× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, শুক্রবার , ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৭ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

৯০ বছরের আমেনার প্রশ্ন কবে পাবেন ভাতা কার্ড?

বাংলারজমিন

শিবগঞ্জ (বগুড়া) প্রতিনিধি
২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২০, বৃহস্পতিবার

আমিনা বেগম। অভাব আর দারিদ্র্যের কষাঘাতে দুর্বিষহ তার জীবন। পরিচয়পত্র অনুযায়ী বয়স ৮৩ বছর হলেও গ্রামের বয়োজ্যেষ্ঠদের দাবি- তার বর্তমান বয়স নব্বইয়েরও বেশি। বড় ছেলের নাম তারু মিয়া হওয়ায় বৃদ্ধা আমিনা গ্রামের লোকদের কাছে তারুর মা নামে পরিচিত। বহু বছর আগে স্বামী মছির উদ্দিন মারা যাবার পর মানুষের দুয়ারে দুয়ারে কাজ করে বড় করেছেন তারু ও ওয়াজেদ নামের দুই ছেলেকে। আশা ছিলো বৃদ্ধ বয়সে এই দুই সন্তান তার দায়িত্ব নিবে। বিপদে পাশে দাঁড়াবে । কিন্তু দুঃখ কষ্টে মানুষ করা তারু ও ওয়াজেদ বড় হলেও বিয়ের পর এলাকা  ছেড়েছে।
ভিটা বাড়ির কোন জায়গা জমি না থাকায় বৃদ্ধ আমেনা এক প্রতিবেশীর বাড়িতে ছোট্ট একটি ঘর তুলে মানুষের দুয়ারে সাহায্য চেয়ে বেঁচে আছেন কোন রকম। বয়সের ভারে এখন খুব একটা চলা ফেরা করতে পারেন না তিনি। বেশির ভাগ দিন গুলোতেই তিন বেলা খাবার জোটেনা তার। অনেক সময় গালে হাত দিয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে জীবণের ৯০টি বছরের লাভ-লসের হিসাব মেলাতে চোখে পানি আসে তার।
বগুড়ার শিবগঞ্জের অনন্তপুর গ্রামের ৯০ বছর বয়সী বৃদ্ধা আমিনা বেগমের সাথে দেখা করতে গেলে জানা গেলো তার দুঃখের ইতিহাস।  এই বৃদ্ধার কপালে আজ অবধি জোটেনি বাংলাদেশ সরকার প্রদত্ত বয়স্ক ভাতা কিংবা বিধবা ভাতার কার্ড। একটি ভাতা কার্ডের জন্য এলাকার মেম্বার চেয়ারম্যানদের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন একযুগেরও বেশি সময় ধরে । কিন্তু কেউ তার কষ্টের জীবনে একটি কার্ড দিয়ে সাহায্য করেনি। তারুর মা জানান, আমি আর চলতে ফিরতে পারি না। ছেলেরা অভাবের কারণে আমাকে রেখে চলে গেছে বহুদিন হলো। মানুষের দুয়ারে ঘুরে সাহায্য নিয়ে বেঁচে আছি। এখন শরীরটা অসার হয়ে আসছে । হাত পা কাঁপে। আমার কোন যায়গা জমিও নাই। বয়স্ক ভাতার কার্ড পেয়েছেন কিনা এমন প্রশ্ন করলে চোখ দিয়ে জল বেরিয়ে আসে তার। তিনি বলেন, “বাবা ! হামাক কে কার্ড করে দিবি। বছরের পর বছর ধরে চেয়ারম্যান মেম্বারদের পিছনে ঘুরছি। কেউ কার্ড করে দেয়নি। একবারতো আইডি কার্ড ও ছবিও জমা নিছলো। কিন্তু কার্ড চাইতে গেলে এলাকার মেম্বার বলছে ৭ হাজার টাকা লাগবি। হামি ভিক্ষা করে খাই বাবা টাকা কুটি পামো। গরীবের দিকি কেউ দেখে না বাবা। এসময় তিনি আক্ষেপ করে বলেন,  বয়স আরও কত হলে পাবো ভাতা কার্ড? আমিতো দুদিন পর মরেই যাবো। এব্যাপারে মোকামতলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোখলেছুর রহমান খলিফা জানান, গত এক সপ্তাহ আগে সমাজ সেবা অফিসার এই এলাকা থেকে ভাতা আবেদনকারীদের তালিকা নিয়ে গেছেন। বর্তমানে ভাতা কার্ড সংক্রান্ত সব বিষয় সমাজসেবা অফিস দেখভাল করায় এ ব্যাপারে কোন বক্তব্য দিতে পারছি না।
বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে শিবগঞ্জ উপজেলা সমাজ সেবা অফিসার সামিউল ইসলামের সাথে কথা বলতে মুঠোফোনে একাধিক বার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে ফোন বন্ধ থাকায় তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি। শিবগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার আলমগীর কবির দৈনিক মানবজমিনকে জানান, ভাতা কার্ড দেয়ার নামে যারা টাকা নিচ্ছেন তাদের বিষয়ে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে আমরা অবশ্যই ব্যবস্থা নিবো। এসময় তিনি বৃদ্ধা আমেনাকে তার বরাবর দরখাস্ত করার পরামর্শ দিয়ে বলেন, ভবিষ্যতে ভাতা কার্ডের কোনো ব্যবস্থা হলে আমি বিষয়টি দেখবো।
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর