× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, শুক্রবার , ৬ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১০ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

ময়নাতদন্ত রিপোর্টে আটকা চুড়িহাট্টার মামলা

শেষের পাতা

শুভ্র দেব
২০ ফেব্রুয়ারি ২০২০, বৃহস্পতিবার

চকবাজারের চুিড়হাট্টার অগ্নিকাণ্ডে হতাহতের মামলায় কোনো অগ্রগতি  নেই। অনেকটা ঢিমেতালে ভয়াবহ ও মর্মান্তিক ওই অগ্নিকাণ্ডের মামলার তদন্ত চলছে। ওই অগ্নিকাণ্ডে ৭১ জনের প্রাণহানি হয়েছিলো। অথচ ঘটনার এক বছর পরেও তদন্ত সংশ্লিষ্টরা আদালতে কোনো তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে পারেননি। শুধুমাত্র ময়নাতদন্ত রিপোর্টের কারণে এই মামলার তদন্ত প্রতিবেদন আটকে আছে। ইতোমধ্যে প্রতিবেদন জমা দেয়ার তারিখ নয়বার পিছিয়েছে। আদালত প্রতিবেদন জমা দেয়ার পরবর্তী তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে আগামী ২৬শে ফেব্রুয়ারী। তবে এই তারিখেও প্রতিবেদন জমা হবে কিনা সেটি সঠিকভাবে বলতে পারছেন না কেউ।
এই মামলার প্রধান দুই আসামীও উচ্চ আদালত  থেকে জামিনে মুক্ত হয়ে দিব্যি ঘুরে বেড়াচ্ছেন। তদন্ত কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ঢাকা মেডিকেলের ফরেনসিক বিভাগ ময়নাতদন্ত রিপোর্ট দিতে দেরী করলে বিকল্প চিন্তা করা হবে।

গত বছরের ২০শে ফেব্রুয়ারী রাতে চকবাজার থানার চুড়িহাট্টা মোড়ের চারতলা ভবন ওয়াহেদ ম্যানশনের সামনে আকস্মিক অগ্নিকাণ্ডর ঘটনা ঘটে। ওই ঘটনায় ৭১ জন নারী পুরুষ ও শিশুর মৃত্যু হয়। ফায়ার সার্ভিসের ৩৭টি ইউনিট প্রায় ১৪ ঘণ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। অগ্নিকাণ্ডের পরপরই একটি সাধারণ ডায়েরি করা হয়েছিলো। পরে অগ্নিকাণ্ডে নিহত চকবাজারের ওয়াটার ওয়াকর্স রোডের ৩২/৩৩ নম্বর বাড়ির বাসিন্দা মো. জুম্মনের ছেলে মো. আসিফ বাদী হয়ে ওয়াহেদ ম্যানশনের মালিকের দুই ছেলে মো. হাসান ও সোহেলের নাম উল্লেখ একটি হত্যা মামলা করা হয়। এছাড়া একটি প্রাইভেট কারের সিলিন্ডার বিস্ফোরণ হয় উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরো ১০/১২ জনকে আসামি করা হয় মামলায়।

মূল অভিযোগ আনা হয় ওয়াহেদ ম্যানশনের মালিকের দুই ছেলের বিরুদ্ধে। অভিযোগে বলা হয়, অধিক লোভের আশায় আবাসিক ভবনের ফ্লোর সাধারণ মানুষকে ভাড়া না দিয়ে মানুষের জীবনের ঝুঁকি জেনেও রাসায়নিক দাহ্য পদার্থ ব্যবসায়ীদের ভাড়া দেন আসামীরা। প্রথমদিকে মামলার তদন্ত করছেন চকবাজার থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মুহাম্মদ মোরাদুল ইসলাম। তিনি বদলি হওয়ার পর তদন্ত করছেন বর্তমান পরিদর্শক (তদন্ত) কবির হেসেন হাওলাদার। এই মামলায় এজাহারনামীয় দুই আসামী প্রথম দিকে লাপাত্তা থাকলেও পরবর্তীতে ২রা এপ্রিল তারা আদালতে এসে আত্মসমর্পণ করে জামিন আবেদন করেন। ওই দিন আদালত তাদের জামিন আবেদন নাকচ করে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। পরে চকবাজার থানা পুলিশ আসামীকে রিমাণ্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ১০ দিনের রিমাণ্ড আবেদন করেন। পরে আদালতের নির্দেশে সাত দিন রিমাণ্ডে রেখে দুই ভাইকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। আদালত সূত্রে জানা গেছে, গত বছরের ১৬ এপ্রিল মামলার প্রধান আসামী মো. হাসান ও মো. সোহেল ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তীমূলক জবানবন্দি দেন। পরে গত বছরের ৮ আগস্ট এই দুই ভাই উচ্চ আদালত থেকে ছয় মাসের অন্তর্বর্তীকালীন জামিন নেন। চলতি মাসের ১৬ ফেব্রুয়ারী বিচারপতি আবদুল হাফিজ এবং ইজারুল হক আকন্দের হাইকোর্ট বেঞ্চ তাদের জামিন আরও এক বছরের জন্য বাড়িয়ে দেন।

মামলার বাদী মো. আসিফ মানবজমিনকে বলেন, মর্মান্তিক ওই ঘটনায় কে দোষী সেটা আমি জানি না। তবে মামলার তদন্ত দ্রুত শেষ হউক। আমি  সুষ্ঠু বিচার চাই। তদন্ত কর্মকর্তা সর্বশেষ কবে যোগাযোগ করেছিলেন সেটি ভুলে গেছি। কেন মামলা করেছিলেন জানতে চাইলে আসিফ বলেন, ওই ঘটনায় আমি আমার বাবা মো. জুম্মনকে হারিয়েছি। তিনি টাইগার ব্র্যান্ড কোম্পানিতে চাকরি করতেন। অফিস শেষ করে বাসায় প্রতিদিন চুিড়হাট্টার মদিনা ডেকোরেটার্সের দোকানে গিয়ে আড্ডা দিতেন। মর্মান্তিক ওই অগ্নিকাণ্ডে ওই দোকানের সবাই  মারা যান। আসিফ বলেন, আমার বাবাই পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি ছিলেন। এখন পরিবারের পুরো চাপ আমার উপরে পড়েছে। বর্তমানে আমি বসুন্ধরা শপিং সিটির ক্যাটসআইর শো-রুমে ব্যবস্থাপক হিসেবে আছি।

মামলার তদন্তের অগ্রগতি নিয়ে জানতে চাইলে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) লালবাগ জোনের উপ পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মোনতাসিরুল ইসলাম মানবজমিনকে বলেন, মামলার তদন্ত প্রায় শেষ পর্যায়ে। এখন শুধুমাত্র ময়নাতদন্ত রিপোর্টের জন্য আদালতে প্রতিবেদন জমা দিতে পারছেন না তদন্ত কর্মকর্তা। ওই ঘটনায় ৬৭টি মরদেহ ঢাকা মেডিকেল কলেজের মর্গে পাঠানো হয়েছিলো। কিন্তু এখন পর্যন্ত আমরা কোনো রিপোর্ট হাতে পাইনি। ময়নাতদন্ত রিপোর্ট হাতে পেলেই শিগগির আমরা প্রতিবেদন জমা দিব আদালতে। ডিসি বলেন, এই মামলায় এখন পর্যন্ত তদন্ত কর্মকর্তা ৩০জনের সাক্ষ্য নিয়েছেন। এছাড়া ওই ঘটনায় দ্বায় এড়াতে পারে না এমন পাঁচজন ব্যক্তিকে পুলিশ খুঁজছে। সন্ধান পেলে তাদেরকেও জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।

ময়নাতদন্তের রিপোর্ট নিয়ে কথা বলতে চাইলে ঢাকা মেডিকেলের ফরেনসিক বিভাগের প্রধান ডা. সোহেল মাহমুদ মানবজমিনকে বলেন, পুলিশ অযতাই আমাদের ওপর চাপিয়ে দিচ্ছে। ওনারা কার কাছে এসেছে আমি জানি। আমার সঙ্গে রিপোর্টের বিষয়ে কোনো কথা হয়নি। এছাড়া আমরা গত সপ্তাহে ডিএনএ রিপোর্ট হাতে পেয়েছি। গতকাল থেকে প্রোফাইলিং শুরু করেছি। আশা করছি বুধবার থেকে আমরা রিপোর্ট দেয়া শুরু করবো। কেন এত দেরী হচ্ছে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমাদের জনবল সংকট আছে। এছাড়া আমাদের সহকর্মী ডা. কবীর সোহেলকেও বরিশালে বদলি করে দেয়া হয়েছে। তিনি অনেক রিপোর্ট তৈরি করেছেন। সেগুলো তিনি ছাড়া আমরা বুঝবো না। তাই তাকে এনে তার লেখা রিপোর্ট হস্তান্তর করবো। ফরেনসিক সূত্রে জানা গেছে, চুিড়হাট্টার ঘটনায় তারা সর্বমোট ৬৭টি মরদেহের ময়নাতদন্ত শেষ করেছে। এখন রিপোর্ট তৈরির কাজ চলছে। শিগগির এই রিপোর্ট পুলিশের কাছে জমা দেয়া হবে।

মামলার তদন্তসংশ্লিষ্টসূত্র বলছে, চুিড়হাট্টার ঘটনার ওয়াহেদ ম্যানশনের মালিকের দুই ছেলে মো. হাসান ও সোহেল ছাড়াও আরও কয়েকজনকে দ্বায়ী করা হবে। এদের মধ্যে ওয়াহেদ ম্যানশনের ব্যবসায়ী পার্ল ট্রেড ইন্টারন্যাশনালের তিন পার্টনার ইমতিয়াজ আহমেদ, জাওয়াদ আতির ও মোজাম্মেল ইকবাল রয়েছেন। এই তিন পার্টনার ওয়াহেদ ম্যানশনে পারফিউমের গোডাউন করেছিলেন। তাদেরকে এখনও খুঁজছে পুলিশ। কিন্তু ট্রেড লাইসেন্স ও জাতীয় পরিচয়পত্রে তারা যে ঠিকানা দিয়েছে ওই ঠিকানায় তাদেরকে খোঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। দীর্ঘ এক বছর ধরে তারা পলাতক। ধারণা করা হচ্ছে পাশ্ববর্তী দেশের নাগরিক হওয়াতে তারা দেশ ছেড়ে পালিয়েছে। পাশাপাশি তাদের দোকানের দুই কর্মচারী মো. কাশিব ও মো. নাবিলের খোঁজ মিলছে না। এর বাইরে চুড়ীহাট্টার ওই গলির আশেপাশের ভবনে কেমিক্যালের গোডাউন করেছিলেন এমন ব্যবসায়ী ও ভবনের মালিকদেরকে দায়ী করা হবে। বাদ যাবে না সন্দিগ্ধরা। সংশ্লিষ্টসূত্র বলছে, ঘটনাস্থলে কেমিক্যালের গোডাউন, পারফিউমের গোডাউন ও গ্যাস সিলিন্ডার থাকায় আগুনের ভয়াবহতা বেশি ছিল। দ্রুত আগুন চারদিকে ছড়িয়ে যায়। তা না হলে এত মানুষের প্রাণহাণী হত না। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট নিয়ে এই সূত্রটি বলছে, ফরেনসিকের চিকিৎসক সোহেল মাহমুদের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগ করা হয়েছে। কিন্তু তিনি জনবল সংকট, বদলীসহ নানান অজুহাত দেন।

চুড়িহাট্টার ওই ঘটনায় নিহতের ডিএনএ টেস্ট করে মরদেহ শনাক্ত করেছিলো পুলিশের ক্রিমিনাল ইনভেস্টিগেশন ডিপার্টমেন্টের (সিআইডি) ফরেনসিক ল্যাব। ফরেনসিকের বিশেষ পুলিশ সুপার রুমানা আক্তার মানবজমিনকে বলেন, চকবাজারের চুড়িহাট্টার ঘটনায় আমাদের কাছে এখন আর কোনো অবশিষ্ট কাজ নাই। ওই ঘটনায় আমরা ৬৭টি মরদেহ ও ১টি হাতের নমুনা সংগ্রহ করেছিলাম। পাশপাশি ডিএনএ টেস্টের জন্য দাবিদারদের রক্তের নমুনা নিয়েছিলাম। তখন অনেক দাবিদার মরদেহের কিছু সিনটম দেখে স্বজনকে শনাক্ত করেছিলেন। এরকম অনেক দাবিদারের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে মরদেহ হস্তান্তর করা হয়েছিলো। পরবর্তীতে আমরা ২১টি মরদেহ আমরা শনাক্ত করে দিয়েছি।
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর