দু’দিনের ভারত সফর নিয়ে ব্যক্তিগতভাবে তিনি এতটাই উৎসাহী যে, গত কয়েকদিনে একাধিকবার
টুইট করেছেন। সফর নিয়ে প্রবল উৎসাহ প্রকাশ করেছেন। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আমন্ত্রণে আগামী ২৪-২৫শে ফেব্রুয়ারি দুদিনের জন্য ভারত সফরে আসছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প। সঙ্গে আসছেন স্ত্রী মেলানিয়া ট্রাম্পও। তবে ট্রাম্প এই সফরে গুরুত্ব দিয়েছেন নরেন্দ্র মোদির নিজের রাজ্য গুজরাটকে। আগ্রহ দেখিয়েছেন গুজরাটের আহমেদাবাদ সফরের। আর তাই আহমেদাবাদ সফরে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে কয়েক লাখ মানুষ স্বাগত শুভেচ্ছা জানাবেন শুনে ট্রাম্প নিজেও বেশ চমকিত। তবে সফরের আটদিন আগে মার্কিন প্রেসিডেন্টের ভারত সফরের নাম পাল্টে ফেলা হয়েছে।
ছিল ‘কেমছো ট্রাম্প’ (কেমন আছো ট্রাম্প)। পাল্টে করা হয়েছে ‘নমস্তে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প’। জানা গেছে, ডনাল্ড ট্রাম্পের এই ভারত সফরকে জাতীয়ভাবে তুলে ধরার জন্যই ভারত সরকার এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। গুজরাট সরকারের ওয়েবসাইটে জানানো হয়েছে, ‘কেমছো ট্রাম্প’ শুনতে খুবই আঞ্চলিক লাগছে। কিন্তু ট্রাম্পের ভারত সফর একটা জাতীয় অনুষ্ঠান। সে কারণেই অনুষ্ঠানের নাম বদলানো হয়েছে। ট্রাম্পের সফরের প্রথম দিনে তিনি আসবেন আহমেদাবাদে। গুজরাটে নির্মিত বিশ্বের সবচেয়ে বড় ক্রিকেট স্টেডিয়াম উদ্বোধন করবেন তিনি। তার আগে ওই দিন আহমেদাবাদ বিমানবন্দর থেকে সবরমতী আশ্রম পর্যন্ত সাত কিলোমিটার রাস্তা যৌথভাবে রোড-শো করবেন মোদি এবং ট্রাম্প। তবে ট্রাম্পের এই সফরে যেন কোনো কমতি না থাকে তার দিকেই নজর দিচ্ছে গুজরাট সরকার। ট্রাম্পের এই সফরে প্রায় ১০০ কোটি রুপি খরচ করা হচ্ছে। ঢেলে সাজানো হচ্ছে রাস্তাঘাট। শহর সৌন্দর্যায়নের জন্যও খরচ হচ্ছে বিপুল। জানা গেছে, প্রায় ৮০ কোটি রুপি খরচ হচ্ছে নতুন রাস্তা তৈরির জন্য। ৬ কোটি রুপি খরচ হচ্ছে শহর সাজাতে। ৪ কোটি রুপি খরচ হচ্ছে মোদি-ট্রাম্প রোড শোয়ের জন্য। ১২-১৫ কোটি খরচ হবে মার্কিন প্রেসিডেন্টের নিরাপত্তার জন্য। ৭-১০ কোটি রুপি খরচ হবে মোতেরা স্টেডিয়াম উদ্বোধনে আসা অতিথিদের জন্য। তবে ট্রাম্পের এই সফরে দিল্লিতে বাণিজ্য ও প্রতিরক্ষা চুক্তি হওয়া নিয়ে আলোচনা তুঙ্গে। ২৫শে এপ্রিল দিল্লিতে ভারতের শীর্ষস্থানীয় ব্যবসায়ী ও শিল্পপতিদের সঙ্গে বৈঠক করবেন ট্রাম্প। ভারতের শিল্পমহল আশা করছেন, একটি মিনি বাণিজ্য চুক্তি হওয়া এবং মার্কিন শিল্পমহলের কাছ থেকে আরো বিনিয়োগ পাওয়ার প্রতিশ্রুতির সম্ভাবনা রয়েছে। বণিক সংস্থা কনফেডারেশন অব ইন্ডিয়ান ইন্ডাস্ট্রির ডিরেক্টর জেনারেল চন্দ্রজিৎ ব্যানার্জি বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রে ভারতের বিনিয়োগ বৃদ্ধি এবং অতিরিক্ত কর্মসংস্থানের বিষয়টি নিয়ে ভারতে শিল্প সংস্থার প্রতিনিধিরা আলোচনা করবেন।
তবে শিল্পপতিরা মিনি বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে আশাবাদী হলেও দুই দেশের মধ্যে এ ব্যাপারে দুই দেশের মধ্যে অনেক মতপার্থক্য রয়েছে। এই মতপার্থক্য মেটাতে গত কয়েক দিন ধরে ভারতের বাণিজ্যমন্ত্রী পীযূষ গোয়েল যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য প্রতিনিধি রবার্ট লাইথিজথরের সঙ্গে একাধিকবার টেলিফোনে আলোচনা করেছেন। কিন্তু সূত্রের খবর সেই আলোচনায় বিশেষ অগ্রগতি হয়নি। ভারতের বক্তব্য, যুক্তরাষ্ট্র ভারতীয় ইস্পাত ও অ্যালুমিনিয়াম পণ্যের উপরে শুল্ক প্রত্যাহার করে নিক। সেইসঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রে ভারতীয় বহু পণ্যের বিনা শুল্কে রপ্তানির সুবিধা বহাল করা হোক। এ ছাড়াও ভারত গাড়ি, গাড়ির যন্ত্রাংশ, ইঞ্জিনিয়ারিং ও কৃষিজাত পণ্যের খোলা বাজার চেয়েছে। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্র চাইছে ভারতে কৃষিজাত পণ্য, ডেয়ারি, চিকিৎসা যন্ত্রের খোলা বাজার। দাবি জানানো হয়েছে ভারত চিকিৎসা যন্ত্র ও ডিজিটাল পণ্যে বাড়তি শুল্ক প্রত্যাহার করে নিক। ফলে বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে ধোঁয়াশা রয়েই গিয়েছে। এই সফরে কোনো বাণিজ্য চুক্তি না-হলে ভারত-মার্কিন সম্পর্ক বড় ধাক্কা খেতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন ট্রাম্প প্রশাসনের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া সংক্রান্ত সহ-সচিব অ্যালিস ওয়েলস। ২০১৮-১৯ সালে ভারত থেকে যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি হয়েছে ৫,২৪০ কোটি ডলার মূল্যের পণ্য। কিন্তু ভারতে যুক্তরাষ্ট্র রপ্তানি করেছে ৩,৫৫০ কোটি ডলারের পণ্য। ফলে ভারতের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রে বাণিজ্য ঘাটতি আগের তুলনায় কমলেও তা আরো কমাতে চাইছে ট্রাম্প প্রশাসন। কিন্তু দু’পক্ষের মধ্যে চুক্তি না হলে তা বাস্তবায়িত হওয়া নিয়ে সংশয় রয়েছে।