইড বইয়ের ছড়াছড়ি। তবে শিক্ষার্থীরা বলছে, শ্রেণিকক্ষের শিক্ষকদের নির্দেশে বিভিন্ন কোম্পানির গাইড বই কিনতে বাধ্য হচ্ছে তারা। জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা বলছেন, সম্পূর্ণরূপে গাইড বই নিষিদ্ধ করা হয়েছে। যে শিক্ষক এ গাইড কিনতে উৎসাহ বা বাধ্য করছেন, তদন্ত করে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।
জানা যায়, গাইড বইয়ের নমুনা কপি (স্যাম্পল) ও বুকলিস্ট বিভিন্ন লাইব্রেরি ও পাবলিকেশন্স তাদের প্রতিনিধিদের মাধ্যমে জেলার সব কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পৌঁছানো হয়েছে। নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে বিনামূল্যে দেয়া বইয়ের বাইরে চলতি শিক্ষাবর্ষে প্রাথমিক ১ম শ্রেণি থেকে ৫ম শ্রেণি পর্যন্ত এবং মাধ্যামিক ষষ্ঠ শ্রেণি থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত বোর্ড বইয়ের পাশাপাশি বিভিন্ন প্রকাশনীর গাইড বইয়ে বিদ্যালয় সয়লাব হয়ে গেছে।
একই বইতে প্রতিবছর মোড়ক পরিবর্তন করে নিম্নমানের বই বাজারে বিক্রি করছে। বিভিন্ন প্রকাশনার মালিক ও এজেন্টরা স্কুল মাদ্রাসার শিক্ষকদের মোটা অঙ্কের টাকা ঘুষ দিয়ে এসব নিষিদ্ধ গাইড বই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্র-ছাত্রীদের কিনতে বাধ্য করছে।
যদি গাইড বই না কিনে ছাত্র-ছাত্রীদের মানসিক ও শারীরিক নির্যাতন করেন শিক্ষকরা। তাই বাধ্য হয়ে অভিভাবকরা নোট বই কিনছেন।
সদর উপজেলার বাংগাখাঁ, মান্দারী বহুমুখী, রসুলগঞ্জ, দালাল বাজার এনকে উচ্চ বিদ্যালয়, কামালখোলা হাইস্কুল, শহীদ স্মৃতি একাডেমি, আদর্শ সামাদ সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় ও লক্ষ্মীপুর সরকারি বালিকা বিদ্যালয়সহ বেশ কয়েকটি বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, প্রতিটি বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের হাতে হাতে বিভিন্ন প্রকাশনার গাইড বই। এইভাবে শ্রেণিকক্ষে এসব নিষিদ্ধ গাইড বই নিয়ে যাচ্ছে শিক্ষার্থীরা। পাশাপাশি শিক্ষকদের হাতেও একই চিত্র। শুধু যে মাধ্যমিক বিদ্যালয়, তা নয়। প্রতিটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো ছাড়াও রয়েছে মাদ্রাসা ও বেসরকারি স্কুল।
এ সময় শিক্ষার্থীরা জানান, প্রতিটি শ্রেণিকক্ষের শিক্ষক ও প্রধান শিক্ষক নির্ধারিত প্রকাশনার গাইড কিনতে বাধ্য করা হচ্ছে। গাইড নিয়ে বিদ্যালয়ে না এলে নানা অজুহাতে মানসিক চাপ সৃষ্টি করার অভিযোগ শিক্ষার্থীদের। তাই বাধ্য হয়ে গাইড বই নিয়ে বিদ্যালয়ে আসছি।
এদিকে অভিভাবকরা জানান, সন্তানদের চাপের কারণে প্রতিটি বিষয়ে একাধিক প্রকাশনার গাইড বই কিনতে হচ্ছে। এতে করে একদিকে যেমন সন্তানদের মানসিক চাপ বাড়ছে, অন্যদিকে অতিরিক্ত অর্থ আদায় করে নিচ্ছে বিভিন্ন কোম্পানির লোকজন। অভিযোগ রয়েছে, শিক্ষক সমিতির নেতা ও বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকরা প্রকাশনার লোকজনের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের অর্থ নিয়ে এসব গাইড বই শিক্ষার্থীদের নিতে বাধ্য করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন তারা। তবে গাইড বইয়ের কথা স্বীকার করে শিক্ষকরা বলছেন ভিন্ন কথা। তাদের দাবি, সৃজনশীল প্রশ্নপত্র হওয়ার কারণে মূলত গাইড বই নিতে বলা হচ্ছে। কিন্তু কোনো চাপ দেয়া হচ্ছে না। শিক্ষার্থীদের সুবিধার জন্য করা হচ্ছে। তবে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. মুনছুল আলী চৌধুরী ও সদর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আবু তালেব বলছেন, সম্পূর্ণরূপে গাইড বই নিষিদ্ধ করা হয়েছে। যে শিক্ষক এ গাইড কিনতে উৎসাহ বা বাধ্য করছেন, তদন্ত করে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।
সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শফিকুর রিদোয়ান আরমান শাকিল বলেন, যেসব শিক্ষকরা অর্থের বিনিময়ে শিক্ষার্থীদের গাইড বই কিনতে বাধ্য করছে, যদি এসব ঘটনার প্রমাণ পাওয়া যায়, তাহলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। পাশাপাশি প্রতিটি বাজারে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে অভিযান পরিচালনা করা হবে বলেও জানান তিনি।