× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, শুক্রবার , ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৭ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

করোনা আতঙ্কে সিঙ্গাপুর ছাড়ছেন বাংলাদেশিরা

প্রথম পাতা

মানবজমিন ডেস্ক
২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২০, বুধবার
ফাইল ছবি

সিঙ্গাপুরের বাংলাদেশি সম্প্রদায়ের মধ্যে করোনা ভাইরাস (কভিড-১৯) নিয়ে আতঙ্ক বিরাজ করছে। ইতিমধ্যে প্রাণঘাতী ভাইরাসটিতে পাঁচ বাংলাদেশি আক্রান্ত হয়েছেন বলে জানা গেছে। এতে বাকিদের জন্যও পরিস্থিতি কঠিন হয়ে পড়েছে সেখানে। পরিবারের টানে অনেকেই দেশে ফিরে আসছেন। যারা থেকে গেছেন তাদের জন্য জীবনযাপন দিন দিন কঠিন থেকে কঠিনতর হয়ে উঠছে। এমন একজন হচ্ছেন, তরিকুল ইসলাম (৫২)। ধূসর  দাড়িওয়ালা এই বাংলাদেশি সিঙ্গাপুরের লিটল ইন্ডিয়া শহরতলীর লেম্বু রোডের এক দোকানের মালিক। তাতে নিত্যদিনের প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র বিক্রি করে থাকেন।
তার মূল ক্রেতাদের বেশির ভাগই বাংলাদেশি। তিনি জানান, অনেকেই দেশে ফিরে গেছেন।
চীন থেকে ছড়িয়ে পড়া করোনা ভাইরাস এশিয়াজুড়ে অভিবাসী কর্মীদের জন্য বিভীষিকা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ ধরনের অভিবাসীরা সাধারণত জনাকীর্ণ পরিবেশে বাস করেন, পরিবার ছেড়ে বহুদূরে। পরিবারের সদস্যরা তাদের ফেরত যেতে বলছে। তরিকুল বলেন, নিজের জীবন বা পরিবারের কথা ভাবলে তারা অর্থ নিয়ে চিন্তা করে না।
এখন পর্যন্ত নতুন করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা বেশির ভাগই চীনে। সেখানে এ ভাইরাসের শিকার হয়ে প্রাণ হারিয়েছেন ২ হাজার ৬০০’র বেশি মানুষ। তবে সম্প্রতি তা অন্যান্য দেশেও বিস্তৃত হারে ছড়িয়ে পড়েছে। সিঙ্গাপুরে আক্রান্তের সংখ্যা ৯০ জনে পৌঁছেছে। বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় অনুসারে, এর মধ্যে একটি কনস্ট্রাকশন সাইটে কাজ করা পাঁচ বাংলাদেশিও রয়েছেন। একজনের অবস্থা গুরুতর। এ ছাড়া, সংযুক্ত আরব আমিরাতে অপর এক বাংলাদেশি আক্রান্ত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
সিঙ্গাপুরে দক্ষিণ এশীয় নির্মাণ শ্রমিকরা সাধারণত ১২ বেড-এর ডরমিটরিতে থাকেন। একই শৌচাগার ব্যবহার করেন সবাই। এমন জনবহুল পরিবেশ কভিড-১৯ ছড়িয়ে পড়ার জন্য সহায়ক। এমন এক ডরমিটরির বাসিন্দা ২৪ বছর বয়সী নির্মাণ শ্রমিক মোহাম্মদ কাকন মিয়া। তিনি জানান, তার অনেক বন্ধুই বাংলাদেশে ফিরে এসেছেন। সিঙ্গাপুর করোনা ভাইরাসমুক্ত হলেই সেখানে ফিরে যাবেন তারা। প্রসঙ্গত, বাংলাদেশে এখনো করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ ঘটেনি। কাকন সিঙ্গাপুরে থাকা নিয়ে বলেন, আমরা আপাতত এখানে আছি। তবে পরিস্থিতির আরো অবনতি হলে আমরাও হয়তো ফিরে যাবো।
সিঙ্গাপুরে বাংলাদেশের হাইকমিশন জানিয়েছে, তারা প্রবাসীদের দেশে ফিরে যাওয়া ঠেকাতে চাইছেন। প্রবাসীদের সঙ্গে অনলাইনে যোগাযোগ করা হচ্ছে। তাদের ডরমিটরি পরিদর্শন করা হচ্ছে। মাস্কসহ অন্যান্য জিনিস বিতরণ করা হচ্ছে। বাংলায় ভাইরাসটি নিয়ে লিফলেট বিতরণ করা হচ্ছে। হাইকমিশনার মোস্তাফিজুর রহমান রয়টার্সকে বলেন, আমরা তাদের দেশটি ছেড়ে যাওয়া থেকে বিরত রাখতে সক্রিয়ভাবে চেষ্টা চালাচ্ছি। তাদের নিশ্চিত করতে চাইছি যে, এটা নিয়ে চরম মাত্রায় বা অযৌক্তিকভাবে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। উল্লেখ্য, সিঙ্গাপুরে আসা-যাওয়া নিয়ে কোনো বিধিনিষেধ জারি করেনি বাংলাদেশ সরকার। বর্তমানে সেখানে প্রায় দেড় লাখ বাংলাদেশি বাস করেন।
রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়, ভাগ্য পরিবর্তনের আশায় ব্যাপক ঋণের বোঝা নিয়ে সিঙ্গাপুরে যায় বাংলাদেশিরা। অনেককে তাদের বেতনের কয়েকগুণ অর্থ পরিশোধ করতে হয় নানা সংস্থাকে। এ জন্য সেখান থেকে হুট করে চলে আসা অনেকের জন্য ব্যাপক ঝুঁকির। সিঙ্গাপুরে নির্মাণ শ্রমিকের কাজ করা মোহাম্মদ মজিদুল হক (২৫) জানান, তিনি সম্প্রতি বাংলাদেশ থেকে এক মাস ছুটি কাটিয়ে এসেছেন। তার ফেরার বিরুদ্ধে ছিলেন তারা পিতা-মাতা। কিন্তু পরিবারের আর্থিক অবস্থা বিবেচনা করেই তিনি ফিরেছেন। তার বাবা একজন কৃষক। তাদের পরিবারের সদস্য সংখ্যা ছয় জন। কেবল বাবার উপার্জনে পরিবারের ভরণপোষণ সম্ভব নয়।  মজিদুল বলেন, আমার আয় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
অন্য প্রবাসীরা জানান, সিঙ্গাপুরের স্বাস্থ্যব্যবস্থা অনেক উন্নত। সেখানে দিনে দু’বার করে তাদের তাপমাত্রা মাপা হয়। সন্দেহজনক রোগীদের আলাদা রাখা হয়। এসব কারণে তারা সিঙ্গাপুরে থাকতে আস্থা পান।
তবে সিঙ্গাপুর থেকে বাংলাদেশিদের দেশে ফেরার হার কমছে না। সিঙ্গাপুরে এক ভ্রমণ এজেন্সি পরিচালক  রউফ নওশাদ। তাদের প্রধান গ্রাহক বাংলাদেশি প্রবাসীরা। তিনি জানান, গত ১৪ দিনে তার এজেন্সিতে বুকিং বেড়েছে প্রায় ৫০ শতাংশ। কয়েকজন একদিনের নোটিশে বাংলাদেশে যেতে চাইছেন। নওশাদ বলেন, আগে কখনোই এমন হয়নি। এর আগে তারা ঘুরে ফিরে আসতে চাইতো। এখন তারা কেবল চলে যেতে চাইছে।
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর