× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, শুক্রবার , ৬ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১০ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

অন্ধজনই আলো ছড়াচ্ছে গ্রন্থমেলায়

এক্সক্লুসিভ

মুনির হোসেন
১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২০, সোমবার

ওদের চোখে আলো নেই, কিন্তু মনের আলোতে ওরা বিশ্ব দেখে। সমাজের চোখে ওরা দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী, কিন্তু মনের জোরে ওরা দৃষ্টিজয়ী। সমাজ বলে ওরা অক্ষম, কিন্তু ওরা প্রমাণ করেছে- ‘না, আমরা ভিন্নভাবে সক্ষম।’ সুযোগ পেলে অন্য যে কাউকে ছাড়িয়ে যেতে পারে তারা। সকল বাধা উপেক্ষা করে এ সমাজে অন্য দশজন মানুষের মতো বেঁচে থাকতে চায় ওরা। অন্য দশজন মানুষের মতোই পড়তে চায় বই, আলোকিত করতে চায় নিজের জীবনকে। আর সেই আলোয় আলোকিত করতে চায় এ ভুবন। কিন্তু বরাবরই সুযোগের কাছে পিছুটান তাদের। তাইতো এসব দৃষ্টিহীনদের পাছে স্পর্শ ব্রেইল প্রকাশনা।
গত ১১ বছর যাবৎ যারা কাজ করে যাচ্ছে দৃষ্টিহীনদের জন্য ব্রেইল প্রকাশনার। ‘মানুষ দৃষ্টিহীন বলেই অন্ধ নয়, মানুষ বরং প্রজ্ঞাহীন বলেই অন্ধ’ স্লোগানে দৃষ্টিহীনদের জ্ঞান চর্চায় মুখ্য ভূমিকা পালন করছে এ প্রতিষ্ঠান। অমর একুশে গ্রন্থমেলায় বরাবরের মতো ওদের নিয়ে হাজির স্পর্শ ব্রেইল প্রকাশনা। মেলার বাংলা একাডেমি চত্বরে প্রস্থান গেইটের পাশেই স্পর্শ ব্রেইলের স্টল। ২০০৯ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকেই প্রতিবারই তারা গ্রন্থমেলায় হাজির হয় নতুন নতুন ব্রেইল নিয়ে। আর সেখানে হাজির জ্ঞানপিপাসু দৃষ্টিহীন শিক্ষার্থীরা। ওদের ভিড় এখানে। নতুন আসা ব্রেইলগুলো তারা স্পর্শের মাধ্যমে পড়ে। স্পর্শ ব্রেইলের উদ্যোক্তা নাজিয়া জাবীন। যিনি শুধু ব্রেইলই প্রকাশ করে যাচ্ছেন না, বরং সমাজে একটা বিপ্লব ঘটাতে চান। তিনি চান- প্রতিটা প্রকাশনী কমপক্ষে ১টা করে ব্রেইল প্রকাশ করুক। অন্য দশজন ব্যক্তির মতো দৃষ্টিহীনদেরও জ্ঞান চর্চার সুযোগ করে দিক। নতুন বইয়ের ঘ্রাণ নিক এরাও। এ লড়াইয়ে তিনি বরাবরই বাংলা একাডেমিকে পাশে চেয়েছেন। দাবি করেছেন- বাংলা একাডেমি যেন প্রকাশনাগুলোকে বাধ্য করে দেয় যেন একটি করে ব্রেইল প্রকাশ করার। কিন্তু সে দাবি দাবিই থেকে গেল। এখনো বাংলা একাডেমি এমন কোন উদ্যোগ নেয়নি। কিন্তু থেমে নেই নাজিয়া জাবীন। কাজ করে যাচ্ছেন নিজের গতিতে। চলতি গ্রন্থমেলায়ও স্পর্শ ব্রেইল বেশ কয়েকটি নতুন ব্রেইল নিয়ে এসেছে। যেগুলো স্পর্শ করে পড়ছে দৃষ্টিহীনরা। স্টলে দৃষ্টিহীন শিক্ষার্থীদের ভিড়। যারা রাজধানীর বিভিন্ন স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। কথা হয়, স্টলে থাকা গাজীপুর সমন্বিত শিক্ষা কার্যক্রমের দশম শ্রেণির ছাত্র তরিকুল ইসলাম নাজিমের সঙ্গে। চলতি মেলায় যিনি স্পর্শ ব্রেইলে কাজ করছেন শুরু থেকে। বলেন, সাহিত্য চর্চার জায়গা নেই আমাদের। ব্রেইল প্রকাশনা আমাদের কাছে তীর্থস্থান। পাঠ্যপুস্তকের বাইরে আমাদের জ্ঞান আহরণের মাধ্যম ব্রেইল। তিনি দাবি করেন, প্রত্যেক প্রকাশনা যেন মেলায় কমপক্ষে একটি করে ব্রেইল প্রকাশ করে। বলেন, আমরা পড়তে চাই। সরকারের পাশাপাশি বিভিন্ন সংস্থাকে এগিয়ে আসতে হবে এ উদ্যোগে। স্টলে কাজ করছেন ইডেন মহিলা কলেজের ছাত্রী লিয়া আক্তার। বলেন, এসমস্ত দৃষ্টিহীনদের জন্য কাজ করতে পেরে ভালো লাগছে। কারণ আমরাতো সুস্থ মানুষ, কিন্তু ওদের নিয়ে ভাবার মতো কেউ নেই। এবারের মেলায় আমি এখানে সময় দিচ্ছি মূলত মানুষের সচেতনতা বাড়ানোর জন্য। আমি চাই সব মানুষ নিজ নিজ জায়গা থেকে এদের জন্য কাজ করুক। ওদের নিয়ে কাজ করলে মনের তৃপ্তি পাওয়া যায়। এদিকে মেলায় গত শনিবার নতুন বই এসেছে ২০৩টা। এনিয়ে গত ১৫দিনে মেলায় নতুন বইয়ের সংখ্যা ২ হাজার ১৯৪টি। গতকাল বিকেল ৪টায় গ্রন্থমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় পিয়াস মজিদ রচিত মুক্তিযুদ্ধ বঙ্গবন্ধু ও বাংলা একাডেমি শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। এতে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন শাহিদা খাতুন। আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন শিহাব সরকার এবং ইসরাইল খান। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন। সন্ধ্যায় ছিল কবিকণ্ঠে কবিতাপাঠ, আবৃত্তি এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর