× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ২০ এপ্রিল ২০২৪, শনিবার , ৭ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১১ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

পাহাড়ে জনবিচ্ছিন্ন ব্রিজ নির্মাণ

এক্সক্লুসিভ

নুরুল কবির, বান্দরবান থেকে
২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২০, রবিবার

মানুষের চলাচলের জন্য নেই কোনো রাস্তা। আশেপাশে নেই জনবসতি। ছোট্ট একটি পাথরে ভরা ছড়া পার হলে জনশূন্য পাহাড়। আর মধ্যবর্তী সেই ছড়াতেই অপ্রয়োজনীয় ব্রিজ নির্মিত হচ্ছে। বান্দরবানের থানচি উপজেলার দুর্গম তিন্দু ইউনিয়নের চাইথোয়াইপাড়ার পাশে এই অপ্রয়োজনীয় ব্রিজ নির্মাণে সরকারের প্রায় ৩৬ লাখ টাকা গচ্ছা গেছে বলে মনে করছেন স্থানীয়রা।
মানুষের প্রয়োজনীতা দেখিয়ে ২০১৯-২০২০ অর্থবছরে প্রায় ৩৬ লাখ টাকা ব্যয়ে ছড়ার ওপর ৪০ মিটার দৈর্ঘ্যের ব্রিজ নির্মাণ প্রকল্প হাতে নেয় উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন দপ্তর। এদিকে কাজটির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার নিয়ে পাওয়া গেছে ভিন্ন ভিন্ন তথ্য। একজন দেখিয়ে দিচ্ছে অন্যজনকে।
সরজমিনে কাজে নিয়োজিত শ্রমিকরা জানান, থানচি সদরের ভাইস চেয়ারম্যান ব্রিজ নির্মাণ কাজটি করছে।
থানচি উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান চ সা থোয়াই মারমা তা অস্বীকার করে বলেন- ‘কাজটি তার ভাই করছে’। তবে তার ভাই মংব্রা মারমার সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে স্থানীয় এক সাংবাদিককে কাজটি তার ভাই বিক্রি করেছেন বলে সংযোগ কেটে দেন। পরে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা নিশ্চিত করেছেন ‘শুনুচিং মারমা কন্সট্রাকশন’ নামে প্রকল্পটির কাজের আদেশ দেয়া হয়েছে। যেটি ভাইস চেয়ারম্যানের বোনের কন্সট্রাকশন।
এদিকে ব্রিজ নির্মাণ নিয়ে গ্রামের মানুষের মাঝে প্রশ্ন উঠেছে। ওই ব্রিজটি কার্যত মানুষের কোনো কাজেই আসবে না বলে পাশের গ্রামের মানুষ বলেছেন। তাদের মতে, যে স্থানে ব্রিজ প্রয়োজন সেখানে দেয়া হয়নি, অথচ অপ্রয়োজনীয় এলাকায় সরকারের লাখ লাখ টাকা ব্যয়ে ব্রিজ করা হচ্ছে। তারা আরো জানান- ব্রিজের ওপারে কারও যাতায়াত নেই। ব্রিজ নির্মাণ করে মূলত ঠিকাদার ও সংশ্লিষ্টরাই লাভবান হবেন।
সরজমিনে তিন্দু ইউনিয়নের চাইথোয়াইপাড়া এলাকার বাসিন্দা ফোচাচিং মারমা, খদিঅং মারমা, থোয়াইচাং প্রু মারমা, মংক্যচা মারমা জানান, যে ছড়ায় ব্রিজটি নির্মিত হচ্ছে সেই ছড়া থেকে কুড়ানো পাহাড়ি পাথর আর পাশের নদী থেকে আনা বালি দিয়ে চলছে ব্রিজ নির্মাণ কাজ। তারা আরো জানান, তিন্দু ইউনিয়নের রেংক্রিপাড়া, বুচিংপাড়া, থংলেপাড়া, চাদুইপাড়ার মানুষ পাশের ইউনিয়ন রেমাক্রিতে যাতায়াত করে ভিন্ন পথে। অথচ সে গ্রামগুলোর বাসিন্দাদের প্রয়োজনীয়তা দেখিয়ে রাস্তাবিহীন এলাকায় ব্রিজ নির্মাণ প্রকল্পটি নেয়া হয়েছে।
এদিকে ব্রিজ নির্মাণ কাজে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারের বিরুদ্ধে। দুর্গম এলাকায় প্রকল্প হওয়ায় প্রশাসনের যাতায়াত নেই তেমন। এই সুযোগে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তাকে (পিআইও) ম্যানেজ করে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। সিডিউল মোতাবেক যে পরিমাণ রড, সিমেন্ট, বালি দেয়ার কথা তা মানা হচ্ছে না। ৬ জন শ্রমিক ব্রিজটি করে দেয়ার জন্য চুক্তিভিত্তিক কাজ চালাচ্ছে।
তিন্দু ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মংপ্রু অং মারমা বলেন, চাইথোয়াইপাড়ার পাশে পিআইও ব্রিজটি মানুষের যাতায়াতের সুবিধার্থে প্রকল্প দেয়া হয়েছে। ব্রিজটির ওপারে ভবিষ্যতে হোস্টেল হবে। এছাড়াও পাশে কয়েকটি ম্রোপাড়া রয়েছে। তাই পাহাড় থাকলেও ব্রিজটি নির্মিত হলে মানুষের যাতায়াত বাড়বে।
এই প্রসঙ্গে জানতে যোগাযোগ করা হলে থানচি উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) তরিকুল ইসলাম বলেন, স্থানীয় চেয়ারম্যান জায়গা সিলেক্ট যেখানে করেছেন সেখানে প্রকল্প নেয়া হয়েছে। ব্রিজটি মানুষের প্রয়োজন কিনা তা স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরাই ভালো জানবেন। এছাড়া ওই ব্রিজের কাজে পার্শ্ববর্তী খালের পাথর ও বালি ব্যবহার করা ছাড়া কোনো উপায় ছিল না বলে জানান এই কর্মকর্তা।
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর