বাংলাদেশে সংখ্যালঘুরা ধর্মীয় নির্যাতনের শিকার বলে ভারতের রাজনীতিকরা যে দাবি করেন, তা সত্য নয়। বাংলাদেশে সংখ্যালঘুরা যথেষ্ঠ নিরাপদে বসবাস করছে। কলকাতা সফরকালে শনিবার স্থানীয় পত্রিকা টেলিগ্রাফ ইন্ডিয়ার এক প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) চেয়ারম্যান ও বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ রেহমান সোবহান।
টেলিগ্রাফ ইন্ডিয়ার এক প্রতিবেদনে বলা হয়, কলকাতায় এক অনুষ্ঠানের ফাঁকে সিপিডি চেয়ারম্যানের কাছে বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের নির্যাতনের শিকার হওয়ার অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চান তাদের প্রতিবেদক। জবাবে রেহমান সোবহান বলেন, বাংলাদেশে সংখ্যালঘুরা বর্তমানে নির্যাতনের শিকার হচ্ছে - এমন অভিযোগের সঙ্গে আমি একমত নই। তাদের সত্যিই কেউ নির্যাতন করছে না। আদতে, শেখ হাসিনা সরকারের অধীনে তারা বাংলাদেশে বেশ নিরাপদে রয়েছে। কলকাতায় জন্ম নেয়া বাংলাদেশী এই প্রখ্যাত অর্থনীতিবিদ বলেন, আজকের বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের ধর্মীয় নিপীড়নের যুক্তি আর প্রাসঙ্গিক নেই।
প্রসঙ্গত, বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও আফগানিস্তান থেকে ২০১৫ সালের আগে ভারতে অভিবাসনকারী ছয় সংখ্যালঘু ধর্মালম্বীদের নাগরিকত্ব দিতে আইন পাস করেছে ভারতের ক্ষমতাসীন বিজেপি নেতৃত্বাধীন সরকার।
এ নিয়ে কয়েক মাস ধরে বিক্ষোভ চলছে ভারতজুড়ে। আইনে নিপীড়িত গোষ্ঠীর তালিকা থেকে মুসলিমদের বাদ দেয়ায় তীব্র সমালোচনার শিকার হয়েছে সরকার। আইনটির পক্ষে সমর্থন জোগাতে সরকারদলীয় অনেক নেতা বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের নির্যাতনের শিকার হওয়ার প্রসঙ্গ তুলছেন।
এদিকে, ভারতে বাংলাদেশিদের অবৈধ অভিবাসনের দাবি প্রত্যাখ্যান করে সেদেশে বাংলাদেশের সাবেক হাইকমিশনার সৈয়দ মোয়াজ্জ্বেম আলীর সাম্প্রতিক এক মন্তব্য নিয়ে রেহমান সোবহানের প্রতিক্রিয়া জানতে চায় দ্য টেলিগ্রাফ। মোয়াজ্জ্বেম আলী তার মন্তব্যে বলেছিলেন, বাংলাদেশিরা ভারতে যাওয়ার চেয়ে সাঁতরে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দেয়া বেছে নেবে। সাবেক হাইকমিশনারের সঙ্গে কিছুটা একমত পোষণ করে রেহমান সোবহান বলেন, বাংলাদেশের অর্থনীতি যেহেতু বেশ ভালো করছে, মানুষরা বেশি অর্থ উপার্জনের জন্য ভারত যাবে না। আদতে, অনেক বাংলাদেশি ইউরোপ যাচ্ছে। বেশিরভাগ বাংলাদেশি এখন যাত্রাপথে ভারত থামে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক এই অধ্যাপক বলেন, বাংলাদেশ মানব উন্নয়ন সূচকে খুবই ভালো করছে। এই সূচক একটি দেশের নাগরিকদের জীবনাযাত্রার মান নির্ধারণে ব্যবহৃত হয়। তিনি বলেন, শিশু মৃত্যুহার, নারীদের স্বাস্থ্য উন্নতি, শিশুদের ভালো শিক্ষাদানের মতো সূচকে বাংলাদেশ খুবই ভালো করেছে।
বাংলাদেশের পোশাক শিল্প নিয়ে রেহমান সোবহান বলেন, এটি বিশ্বের মধ্যে রপ্তানিতে দ্বিতীয়, কেবল চীনের পেছনে। আরো বলেন, এ ছাড়া, আমরা ইসপাত, ফার্মাসিউটিক্যালস, চামড়া ও জাহাজ নির্মাণেও ভালো করছি।