× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, শুক্রবার , ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৭ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

আমরা ভয়ঙ্কর ভঙ্গুর পরিস্থিতির দিকে তাকিয়ে- সিপিডি

প্রথম পাতা

অর্থনৈতিক রিপোর্টার
২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২০, রবিবার

 ব্যাংকিং খাতের স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা ও শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে একটি কমিশন গঠনের বিষয়ে রূপরেখা দিয়ে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেছেন, আমরা অসহায় আতঙ্ক নিয়ে একটা ভয়ঙ্কর ভঙ্গুর পরিস্থিতির দিকে তাকিয়ে আছি। প্রতিটি ব্যাংকের এখন পুঁজি ও সঞ্চিতির ঘাটতি। দেশের ব্যাংক খাত গুটিকয়েক ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের কাছে জিম্মি। এ জন্য সরকারের ব্যাংক কমিশন গঠনের উদ্যোগকে সমর্থন ও সাধুবাদ জানায় সিপিডি। গতকাল রাজধানীর মহাখালীতে ব্র্যাক ইন সেন্টারে আয়োজিত ‘প্রস্তাবিত ব্যাংকিং কমিশন, সিপিডি’র প্রতিক্রিয়া’ শীর্ষক এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য তুলে ধরেন তিনি। সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুনের সঞ্চালনায় উপস্থিত ছিলেন সিপিডি’র বিশেষ ফেলো অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান ও অতিরিক্ত গবেষণা পরিচালক ড. খোন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম।
গুটিকয়েক ব্যক্তি ও গোষ্ঠীর কাছে পুরো ব্যাংক খাত জিম্মি অভিযোগ করে সিপিডির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, অর্থনৈতিক সমস্যা এখন রাজনৈতিক সমস্যায় পরিণত হয়েছে। সিপিডির মতে, বাংলাদেশ ব্যাংক স্বাধীনভাবে কাজ করছে না।
ব্যাংক খাতের ওপর আস্থা, স্বচ্ছতা ও বিশ্বস্ততার সঙ্কট দেখা দিয়েছে। এ কারণে ব্যাংক কমিশন করার প্রয়োজন হয়ে পড়েছে। এ কমিশনের সফলতার জন্য রাজনৈতিক নেতৃত্বের আলোকিত সমর্থন থাকতে হবে। তা না হলে ব্যাংক খাতের কার্যকর পরিবর্তন আনা সম্ভব হবে না। এছাড়া সিপিডি জানায়, দেশে বর্তমানে ঋণ খেলাপির পরিমাণ ১ লাখ ১৬ হাজার ২৮৮ কোটি টাকা। ব্যাংকখাতে খেলাপি ঋণের অর্ধেকই সরকারি ব্যাংকগুলোর।
ব্যাংকিং কমিশনের কার্যপিরিধি এবং সম্ভাব্য সুপারিশ ও তার বাস্তবায়নের বিষয় তুলে ধরে দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, আমরা আগামী বাজেটে ব্যাংক কমিশনের সুপারিশের প্রতিফলন দেখতে চাই। কমিশন গঠনের জন্য অন্তর্বর্তীকালীন সুপারিশের ভিত্তিতে দ্রুত কিছু উদ্যোগ নেয়া উচিত। এ অবস্থায় সরকার যে ব্যাংক কমিশন গঠনের চিন্তা করছে, এটা খুবই সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত।
ড. দেবপ্রিয় বলেন, এ মূহুর্তে ব্যাংক খাত আস্থার সঙ্কট আছে। স্বচ্ছতার সঙ্কট আছে। অনেক ক্ষেত্রে বিশ্বস্ততার সঙ্কট আছে। আস্থার সঙ্কট, স্বচ্ছতার সঙ্কট, বিশ্বস্ততার সঙ্কট কাটিয়ে উঠে এ কমিশনকে কাজ করতে হবে।
তিনি বলেন, এর জন্য সর্বোপরি প্রয়োজন পড়বে রাজনৈতিক নেতৃত্বের আলোকিত সমর্থন। রাজনৈতিক নেতৃত্ব যদি এ কমিশনের ওপর একটি এনলাইটেন সাপোর্ট না দেন, তাহলে এ কমিশন শুধু একটি কমিশনই থেকে যাবে। ব্যাংক খাতের কার্যকর পরিবর্তনের সুযোগ হয়তো আসবে না।
দেবপ্রিয় বলেন, অর্থনৈতিক সমস্যা এক সময় রাজনৈতিক অর্থনীতি সমস্যায় উপনীত হয়েছিল। রাজনৈতিক অর্থনীতি সমস্যা এখন রাজনৈতিক সমস্যা হয়ে গেছে। সুতরাং এখানে রাজনৈতিক সমর্থন বাদ দিয়ে বড় ধরনের পরিবর্তন সম্ভব নয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের ক্ষমতা প্রয়োগ করার সুযোগ যে সীমিত তা প্রমাণ পায় নতুন ব্যাংক দেয়ার মাধ্যমে। বাংলাদেশ ব্যাংকের বোর্ড সিদ্ধান্ত নিয়েছে নতুন ব্যাংক হবে না, তারপরও নতুন তিনটি ব্যাংক হয়েছে। তিনি বলেন, শত প্রতিশ্রুতি ও বিভিন্ন সুযোগ সুবিধার পরও মন্দা ঋণ অব্যাহত রয়েছে। এর নিচে লুকিয়ে রয়েছে পুঁজির ঘাটতি, সঞ্চিতির ঘাটতি, বাণিজ্যিক লাভের ঘাটতি। এখন ব্যাংকে মানুষের টাকা রাখার পরিমাণ কমে গেছে।
সিপিডির এই ফেলো বলেন, সব থেকে বেশি বিচলিত করছে কেন্দ্রীয়ভাবে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে যে সব সুবিবেচিত নীতিমালা দেয়া হয়েছে তার প্রকাশ্য বরখেলাপ। বরখেলাপগুলো কোনো কোনো ক্ষেত্রে বেআইনি কার্যকলাপে উপনীত হচ্ছে। ফলে দুদকের মতো প্রতিষ্ঠানকে এখানে যুক্ত হতে হচ্ছে।
তিনি বলেন, গুটিকয়েক ব্যক্তি ও গোষ্ঠীর কাছে এখন পুরো ব্যাংক খাত জিম্মি হয়ে পড়েছে। এ পরিস্থিতি যখন ক্রমান্বয়ে বিকাশ লাভ করছিল, সে রকম একটি পরিস্থিতিতে ২০১২ সালে হল-মার্কের কেলেঙ্কারি উদঘাটিত হয়, তখন থেকে আমরা ব্যাংকিং কমিশনের বিষয়ে বলে আসছি। এখন যেহেতু এটা কিছুটা অগ্রগতি দেখা যাচ্ছে আমরা অত্যন্ত খুশি এবং সম্পূর্ণ সাফল্য কামনা করছি।
দেবপ্রিয় বলেন, এ ব্যাংক কমিশন গঠন করতে সর্বোচ্চ রাজনৈতিক পর্যায় থেকে আশীর্বাদ ও সম্মতি এসেছে। এ জন্য আমরা খুবই উচ্ছ্বসিত। আমরা মনে করি, এটা অত্যন্ত বিচক্ষণ সিদ্ধান্ত। এ কমিশন যাতে স্বাধীনভাবে, তথ্যনির্ভর ও অন্তর্ভুক্তিমূলকভাবে কাজ করতে পারে; তার জন্য তাদের পরিবেশ, ক্ষমতা ও সুযোগ দিতে হবে। কমিশনকে জরুরি বিষয়ে দ্রুত সমাধানের জন্য অন্তর্বতীকালীন প্রতিবেদন দিতে হবে। এগুলো আগামী বাজেটের আগেই দিতে হবে।
ব্যাংক কমিশনের কার্যক্রম সম্পর্কে বলতে গিয়ে তিনি বলেন, স্বচ্ছ, সম্মুখ, তথ্যনির্ভর এবং পূর্ণভাবে একটি মাপকাঠি নির্মাণ করা দরকার বংলাদেশের ব্যাংক খাতে। সেই সঙ্গে প্রকাশিত ও উদঘাটিত পরিস্থিতি জাতীয় অর্থনীতির জন্য কী ধরনের অভিঘাত রাখছে এবং এ পরিস্থিতির তাৎপর্য কী তা বিশ্লেষণ করে কমিশনকে বলতে হবে। একই সঙ্গে বিরাজমান পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য সরকার থেকে ইতিমধ্যে যেসব পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে, সেগুলোর কার্যকারিতা সম্পর্কে তাদের মতামত দিতে হবে।
তিনি বলেন, ব্যাংকের টাকা নিয়ে যারা বিদেশে পাচার করেছে তাদের ব্যাপারে এই কমিশন কোনো পদক্ষেপ নেবেন কি না। কেন এভাবে ব্যাংকের টাকা বিদেশে যায়, কিভাবে যায় সেটার ব্যাপারে ওনারা কিছু বলবেন কি না।
সংবাদ সম্মেলনে মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, কমিশনকে সমস্যার গভীরে যেতে হবে। আমরা দেখতে চাই কমিশনে কাদের ডাকা হবে, তাদের কাজ করার ক্ষেত্রে কী ধরনের ক্ষমতা দেয়া হবে। ব্যাংক খাতের স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘ মেয়াদের সমস্যা আমাদের সামষ্টিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনাকে দুর্বল করে দিচ্ছি। এই যে গভীরতর যেসব সমস্যা তার সমাধান যদি করতে না পারে তাহলে তা কাজে আসবে না। এ জন্য সরকারের আলোকিত সমর্থনের পাশাপাশি আলোকিত স্বার্থপরতাও থাকতে হবে, তা না হলে অর্জনগুলো প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে যাবে।
ব্যাংক কমিশনের কার্যপরিধির তথ্য তুলে ধরে সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন বলেন, ব্যাংক কমিশন সাময়িক। এ কমিশন তিন-চার মাসের মধ্যে তাদের কাজ শেষ করবে। কমিশনের কার্যপরিধি খুবই সুনির্দিষ্ট হবে।
তিনি বলেন, এর মধ্যে রয়েছে ব্যাংকের গ্রাহক এবং অর্থনীতির জন্য ব্যাংক খাত কতখানি গুরুত্বপূর্ণ তা নিরূপণ করা, তথ্য পাওয়ার ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে হবে, ব্যাংক খাতের সমস্যা কী এবং সামনের দিনে চ্যালেঞ্জগুলো কী হতে পারে তা চিহ্নিত করা, ব্যাংকিং খাতের সমস্যার জন্য কারা ও কোন কোন গোষ্ঠীর দায় তা চিহ্নিত করা এবং স্বল্প ও মধ্য মেয়াদে ব্যাংক খাতের সমস্যা থেকে উত্তরণের জন্য কী ধরনের প্রশাসনিক ও আইনগত পদক্ষেপ প্রয়োজন সেগুলোর সুনির্দিষ্ট প্রতিবেদন প্রকাশ করা। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কমিশনের সদস্যদের দক্ষতা, যোগ্যতা এবং সততাই হবে একমাত্র যোগ্যতা। যাতে তারা নির্মোহভাবে প্রভাবের বাইরে থেকে কাজ করতে পারেন। কমিশনকে সম্পূর্ণ স্বাধীনতা দিতে হবে।
উল্লেখ্য, অর্থমন্ত্রী আহম মুস্তফা কামাল গত বুধবার সচিবালয়ে দেশের বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদের সঙ্গে বৈঠক করেন। এরপর সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠক শেষে অর্থমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, ব্যাংক কমিশন করবো। এ জন্য অনেকের সঙ্গেই কথাবার্তা বলতে হবে। যারা সময় দিতে পারেন, দেশের স্বার্থে কাজ করতে পারেন, তাদের মধ্য থেকেই কেউ এই কমিশনের দায়িত্ব নেবেন।
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর