× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, শুক্রবার , ৬ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১০ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

মাসে তোলেন কোটি টাকার চাঁদা /কক্সবাজারের কিং রাসেল

শেষের পাতা

স্টাফ রিপোর্টার, কক্সবাজার থেকে
২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২০, মঙ্গলবার

কক্সবাজার সৈকতের পর্যটন জোনের সব ধরনের অপরাধের ‘কিং’ হিসেবে পরিচিত কাজী রাসেল আহমদ নোবেল ওরফে কিং রাসেলকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গতকাল ভোরে নারীসহ কলাতলীর সৈকতপাড়ার একটি বাসা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয় বলে জানিয়েছেন  কক্সবাজার সদর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি-অপারেশন) মাসুম খান।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের সঙ্গে ছবি তুলে মন্ত্রীর ভাগনে পরিচয় দিতেন কিং রাসেল। সেই সঙ্গে পর্যটন এলাকায় নানা ধরনের অপরাধ নিয়ন্ত্রণ করেন তিনি। গ্রেপ্তারের পর তাকে ছাড়িয়ে নিতে জোর তদবির চালান তার ভাই কক্সবাজার পৌরসভার ১২ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর কাজী মোরশেদ আহমদ বাবুসহ তার সহযোগীরা। গ্রেপ্তার কাজী রাসেল (৩৩) কক্সবাজার পৌরসভার কলাতলীর লাইটহাউজ এলাকার মৃত কাজী তোফায়েল আহমদের ছেলে। তিনি জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সদস্য এবং কলাতলী কটেজ মালিক সমিতির সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন। তার সঙ্গে গ্রেপ্তার আসমাউল হুসনা মীম (২৭) ঢাকার দোহারের জয়পাড়ার মৃত আবদুল মজিদের মেয়ে।
সদর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি-অপারেশন) মাসুম খান বলেন, কক্সবাজার পর্যটন এলাকার কলাতলীর হোটেল-মোটেল জোনে দীর্ঘদিন ধরে দলীয় পরিচয়ে কাজী রাসেল নানা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড করে আসছেন। তার বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ পাওয়া যেতো।
সমপ্রতি মোরশেদ নামের এক যুবককে পিটিয়ে গুরুতর জখম করেন রাসেল। ওই ঘটনায় তাকে এক নম্বর আসামি করে মামলা করা হয়। সোমবার ভোরে অভিযান চালিয়ে মীম নামে ঢাকার দোহারের এক নারীসহ তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ সময় ইয়াবা সেবন করেছিলেন তারা। স্থানীয় সূত্র জানায়, কলাতলীর সৈকত এলাকার নির্মাণাধীন ওই বাসা দখলের জন্য কাজী রাসেল তার সহযোগীদের নিয়ে অপেক্ষা করছিলেন। এ সময় রাসেল ও ছাত্রলীগের এক নেতাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। সেই সঙ্গে ইয়াবা ও অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার করা হয়। কিন্তু তদবিরের মাধ্যমে ছাত্রলীগ নেতাকে ছেড়ে দেয়া হয়। লুকিয়ে ফেলা হয় উদ্ধার হওয়া অস্ত্র। কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) মো. ইকবাল হোসাইন বলেন, কাজী রাসেলকে নারীসহ গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ সময় অস্ত্র কিংবা অন্য কিছু উদ্ধারের কথা জানাননি সদর মডেল থানার ওসি সৈয়দ আবু মো. শাহজাহান কবির। এরপরও বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে। কাজী রাসেলের বিরুদ্ধে থানায় মামলা রয়েছে। তাকে গ্রেপ্তারের পর বিভিন্ন জায়গা থেকে অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া যাচ্ছে। সবকিছু আমলে নিয়ে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
কলাতলী পর্যটন জোনের একাধিক ব্যবসায়ী জানান, কাজী রাসেলের অপরাধের রাজ্য বিস্তৃৃত। তার বড় ভাই পৌর কাউন্সিলর মোরশেদ আহমদ বাবুর তিন শ্যালক মাসুদ, খালেদ ও মাহফুজ এবং স্থানীয় যুবক ওয়াজেদ ও মান্নানসহ ১৫-২০ জনের একটি গ্রুপ গড়ে তোলা হয়েছে। তারা ঢাকারবাড়ি, শারমিন, সবুজ, আমির ড্রিম, সি-টাউন, কমফোর্টসহ কয়েকটি কটেজে যৌনকর্মী, ইয়াবা এবং বিভিন্ন মাদক সরবরাহ করেন। কলাতলী সড়কের পূর্বপাশের প্রতিটি গেস্ট হাউজ এবং ফ্ল্যাট থেকে রাসেলের হয়ে চাঁদা তোলেন মান্নান। এভাবে প্রতিদিন প্রায় ৪-৫ লাখ টাকা চাঁদা তোলেন রাসেল। সে হিসাবে মাসে তার চাঁদার টাকার পরিমাণ দাঁড়ায় দেড়কোটি টাকা।
স্থানীয়রা জানান, পর্যটন এলাকায় নির্মাণাধীন অনেক ব্যক্তির অ্যাপার্টমেন্ট, ভবন, হোটেলের কক্ষ ও ফ্ল্যাট দখল করে ভাড়া দেন রাসেল ও তার সহযোগীরা। কলাতলী সড়কের পশ্চিম পাশে সরকারি প্লট দখল করে ঘের ও ঘর তুলে ভাড়া দেন রাসেল। ঢাকার ফরিদ খান ইরান নামের এক জনপ্রতিনিধির মাধ্যমে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে পরিচয় হয় রাসেলের। বিভিন্ন সময় দেখা করার সুযোগে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে ছবি তুলে ফেসবুক, ব্যানার-ফেস্টুন ছাপিয়ে রাসেল প্রচার করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তাকে ভাগনে বলে ডাকেন। এভাবে পর্যটন জোনে অপরাধ জগতের ‘কিং’ হয়ে ওঠেন তিনি। এদিকে জেলা গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) ওসি মানস বড়ুয়া ও সদর থানার ওসি (অপারেশন) মাসুম খান রাসেলকে কেক খাওয়ানোর একটি ছবি ফেসবুকে ভাইরাল হয়। এতে অনেকেই অনেক ধরনের মন্তব্য করেছেন। এ বিষয়ে সদর থানার ওসি (অপারেশন) মাসুম খান বলেন, অপরাধী ধরতে গেলে অনেক সময় অপরাধীর সঙ্গে অন্তরঙ্গ সম্পর্ক গড়তে হয় আমাদের। ভাইরাল ছবি এমন একটি ঘটনা। অপকর্মের খবর পেয়ে তা খতিয়ে দেখতে তার সঙ্গে মেশার চেষ্টা করেছি আমরা। ওসি মাসুমের কথায় সুর মিলিয়ে একই কথা বলেছেন ডিবি পুলিশের ওসি মানস বড়ুয়াও। কক্সবাজার জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সদর উপজেলা চেয়ারম্যান কায়সারুল হক জুয়েল বলেন, অপরাধী কোনো দলের হতে পারে না। দলীয় পরিচয়ে অপরাধ করলে শাস্তি পেতেই হবে। কাজী রাসেলের দায় দল নেবে না। তার বিরুদ্ধে দলীয় সিদ্ধান্ত মোতাবেক ব্যবস্থা নেয়া হবে। কাজী রাসেল গ্রেপ্তার এবং অন্যান্য অপরাধের বিষয়ে জানতে তার ভাই কাউন্সিলর কাজী মোর্শেদ আহমদ বাবুকে কল দিলেও রিসিভ করেননি। খুদে বার্তা দেয়া হলেও সাড়া দেননি তিনি।
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর