গাইবান্ধার সাদুল্ল্যাপুর উপজেলার জামালপুর ইউনিয়নের চিকনী গ্রামের একটি পরিবার পূর্ব পুরুষের পেশাকে আজও আঁকড়ে ধরে আছে। তাদের ঐতিহ্যকে টিকিয়ে রাখতে এখানো তারা তৈরি করে আসছেন বাঁশের দ্রব্যসামগ্রী। ডালি, কুলা, খোঁচা, দারকি, পলো, ঝাড়ু প্রভৃতি তৈরিকৃত পণ্যই যেন তাদের সহায়-সম্বল। সরজমিন দেখা যায়, নিভৃত পল্লী অঞ্চলের চিকনী গ্রামের একই পরিবারের ইমরুল হাসান আলী, হামিদা বেগম, ইউনুছ আলী, খাতেমুন বেগমসহ আরো অনেকে বাঁশের পণ্যসামগ্রী তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন। তাদের নিপুণ হাতের ছোঁয়ায় ফুটিয়ে তুলছেন তৈরি করা পণ্যগুলো। এ সময় কথা হয় তাদের সঙ্গে। তারা জানান, অতীতে গ্রাম-গঞ্জে বাঁশের তৈরি পণ্যসামগ্রীর কদর ছিল অনেক বেশি। এসব পণ্য শোভা পেত প্রত্যেক বাড়িতে।
এ ছাড়া গৃহস্থালির নিত্যব্যবহার দ্রব্যাদি, ডালা, চালুন, ডুলি, খরপা, চাটাইসহ অসংখ্য জিনিস আজও তৈরি করে ক্রেতাদের চাহিদা মেটানো হচ্ছে। তবে ইদানিং প্রযুক্তির ব্যবহার ও আধুনিকতার ছোঁয়ায় দিন দিন তা হারিয়ে যেতে বসেছে। বর্তমানে এ ব্যবসায় মন্দাভাব থাকায় বাঁশশিল্পের সঙ্গে জড়িত এই পরিবারটির চলছে দুর্দিন। বিদ্যমান পরিস্থিতিতেও দৃঢ় মনোবল নিয়ে বাঁশের পণ্য তৈরি ও তা বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করেছেন ইউনুস আলীর ৭ সদস্যের পরিবারটি। পরিবারটির সদস্য ইমরুল হাসান আলী বলেন, এসব জিনিসপত্র তৈরির প্রধান উপকরণ বাঁশ। বিভিন্ন এলাকা থেকে বাঁশ সংগ্রহ করার পর তা দাঁ-ছুড়ি দিয়ে চিরানো হয়। চিরানো বাঁশগুলো পণ্যের মানভেদে চিকন আকারে শলা বা বাতি তৈরি করে রোদে শুকাতে হয়। এরপর বানানো হয়ে থাকে দ্রব্যসামগ্রী। এ কাজটি তার বাপ-দাদার আমল থেকে করে আসছেন। তবে অধিক পুঁজি থাকলে এটি করে স্বাবলম্বি হওয়া যেতে পারে। আরেক সদস্য হামিদা বেগম প্রতিবেদককে জানান, তার পরিবারের সবাই এই কাজের সঙ্গে জড়িত। বাঁশের তৈরি করা পণ্যসামগ্রীগুলো ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের কাছে পাইকারিতে ও স্থানীয় হাট-বাজারে খুচরা বিক্রি করা হয়। যা বিক্রি করে প্রতি মাসে খরচ বাদে লাভ হয় প্রায় ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা। এ থেকে সংসারের চাহিদা মেটানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। তিনি আরো বলেন, এখন এ পেশাকে টিকিয়ে রাখতে সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের আর্থিকভাবে সহায়তা পেলে, তাহলে বাঁশশিল্পের সোনালি দিন ফিরিয়ে আনা সম্ভব। জামালপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান নুরুজ্জামান মণ্ডল বলেন, এটি একটি ভালো কাজ এবং লাভজনক। তাদের বিষয়ে কিছু পরিকল্পনা গ্রহণ করা হবে।