× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, বৃহস্পতিবার , ১২ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৬ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

‘ভাষা নিয়ে বঙ্গবন্ধুর চেতনাটি চাপা পড়ে গেছে’

অনলাইন

স্টাফ রিপোর্টার
(৪ বছর আগে) ফেব্রুয়ারি ১৬, ২০২০, রবিবার, ৩:২৭ পূর্বাহ্ন

দেশের উচ্চ আদালতে বিচারকদের বাংলায় রায় লিখতে উৎসাহিত করে হাইকোর্টের বিচারপতি মো. আবু জাফর সিদ্দিকী বলেছেন,‘উচ্চ আদালতে বাংলায় রায় লিখতে আইনি বাংলা পরিভাষা নেই বলে যে অজুহাত দাঁড় করানো হয়, সেগুলো কোনো সমস্যা নয় বরং প্রকৃত সমস্যা হয়তো চেতনা ও পারিশ্রমিকের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট। বঙ্গবন্ধু তো বলেছিলেন, ‘ভুল সঠিক যাই হোক, আপনারা বাংলা চালু করেন।’ বঙ্গবন্ধুর অনেক চেতনা বাস্তবায়নের ভিড়ে ভাষার চেতনাটি কিভাবে যেন চাপা পড়ে গেছে, যা খুবই দুঃখজনক।

শনিবার রাজধানীর মতিঝিলে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড মিলনায়তনে শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে অয়োজিত ‘আদালতে বাংলা ভাষার প্রয়োগ: পাঠ পর্যালোচনা’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিচারপতি এসব কথা বলেন। পিলখানা হত্যাকাণ্ড মামলায় বাংলা ভাষায় বিশ্বের সর্ববৃহৎ রায় প্রদানকারী এই বিচারক বলেন,রায়টি আমি বাংলায় লিখেছি। কারণ আমার মনে হয়েছে, এসএসসি বা এইচএসসি পাশ একজন ব্যক্তি, আমি যাকে মৃত্যুদণ্ড বা অন্যকোনো দণ্ড দিচ্ছি, রায়টি যদি ইংরেজিতে লেখা হয় তিনি সেটি বুঝবেনই না, কোন যুক্তিতে কেন তাকে দণ্ডটি দেয়া হলো। তারাই যদি ইংরেজি না বোঝেন গ্রামবাংলার অল্প শিক্ষিত, পড়াশোনা না জানা মানুষের ক্ষেত্রে কী অবস্থা হবে? আমি মনে করি, কেন কি রায় দেয়া হলো, বিচারক হিসেবে বাদী ও বিবাদী উভয়পক্ষের কাছেই সেটি স্পষ্টভাবে তুলে ধরার দায়বদ্ধতা রয়েছে। মাতৃভাষাই পারে খুব সহজেই সে দায়মুক্তি দিতে।

সেমিনারে ডেপুটি অ্যার্টনি জেনারেল জেসমিন সুলতানা শামসাদ বলেন, স্বাধীনতার পর আমরা সুবর্ণ জয়ন্তী পালন করতে যাচ্ছি, অথচ আমাদের মায়ের ভাষাটিই সর্বস্তরে পৌঁছাতে পারেনি। এটি দুঃখজনক।
এ সময় তিনি উচ্চ আদালতে বাংলা ভাষা ব্যবহারের কিছু সীমাবদ্ধতা তুলে ধরে আইনের উচ্চতর গ্রন্থগুলো বাংলায় অনুবাদের পরামর্শ এবং আদালতের বিচারপতি ও আইনজীবীদের নিয়ে এ সংক্রান্ত একটি সেমিনার আয়োজনের পরামর্শ দেন।

বাংলা একাডেমির উপপরিচালক ড. তপন বাগচী বিচারপতি মো. আবু জাফর সিদ্দিকীর পিলখানা হত্যাকাণ্ড মামলার রায়ের উদাহরণ দিয়ে বলেন, পিলখানা হত্যা মামলায় রায়টি ১৬ হাজার ৫৫২ পৃষ্ঠা, যেখানে ২৭ লাখ ৯০ হাজার ৪৬৮টি শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে। এতো বড় রায় সম্পূর্ণ বাংলায় লেখা হয়েছে। এছাড়া বিচারপতি হাবিবুর রহমান, খায়রুল হক, আশরাফুল কামাল, শেখ মো. জাকির হোসেন সব রায় বাংলায় দিয়েছেন। তাহলে আইনি পরিভাষা নেই বলে বাংলায় রায় লেখা সম্ভব না, এই যুক্তি ধোপে টেকে না। বঙ্গবন্ধুর এত স্বপ্ন বাস্তবায়ন করি, কিন্তু এই স্বপ্নটি বাস্তবায়ন করতে কিসের এত বাধা, কেন এত লজ্জা?

এর আগে অনুষ্ঠানের শুরুতে শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উদযাপন কমিটির আহ্বায়ক ও সরকারি বাঙলা কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. ফেরদৌসী খান তার বক্তব্যে বলেন, যে গৌরবময় আন্দোলনের মধ্যদিয়ে মাতৃভাষার দাবি অর্জিত হয়েছে, মিলেছে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি, সেই ভাষা সর্বস্তরে চালু হলে তা আমাদের ছোট করবে না বরং তা হবে বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ ও চেতনা বাস্তবায়নের একধাপ অগ্রগতি।

এর আগে সেমিনারে উচ্চ আদালতে বাংলা ভাষার ব্যবহার নিয়ে একটি গবেষণাধর্মী প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ঢাকা কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. আশেয়া বেগম। তার ভাষ্য, জনগণের বিচারিক অধিকার নিশ্চিত করার জন্য আদালতে গণমানুষের বোধগম্য ভাষা তথা বাংলা ভাষা ব্যবহার জরুরি। বাংলায় রায় লেখা কোনো দুর্বলতা নয়, বিচারকদের এই মানসিকতা তৈরি করতে হবে।

সেমিনারে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন বাংলা ভাষা শিক্ষক পর্ষদের সভাপতি ড. রতন সিদ্দিকী, আইন কমিশনের মুখ্য গবেষণা কর্তকর্তা (জেলা জজ) ফউজুল আজিম প্রমুখ।
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর