× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, মঙ্গলবার , ১০ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৪ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

সব হারানো মমতাজের জীবনযুদ্ধ

বাংলারজমিন

নূরুজ্জামান মোল্লা, বন্দর (নারায়ণগঞ্জ) থেকে
২০ ফেব্রুয়ারি ২০২০, বৃহস্পতিবার

ভূমিহীন এক নারী মমতাজ বেগম। পিতাকে হারান ৯ বছর বয়সে। ১০ বছর বয়সে মা নুরজাহান ছোট ছেলেকে ফেলে রেখে অন্যত্র গিয়ে সংসার শুরু করেন। ১৪ বছর বয়সে বিয়ে হয় তার। ৮ মাসের গর্ভে সন্তান রেখে পালিয়ে যায় স্বামী মতিউর রহমান। একমাত্র পুত্রকে লালন পালন করতে ইটভাটার ইট তৈরির কাজ করে সন্তানকে বড় করেছেন।  লিভারজনিত রোগে সেই ছেলে ১৮ বছর বয়সে চলে গেছে না ফেরার দেশে। সব হারিয়ে মানসিক শারীরিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়লে খেয়ে বেঁচে থাকতে দূরবর্তী আত্মীয়স্বজনরা দুটি ব্যাটারিচালিত রিকশা কিনে দেন তাকে। সেই দুই রিকশা ভাড়ার টাকায় চলতো চিকিৎসা ও ওষুধসহ যাবতীয়  খরচ।
চালক বেশি মুনাফার আশায় যাত্রী নিয়ে ওঠে মহাসড়কে।  থ্রিহুইলার যানবাহন মহাসড়কে ওঠা নিষিদ্ধ থাকায় দুই দফায় রিকশা দুটি  নিয়ে গেছে হাইওয়ে পুলিশ। শেষ সম্বল রিকশা হারিয়ে অর্থের অভাবে চিকিৎসা ও ওষুধ দূরের কথা তিন বেলা খাবার জুটছে না এখন। সব হারিয়ে খেয়ে বেঁচে থাকার আকুতি নিয়ে সর্বমহলের দ্বারে দ্বারে ঘুরছে একটু সহযোগিতার আশায়। বেঁচে থাকার জীবন যুদ্ধে সংগ্রামী মমতাজ বেগম নারায়ণগঞ্জ বন্দর উপজেলার ধামগড় ইউপির হালুয়াপাড়া গ্রামের মৃত ছামসুদ্দিন ছামু’র মেয়ে। বর্তমানে ছোট ভাই  মো. সম্ভর আলীর একমাত্র  শিশু কন্যা সুমাইয়াকে নিয়ে ৮শ’ টাকা ভাড়া বাসায় ছোট একটি কক্ষে বসবাস। টাকার অভাবে দুদিনের অনাহার অসহায় মমতাজ বেগম বুধবার সকালে  রিকশা  আনার আকুতি জানান। এসময় মমতাজ বলেন, বাবা মারা গেছে, মা চলে যাওয়ায় ছোট বেলা থেকে মা-বাবার অনাদরে অবহেলায় খেয়ে না খেয়ে বড় হই। কিশোরী বয়সে বিয়ে হয়েছিলো। ছোট ভাই সম্ভুর আলীর ভবিষ্যত চিন্তা করে স্বামীর বাড়িতে যায়নি। বিয়ের এক বছরের মধ্যে পেটে সন্তান চলে আসে। গর্ভে ৮ মাসের সন্তান রেখে স্বামী মতিউর রহমান পালিয়ে যায়। স্বামীর নাম মতিউর রহমান এ ছাড়া কোনো ঠিকানা জানা নেই। জন্ম হয় ছেলে সন্তান। নাম রাখা হয় মো. শুভ।  শিশুকাল থেকে শুভ’র অসুখ লেগেই থাকতো। নিরুপায় হয়ে ইটভাটায় ইট তৈরির কাজ শুরু করি  । শিশু সন্তানের চিকিৎসা ও লালন পালন করতে হয়েছে। ছেলে শুভ’র বয়স যখন  ১২-১৩। তখন বড় অসুখে পড়ে। ধার দেনায় চলে  ছেলের চিকিৎসা। ধরা পড়ে লিভার রোগ। ৪-৫ বছর  লিভারের রোগে ভোগে অবশেষে ছেলে মারা যায়। এরপর শারীরিক ও মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়লে  দুই ব্যাটারিচালিত দুই পুরাতন অটোরিকশা  কিনে দেন আত্মীয়রা। দুই রিকশা ভাড়ার টাকায় চিকিৎসাসহ চলতো খাওয়া খরচ। রিকশা চালক বেশি টাকা পাওয়ার আশায় রিকশা নিয়ে ওঠেন ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে। মদনপুর এলাকা থেকে কাঁচপুর হাইওয়ে থানা পুলিশ রিকশা নিয়ে যায়। দুদিন পর বাকি রিকশা নিয়ে গেছে পুলিশ। ফলে টাকার অভাবে চিকিৎসা বন্ধ এবং খেয়ে না খেয়ে চলছে জীবন। কাঁচপুর হাইওয়ে থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. মোজাফ্‌ফর হোসেন জানান, সিএনজি, অটো রিকশা নসিমন, টমটমসহ  থ্রি হুইলার মহাসড়কে চলাচল নিষিদ্ধ। মহাসড়কে রিকশা ওঠলেই পুলিশ ধরে নিয়ে আসবে। কোনটি গরিবের  রিকশা কোনটি বড়লোকের রিকশা এটা দেখা সম্ভব না। উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে বিষয়টি দেখবো।
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর